২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
গঙ্গার ভরা যৌবন; পদ্মার ধু ধু বালুচর

এমন হলো কেন?

-

নয়া দিগন্তের বেড়া (পাবনা) সংবাদদাতা জানান, অনেক আগেই রূপ হারিয়েছে এক সময়ের খরস্রোতা পদ্মা। এখন তার ঐতিহ্যটুকুও হারাতে বসেছে। আষাঢ়-শ্রাবণ শেষেই কমতে থাকে বর্ষার পানি। ক্রমাগত কমতে কমতে পরিণত হয় ধু ধু বালুচরে। ৮৫টি শাখা-প্রশাখা নদীও এখন অস্তিত্ব সঙ্কটে।
জানা যায়, ভারতের গোমুখিতে উৎপন্ন হয়ে ভারত সীমান্ত পর্যন্ত দুই হাজার ৩৪২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে গঙ্গা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ভারত একতরফা পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। ফারাক্কার উজানে গঙ্গায় পানি থই থই করছে। আর ফারাক্কার ভাটিতে পদ্মার বুকে ধু ধু বালুচর। পানিস্বল্পতার কারণে এ দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে মরুকরণ যেন স্থায়ী।
গঙ্গা অববাহিকার মোট নিকাশি অঞ্চলের আয়তন ১০ লাখ ৮৭ হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে বাংলাদেশে গঙ্গার নিকাশি অঞ্চলের আয়তন ৪৬ হাজার ৩০০ বর্গকিলোমিটার। আর কোনো নদীর এত বিশাল সমতল বদ্বীপ নেই। এ নদীর অববাহিকায় বাস করে প্রায় ৩৩ কোটি মানুষ। ভারতের উত্তর প্রদেশের কানপুরে গঙ্গা নদীর ওপর নির্মিত হয়েছে ‘লব-কুশ ব্যারাজ’। এই বাঁধ দিয়ে ভারত প্রতিদিন ১৯ হাজার মিলিয়ন লিটার পানি সরিয়ে নিচ্ছে।
গঙ্গায় বৃহদাকার তিনটি খাল খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে ভারত। এর মধ্যে রয়েছে আপার গঙ্গা, মধ্য গঙ্গা ও নিম্ন গঙ্গা ক্যানাল প্রকল্প। এসব প্রকল্পের হাজার হাজার কিলোমিটার খাল খননের মাধ্যমে তারা গঙ্গার পানি সরিয়ে নিয়ে সেচ কার্যক্রম চালাচ্ছে। আপার গঙ্গা ক্যানাল প্রকল্পের মাধ্যমে উত্তর প্রদেশের তিন লাখ ৩৩ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে সেচ দেয়ার লক্ষ্যে ছয় হাজার কিলোমিটারের বেশি খাল কেটে পদ্মার পানি সরিয়ে নিচ্ছে। মধ্য গঙ্গা ক্যানাল প্রকল্পে মূল, শাখাসহ খননকৃত খালের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় এক হাজার ৬০০ কিলোমিটার। নিম্ন গঙ্গা ক্যানাল প্রজেক্টের জন্য ছয় হাজার কিলোমিটার খাল খনন করা হয়েছে।
সমুদ্র থেকে ৪২ ফুট উঁচুতে অবস্থিত হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্ট থেকে ভারত সীমান্ত মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরত্বে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ১৮ কিলোমিটার উজানে ফারাক্কা বাঁধ অবস্থিত। ভারতের গোমুখিতে উৎপন্ন হয়ে পদ্মা বাংলাদেশে মেঘনার মিলনস্থল পর্যন্ত দুই হাজার ৬০০ মাইলব্যাপী প্রবাহিত। এ নদীতে বাঁধ দেয়া হয়েছে প্রথমে হরিদ্বারে, সবশেষে ফারাক্কায়। মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে গঙ্গার মূল অংশ চলে আসে বাংলাদেশে ‘পদ্মা’ নামে। রাজমহল পর্বতকে অতিক্রম করে বাংলার সমতল ভূমিতে নেমে আসে। রাজমহল থেকে ৩০ কিলোমিটার আগে প্রবাহিত হয়ে গঙ্গা যায় গিরিয়ায়। তারপর বিভক্ত। একটি ধারা ভাগীরথী নামে দক্ষিণ-পূর্বে, আরেকটি ধারা পদ্মা নামে রাজশাহী, পাবনা ও ফরিদপুর জেলা হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়েছে।
গঙ্গার নিম্নস্রোতধারার নামই পদ্মা। রাজশাহী চারঘাটের প্রায় ১০ কিলোমিটার ভাটিতে আলাইপুর পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বরাঙ্ক মোহনপুর, রানীনগর ও আলাতুলি এলাকায় এ নদী সম্প্রসারিত ছিল, এখন তা চরে পরিণত হয়েছে। চারঘাট থেকে নাটোরের লালপুর পর্যন্ত ৩৩ কিলোমিটার। এর পরই ঈশ্বরদীর সাহেববাজারের পাশ দিয়ে এ নদী পাবনায় ঢোকে।
ফারাক্কা ব্যারাজের বিরূপ প্রভাবে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের পদ্মা পারের মানুষ বহুমুখী সঙ্কটে পড়েছে। পদ্মার ৮৫টি শাখা-প্রশাখা নদী মজে যাওয়ায় পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর। ১৯৭৫ সালে মুর্শিদাবাদ জেলায় ফারাক্কা ব্যারাজ চালু করা হয়। এর পর থেকেই মজে যেতে থাকে পদ্মা ও শাখা নদীগুলো।
রুগ্ণ পদ্মা। যশোর-কুষ্টিয়ার নদীগুলো পদ্মার সাথে সংযোগ হারিয়ে ফেলেছে। বড়াল, ছোট যমুনা, পুনর্ভবা, আত্রাই, ইছামতি, গুমানি, গোমতী, ভদ্রবতী, গোহালা, নন্দকুজা, গাড়াদহ, কাকন, কাকেশ্বরী, সরস্বতী, মুক্তাহার ঝবঝবিয়া, ফুলজোড় এবং রাজশাহী ও নাটোরের মহানন্দা, আত্রাই, বারনই, শিব, রানী ও ছোট যমুনাসহ ১২টি নদী রয়েছে। পদ্মার প্রধান শাখা নদীগুলোর মধ্যে রয়েছে মধুমতী, আড়িয়াল খাঁ, ভৈরব, মাথাভাঙ্গা, কুমার, কপোতাক্ষ, পশুর ও বড়াল। নদী বিশেষজ্ঞরা বলেন, পানি প্রবাহের মাত্রা ৪০ হাজার কিউসেক হলে নদীতে আর পলি জমতে পারে না। তলদেশও ভরাট হয় না। কিন্তু পদ্মার প্রবাহ অনেক কম বলে পদ্মার বুকে চর জেগে উঠছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল