নিয়ন্ত্রণ-সমন্বয় কিছুই নেই
- ৩১ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০৫
গণমাধ্যমের খবর, প্রবাসী আয় কমে যাচ্ছে। এমন সময় কমছে যখন প্রবাসে বাড়তি হারে শ্রমিক পাঠানো হচ্ছে। এর বহুবিধ কারণ থাকলেও প্রধান ও স্থায়ী কারণটি হচ্ছে- অদক্ষ শ্রমিক পাঠানো। কিছু পরিসংখ্যান দিলে বিষয়টি সহজে বোঝা যাবে। পূর্ব এশিয়ায় দ্বীপরাষ্ট্র ফিলিপাইন জনসংখ্যায় বাংলাদেশের অর্ধেকের মতো। প্রবাসী আয় দেশটির অর্থনীতির প্রধান উৎসগুলোর একটি; বিশ্বে চতুর্থ। অন্যদিকে বাংলাদেশের একই সংখ্যক শ্রমিক প্রবাসে কাজ করেন। তবে আয়ের দিক থেকে বিশ্বে অষ্টম স্থানে। ফিলিপাইন প্রতি বছর এ খাতে বাংলাদেশের দ্বিগুণের বেশি আয় করে। তালিকার প্রথম দিকে থাকা ভারত, চীন ও মেক্সিকো প্রবাসী শ্রমিকের সংখ্যার তুলনায় বাংলাদেশের কয়েকগুণ বেশি আয় করে। ১৯৭৬ সালে প্রথম বিদেশে শ্রমিক পাঠানো শুরু করলেও আমরা এখনো দক্ষ ও চাহিদাসম্পন্ন কর্মী বিদেশে পাঠাতে পারছি না। ফলে আমাদের প্রবাসে শ্রমিক প্রেরণের বিপরীতে আয় কমে যাচ্ছে।
‘আন্তর্জাতিক শ্রম অভিবাসনের গতিপ্রকৃতি ২০২২ : অর্জন ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে প্রবাসী আয় নিয়ে নেতিবাচক তথ্য-উপাত্ত মিলছে। এটি করেছে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (রামরু)। প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত ও চলতি বছরে আমাদের বিদেশে শ্রমিক রফতানি বিপুলভাবে বেড়েছে। ২০২১ সালে ছয় লাখ ১৭ হাজার ২০৯ জন কর্মী কাজের উদ্দেশে বিদেশে গেছেন। চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত গেছেন আরো ১০ লাখ ২৯ হাজার ৫৪ জন। চলতি ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রবাহ ঠিক থাকলে এ বছর অভিবাসন বাড়বে ৮১ দশমিক ৮৮ শতাংশ। তা সত্ত্বেও এ দুই বছরে প্রবাসী আয় রয়েছে কমার ধারায়। ২০২১ সালে দেশে এ খাতে এসেছে ২২ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। এ বছরের নভেম্বর পর্যন্ত এসেছে ১৯ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার। এ ধারা বছরের শেষ দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকলে গত বছরের তুলনায় প্রবাসী আয় কমবে ৩ দশমিক ১৭ শতাংশ।
রামরুর প্রতিবেদন বলছে, বিদেশে শ্রমিক পাঠানো বাড়ছে; কিন্তু তাদের মধ্যে অদক্ষ শ্রমিকের সংখ্যাও বাড়ছে। চলতি বছরের ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রেরিত শ্রমিকের ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ অদক্ষ। সংখ্যাটি গত বছরের তুলনায় ৩ শতাংশ বেশি। ওই প্রতিবেদনে উল্লেøখ করা হয়েছে, বিশেষ কিছু জেলা থেকে বর্ধিত হারে শ্রমিক বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। আবার নির্দিষ্ট কিছু দেশে তারা যাচ্ছেন। এসব দেশে শ্রমের উপযুক্ত মজুরি ও আইনের সঠিক আশ্রয় পাওয়ার নিশ্চয়তা সেভাবে নেই।
লক্ষণীয়, ৮০ শতাংশ অভিবাসন ঘটছে ব্যক্তি-উদ্যোগে। অর্থাৎ পরিবার ও এলাকাকেন্দ্রিক বিচ্ছিন্নভাবে শ্রমিক পাঠানোর ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া বিদেশে শ্রমিক পাঠাতে রিক্রুটিং এজেন্সির একটি সিন্ডিকেট সব সময় দাঁড়িয়ে যায়। সাথে যুক্ত হয় দালালচক্র। সব মিলিয়ে প্রবাসে শ্রমিক পাঠাতে সরকারি সুচারু উদ্যোগ নেই; বরং রিক্রুটিং এজেন্সি ও দালালচক্র সরকারি আশ্রয়-প্রশ্রয় পাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে তারা দলীয় পরিচয়কে অবৈধ কার্যক্রম চালানোর হাতিয়ার বানাচ্ছে। এর ফলে অনেকের অবৈধ ব্যবসায় জমজমাট হলেও শ্রমিকরা সেভাবে লাভবান হচ্ছেন না। উল্টো প্রতারিত হচ্ছেন অনেকে। অথচ প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো আয়ের সুফল ভোগ করে সরকার। কিন্তু তাদের অধিকার ও স্বার্থরক্ষা এবং এ খাতের উন্নয়নে টেকসই উদ্যোগ নেই। তাই এ খাতে প্রথমত শ্রমের বৈশ্বিক চাহিদা শনাক্ত করা দরকার। সে অনুযায়ী জনশক্তিকে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। বাস্তবে এগুলো সরকারি পর্যায় থেকে খুব সামান্য করা হয়। এখনো প্রায় ৮০ শতাংশ শ্রমিক বিদেশে যাচ্ছেন কোনো দক্ষতা কিংবা কাজ না জেনেই। ফলে তারা অনেক ক্ষেত্রে গাধার খাটুনি খাটেন বটে; তবে উপযুক্ত মজুরি পান না। অনেকে বিদেশে গিয়ে খরচের টাকা উঠাতে জীবন ব্যয় করছেন। বিদেশে অবস্থিত দূতাবাসগুলো অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার ও স্বার্থরক্ষায় সেভাবে তৎপর নয়। ফলে প্রবাসী শ্রমিক রফতানি করে আমরা উপযুক্ত সুফল পাচ্ছি না, এটি নিশ্চিত করে বলা যায়। বিষয়টি আন্তরিকতার সাথে নিলে হয়রানি বন্ধের পাশাপাশি একই সংখ্যক শ্রমিক পাঠিয়ে অন্ততপক্ষে ফিলিপাইনের মতো আয় আনা সম্ভব।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা