স্থানীয়দের নিরাপত্তাও বিঘ্নিত
- ১০ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০৫
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির ঘিরে খুন, অপহরণ ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি লেগেই আছে। নিয়মিত বিরতিতে সেখানে রোহিঙ্গারা খুন হচ্ছেন। তবে এসব ঘটনার সুরাহা সময় মতো হচ্ছে না। সেখানে স্থানীয় অধিবাসীরা অপহরণের শিকার হওয়ায় ওই এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। খুনের জন্য রোহিঙ্গাদের বিবদমান পক্ষগুলোকে দায়ী করা হয়। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের আওতায় না আনতে পারলে এ ধরনের দোষারোপ পরিস্থিতির উন্নতিতে কোনো কাজে আসবে না। আন্দাজ অনুমান ও প্রচারণার ওপর ভিত্তি করে পদক্ষেপ নেয়া হলে সেখানকার পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হবে।
খবরে প্রকাশ, গত শনিবার রাতে উখিয়ার দু’টি আশ্রয়শিবিরে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দু’জন রোহিঙ্গা মাঝি খুন হয়েছেন। প্রথমজন জামতলী আশ্রয়শিবিরের ১-৪ ব্লকের মাঝি রশিদ আহমদ। রাত ৮টায় ঘরে ঢুকে একদল মুখোশধারী তাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। দ্বিতীয়জন পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী আশ্রয়শিবিরের উপমাঝি মোহাম্মদ সেলিম। রাত সাড়ে ৩টায় তাকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
পত্রিকার খবর মতে, গত বছরের জুন থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত রোহিঙ্গা শিবিরে ২৭টি হত্যার ঘটনা নিয়ে মামলা হয়েছে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মহিবুল্লাহকে খুন করা হয়। এসব খুনোখুনির পেছনে আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার সম্পর্ক রয়েছে বলে জানা যায়। তবে আরসাসহ কয়েকটি সংগঠনের নাম ঘুরেফিরে আসছে। খেয়াল রাখা দরকার, মিয়ানমার ‘উগ্র আরসার’ উদাহরণ টেনে রাখাইন থেকে রোহিঙ্গা উচ্ছেদের নির্মম অভিযানকে যৌক্তিক করতে চায়। প্রকৃতপক্ষে আরসা আদৌ রাখাইনে নাশকতামূলক কোনো কার্যক্রম চালিয়েছে কি না তা পরিষ্কার নয়। আরসার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের যেসব অভিযোগ ঢালাওভাবে মিয়ামনার আরোপ করে তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে সংঘটিত আইনশৃঙ্খলাজনিত অবনতির জন্যও প্রধানত আরসাকে দায়ী করা হচ্ছে। কিন্তু এর পক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত নেই। রোহিঙ্গা নেতা মহিবুল্লাহসহ সেখানে সংঘটিত কয়েক ডজন খুনের বিচার প্রক্রিয়া চলছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। রোহিঙ্গা শিবিরে খুনোখুনির জন্য মিয়ানমারের কোনো হাত রয়েছে কি না বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে যাচাই করা দরকার। আশ্রয়শিবিরগুলোতে যেকোনো ধরনের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে হবে। অন্যথায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে মিয়ানমার উদ্ভূত পরিস্থিতির সুযোগ নেবে।
সংবাদমাধ্যম খবর দিচ্ছে, টেকনাফের নাফ নদীসংলগ্ন এলাকায় গত দুই মাসে ২৫ জন স্থানীয় লোক অপহৃত হয়েছেন। তবে ভুক্তভোগীর স্বজনরা এ জন্য পারতপক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে যান না। সচরাচর মুক্তিপণের বিনিময়ে পরিবারের সদস্যদের উদ্ধার করেন। গত সপ্তাহে টেকনাফের বাহারছড়ায় মাছ ধরতে গিয়ে আটজন অপহৃত হন। চার দিন পর মুক্তিপণের বিনিময়ে তারা মুক্তি পান। এখনো সেখানে স্থানীয় চার ব্যক্তি অপহৃত রয়েছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। মাছ ধরা ও ফসলের ক্ষেতে কাজ করা এবং নিজেদের সম্পদ রক্ষায় মানুষ বাড়ি থেকে বের হওয়া নিরাপদ ভাবছেন না। এ ধরনের গুরুতর আইনশৃঙ্খলাজনিত অবনতির পেছনে কারা দায়ী সে ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানা যাচ্ছে না। এসব এলাকায় আগে এ ধরনের অপরাধ দেখা যায়নি। এ জন্য রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী দায়ী, না অন্য কোনো অপরাধী গোষ্ঠী সুযোগ নিচ্ছে; খতিয়ে দেখা দরকার।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, ১১ লাখ রোহিঙ্গা উখিয়া টেকনাফে আশ্রয়শিবিরে বসবাস করছেন। অভ্যন্তরীণ বিবাদে নিজেরাই নিজেদের রক্ত ঝরাচ্ছে। তাদের অবস্থানের সুযোগে অন্যান্য অপরাধও সেখানে ঘটছে। এ দিকে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব অপরাধ রুখতে যথেষ্ট সামর্থ্য দেখাতে পারছে না। এ অবস্থা দীর্ঘকাল চলতে পারে না। সরকারের উচিত ওই অঞ্চলের নিরাপত্তা নিয়ে বিশেষভাবে মনোযোগ দেয়া। অপরাধীদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করা। যদি কোনো স্বার্থান্বেষী মহল এর পেছনে তৎপর থাকে তাদের নিষ্ক্রিয় করতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা