২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ক্ষমতার দাপটে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সবাই

আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগ করুন

-

আইনের প্রয়োগে বৈষম্য বর্তমান সরকারের শাসন পরিচালনায় একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। নাগরিকদের এক অংশের পান থেকে চুন খসলে তাদের গুরুদণ্ড পেতে হয়। এমনকি অপরাধ না করেও শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয় অতিরিক্ত শক্তি। এরা বিরোধী রাজনৈতিক দলমতের মানুষ। তবে সাধারণ মানুষকেও অনেক সময় একই ভাগ্যবরণ করতে হচ্ছে। আরেক গোষ্ঠী রয়েছেন; যাদের জন্য আইনের প্রয়োগ ঢিলেঢালা। অনেক সময় তাদের অপরাধ বিচারযোগ্য গণ্য করা হয় না। পুলিশ কোনো মামলা করে না কিংবা তাদের বিরুদ্ধে মামলা নেয় না। এই সৌভাগ্যবান গোষ্ঠী বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও তাদের আশীর্বাদপুষ্ট লোকজন। এ কারণে তাদের ক্ষমতার দাপটের শিকার হচ্ছেন অনেকে। পুলিশ সদস্যরাও কোপানলে পড়ে উপযুক্ত বিচার পাচ্ছেন না।
রাজধানীর গুলশান শপিং সেন্টারে স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতার বেপরোয়া গুলিতে দু’জন আহত হয়েছেন। ঘটনার সূত্রপাত বিকাশে টাকা পাঠিয়ে তা না দিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টায়। ওমান প্রবাসী আরিফ হোসেন একটি দোকানের তিনটি নম্বর থেকে ৭৫ হাজার টাকা বিকাশ করান। পরে টাকা না থাকার অজুহাত দেখান। টাকা না দিয়ে চলে যেতে চাইলে দোকানিরা তাকে আটক করেন। আত্মীয়তার সূত্রে তিনি ডেকে আনেন ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সহসভাপতি আবদুল ওয়াহিদকে। তিনি জোর করে আরিফকে ছিনিয়ে নিয়ে যেতে চাইলে ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে বাধা দেন। ওয়াহিদ এক পর্যায়ে তার কাছে থাকা পিস্তল থেকে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়েন। এতে জটলার মধ্যে থাকা এক কারচালক ও আরেক ভ্যানচালক গুলিবিদ্ধ হন।
প্রকাশ্যে সবাইকে হুমকি ধামকি দেন ওয়াহিদ। তিনি জানান, রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশের কর্তাব্যক্তিরা তার সাথে রয়েছেন। চাইলে সবাইকে শায়েস্তা করতে পারেন। ক্ষমতার এ দাপট কিছু দিন আগে গুলশানে আরেকটি ঘটনায় দেখা গেছে। ওই ঘটনায় ক্ষমতাসীন দলের এক এমপিপুত্র মারধর করেছেন পুলিশকে। রাতে আরেক বান্ধবীসহ বেপরোয়া গাড়ি চড়িয়ে দেন ট্রাফিক পুলিশের গাড়ির ওপর। পুলিশ তার গাড়িটি আটকের চেষ্টা করলে তিনিও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতার মতো হুমকি দেন। ২০১৫ সালে রাজধানীর ইস্কাটনে আরেক নারী এমপির ছেলে প্রকাশ্যে গুলি চালালে দু’জন প্রাণ হারান। ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও তাদের স্বজনদের এমন বেপরোয়া অস্ত্র চালনার বহু ঘটনা এ সরকারের সময় হয়েছে।
রোববার গুলশানের গুলির ঘটনায় দোকানিসহ অন্য কয়েকজনকে তাৎক্ষণিক ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। অথচ যিনি অপরাধ করেছেন তাকে বিচারের আওতায় আনা ছিল জরুরি। দেখা যাচ্ছে, যার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তিনি ঝামেলার মধ্যে পড়ে যাচ্ছেন। অন্য দিকে এমপিপুত্র পুলিশের ওপর চড়াও হলেও তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। পুলিশ এটিকে ভুল বোঝাবুঝি বলে জানায়। পুলিশকে আক্রমণ চালিয়ে মারধর করা একটি গুরুতর অপরাধ। সুতরাং তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা হবে। হবে উপযুক্ত বিচার। কিন্তু এমপিপুত্র হওয়ায় তেমনটি হয়নি। এভাবে আইন প্রয়োগের বৈষম্য দেশে উৎকটভাবে বাড়ছে।
ক্ষমতার দাপটে সাধারণ মানুষের প্রাণ যাচ্ছে, হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এ নিয়ে ক্ষমতাসীনদের মধ্যেও দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত হচ্ছে। তারই প্রতিফলন দেখা যায় গত বছরের মানবাধিকার প্রতিবেদনে। দেশীয় মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিস কেন্দ্রের (আসক) হিসেবে, বিদায়ী বছরে সারা দেশে ৪৭৯টি রাজনৈতিক সহিসংতার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় ৭০ জন নিহত ও ছয় হাজার ৯১৪ জন আহত হন। সহিংসতায় কিছু ক্ষেত্রে বিরোধীরা শিকার হলেও বেশির ভাগ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে ক্ষমতাসীনদের উপদলীয় কোন্দলে।
দেশে বর্তমানে যে সঙ্কট চলছে তা শুধু আইন প্রয়োগের বৈষম্যে। সরকার আইন নিজস্ব গতিতে চলবে বললেও কার্যত নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী প্রয়োগ করছে। এতে বিরোধী দল ও সাধারণ মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও একসময় ক্ষমতাসীনদেরই এর মাশুল গুনতে হবে, তা নিশ্চিত করে বলা যায়। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার যে প্রতিশ্রুতি সরকারের তরফ থেকে দেয়া হয় সে ব্যাপারে কথা কাজে মিল থাকবে এ প্রত্যাশা সবার।


আরো সংবাদ



premium cement