২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
রাজপথে লাঞ্ছিত প্রবীণ বিশিষ্টজন

এটি গ্রহণযোগ্য নয়

-

দলের কর্মসূচির পক্ষে প্রচারপত্র বিতরণ করতে গিয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন দেশের একজন প্রবীণ প্রকৌশলী ও রাজনৈতিক দলের নেতা ম. ইনামুল হক। গত শনিবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ ঘটনা ঘটে। তাকে শারীরিকভাবে আঘাত ও অকথ্য ভাষায় গালাগালি করা হয়।
ম. ইনামুল হকের পরিচয় কী? তিনি সর্বজন বিপ্লবী দল নামের একটি ক্ষুদ্র রাজনৈতিক দলের আহ্বায়ক। মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় হানাদার বাহিনীর হাতে নিপীড়িত পরিবারের সন্তান। ছিলেন নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক। হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদফতর এবং পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থায়ও মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
তার অপরাধ কী? নিজ দলের ঘোষিত কর্মসূচির পক্ষে জনমত গড়ার লক্ষ্যে পথচারী ও সাধারণ মানুষের কাছে প্রচারপত্র বিলি করছিলেন। তার দল আজ ২৭ ডিসেম্বর অর্ধদিবস হরতালের ডাক দিয়েছে। বর্তমান সরকারের বিদায়, ভোটকেন্দ্র দখলমুক্ত নির্বাচন ও জাতীয় সরকার- এ তিন দফা দাবিতে হরতাল ডেকেছে তার দল। সেই কর্মসূচি সফল করতে রাজপথে নেমেছিলেন তিনি। হামলার সময় একটি মিডিয়াকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন তিনি। বলছিলেন, দেশে ‘নির্বাচন ব্যবস্থাটা হয়ে গেছে ভোটকেন্দ্র দখল। কেউ স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করবে- এটি আইন করে বাধা দেয়া হচ্ছে।’
কত লোক ছিল তার কর্মসূচিতে? আহ্বায়ক নিজে এবং তার সাথে দলের আরো তিন নেতা বা কর্মী। কিন্তু সামান্য এই কর্মসূচিও সহ্য হয়নি ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের। তারা একজন মুক্তিযোদ্ধা, একজন বিশিষ্ট প্রবীণ প্রকৌশলী, একজন রাজনৈতিক নেতাকে লাঞ্ছিত করেছেন।
সেই লাঞ্ছনাকারীর পরিচয় জানা গেছে। তিনি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাজিপুর ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি বানি আমিন। তিনি খুনের মামলায় বেকসুর খালাস পাওয়া একজন ব্যক্তি।
ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা কি? গত ১৫ বছর ধরে দেশে যে অসহিষ্ণুতার চর্চা চলে আসছে এ ঘটনা তারই ধারাবাহিকতা বললে বাড়িয়ে বলা হবে না। এর আগেও বহুবার এ ধরনের ঘটনা শুধু নয়, নিছক সত্য কথা বলার অপরাধে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা পর্যন্ত দেখেছে জাতি। বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার হত্যাকাণ্ড এখনো দগদগে স্মৃতি হয়ে আছে মানুষের মনে। এ অসহিষ্ণুতা জাতিকে কোথায় নিয়ে যাবে আমরা জানি না, তবে ক্ষমতার রাশ আরো কষে টেনে রাখতে এটিই ক্ষমতাসীনদের একমাত্র হাতিয়ার বলে মনে হচ্ছে।
প্রকৌশলী ইনামুল হকের ওপর হামলাকারীকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন অধিকারকর্মীরা। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, এটি বাংলাদেশের বর্তমান অসহিষ্ণু রাজনীতির চিত্র। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, সমালোচনার জন্য হামলার ঘটনা দেশে এখন স্বাভাবিক হয়ে গেছে। যারা মত প্রকাশে বাধা দেয়, তারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আইনের ঊর্ধ্বে থেকে যায়। আর যারা মত প্রকাশ করবে, তারা হামলার শিকার হওয়ার সাথে অনেক ক্ষেত্রে ফৌজদারি মামলারও শিকার হবেন, এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
সুতরাং, বর্তমান সরকারের কাছে বিচার চাওয়া আর অরণ্যে রোদন এক কথা। প্রকৌশলী ইনামুল হকের বক্তব্যেও সেটি স্পষ্ট। ওই ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেবেন না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মামলা করে কী হবে?’
গুণীজন অনেক আগে বলে গেছেন, বাকস্বাধীনতা না থাকলে মানুষের জীবন মানবিক থাকে না। আসলে আমাদের দেশে এখন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় এখানে শাসকদের ছাড়া আর কারো কথা বলার অধিকার স্বীকৃত নয়।
সমস্যা হলো, মানুষ চিৎকার করার সুযোগ না পেলে মরিয়া হয়ে ওঠে। মরিয়া হয়ে ওঠা মানুষের কোনো বিচারবোধ থাকে না। সেটি বিপজ্জনক। আমাদের ক্ষমতাসীনরা সেই বিপদ আঁচ করতে পারছেন বলে মনে হচ্ছে না।


আরো সংবাদ



premium cement
‘নানা গুজবে’ সেন্টমার্টিনে বিধিনিষেধ বুটেক্স শিক্ষার্থীদের ওপর পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের হামলা না’গঞ্জের পপি হত্যায় স্বামীর মৃত্যুদণ্ড বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগর ও জেলা কমিটি গঠিত চট্টগ্রামে অগ্নি দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে শতাধিক মার্কেট যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বৈষম্যের শিকার পল্লবী ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ মাহবুব কুবির সাথে ইবনে সিনা ট্রাস্টের চুক্তি, ২৫ শাখায় মিলবে সেবা এলাকাবাসীকে চাঁদাবাজি থেকে বিরত থাকতে কায়কোবাদের খোলা চিঠি ধলেশ্বরী নদীর মোল্লারহাট ফেরিঘাট অবৈধ দখলদারের নিয়ন্ত্রণে মোহন মিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী আজ ট্রাস্ট ফান্ড বৃত্তি পেলেন ঢাবির ১৫ শিক্ষার্থী

সকল