দেখার কেউ নেই!
- ২৮ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০৫
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার জমির বুক চিরে ছুটছে ট্রাক্টরের পর ট্রাক্টর। লক্ষ্য, ফসলি জমি থেকে কাটা মাটি ইটভাটায় নিয়ে আসা। সামান্য দূরেই চলছে বিস্তীর্ণ ফসলি জমির মাঝখান থেকে অত্যাধুনিক ‘ভেকু’ মেশিন দিয়ে জমির মাটি কাটার তাণ্ডব। সে মাটি সংগ্রহে ব্যস্ত ইটভাটার শ্রমিক। যে জমিতে ধান বোনা হতো, সে জমিতে বিশাল বিশাল গর্ত। এভাবেই ইটভাটার পেটে চলে যাচ্ছে মুরাদনগরের বিপুল পরিমাণ ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি। ফলে জমিগুলো হারাচ্ছে উর্বরতা; বিলুপ্ত হচ্ছে চিরায়ত জমিতে ফসল ফলানোর কাজ। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দায় চাপাচ্ছেন একে অপরের ওপর। অবশ্য, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, ‘ফসলে জমির মাটি এভাবে বিক্রি করে দিলে জমিতে ফসল উৎপাদনে নেমে আসবে বিপর্যয়।’ নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদনে এটা জানা যায়।
‘পতিত জমি, খাল, বিল, নদ-নদী, হাওর-বাঁওড় বা চরাঞ্চল থেকে মাটি কেটে নেয়া যাবে না ইট তৈরির জন্য।’ ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ এর ৫ নম্বর ধারায় এর উল্লেখ থাকলেও তার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। দিনের পর দিন পরিবেশ অধিদফতরকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এই উপজেলায় গড়ে ওঠা ৪৬টি ইটভাটায় এভাবেই ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে সরবরাহ করা হচ্ছে। বিলের কৃষিজমি, গোচারণ ভূমি, জলাশয় ও গোমতী নদীর পাড়ের কয়েকটি এলাকার ফসলি জমির ওপর ভেকু দিয়ে যেন মহাতাণ্ডব চালানো হচ্ছে। আইন লঙ্ঘনকারী ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ার ফসলি জমি ধ্বংসের মহোৎসব চলছে।
জানা যায়, প্রতি বছর একেকটি ভাটায় প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লাখ ইট উৎপাদন করা হয়। এই উপজেলায় ৪৬টি ইটভাটার মাটি কাটার জন্য ফসলি জমির মাঠে কাজ করছে ২৭টি খননযন্ত্র ও ৩২২টি ট্রাক্টর। প্রতিদিনই ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাটিভর্তি ট্রাক্টরগুলো জমির ওপর দিয়ে চলাচল করছে। ছুটে চলা যানের কারণে ধুলাবালিতে ফসল বিনষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কিছুই বলতে পারছেন না নিরীহ কৃষকরা। কেউ কেউ কর্তৃপক্ষকে লিখিত অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেন না। এ বিষয়ে যাত্রাপুর ইউনিয়নের একজন কৃষক বলেন, স্থানীয় বিলের তিন ফসলি জমির মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ব্রিকসে। সে মাটি ট্রাক্টর দিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য চেয়ারম্যান ফসলি জমির ওপর দিয়ে রাস্তা তৈরি করে দিয়েছেন। একজন কৃষকের জমি থেকে মাটি ক্রয় করতে পারলেই আর পায় কে? পাশের জমির মালিককেও তখন বাধ্য হয়ে মাটি বিক্রি করে দিতে হয়। এভাবেই পুরো বিলের চিত্র বদলে গিয়ে খানাখন্দে রূপ নিয়েছে। এ বিষয়ে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান বলেন, কৃষকদের অনুরোধে ‘কাবিখা’র আওতায় রাস্তাটি তৈরি করেছি। কৃষকরা আমাকে বলেছিলেন, ‘জমি থেকে ফসল আনতে কষ্ট হয়।’ এখন যদি কেউ ট্রাক্টর দিয়ে মাটি বহন করার কাজে রাস্তা ব্যবহার করেন, আমার কী করার আছে? যাত্রাপুর বিলে গড়ে তোলা চয়নিকা ব্রিকসের মালিক বলেন, ‘যেখান থেকে আমরা মাটি আনছি, সে জমি আমাদের, আর বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েই করছি। এসি (ল্যান্ড) স্যারকে জানিয়েই করা হচ্ছে।’ এ বিষয়ে মুরাদনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বলেন, ‘বিষয়টি আমাকে জানানো হয়নি। এর আগে অভিযোগ পেয়ে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে আগেই বলা হয়েছে। থানাকে জানান।’ আর থানার ওসি বলেন, মনে হয় না এটা আমাদের কাজ। যদি কোনো বিষয়ে আমাদের ডাকা হয়, তখন ব্যবস্থা নিতে পারি।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, ‘কৃষকের নিজের জমির মাটি কেটে শ্রেণী পরিবর্তন করতে পারেন, তবে এ ক্ষেত্রে আমাদের অনুমতি নিতে হয়। বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করে অচিরেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা