গভীর নলকূপ স্থাপন করতে হবে
- ২৭ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০৫
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ; কিন্তু এ দেশেও উপকূলীয় এলাকায় খাবার বা সুপেয় পানির সঙ্কট চলছে কয়েক দশক ধরে। পানির অপর নাম জীবন হলেও দেশের বিস্তীর্ণ উপকূলীয় জনপদে বর্তমানে খাবার পানির সঙ্কট দিন দিন তীব্র হচ্ছে। এর প্রধান কারণ পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়া। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও সাগরে দূষণ বেড়ে যাওয়ায় আমাদের উপকূলীয় জনপদে পরিবেশের এই বিপর্যয়।
খাবার পানির সঙ্কট কেমন তা সহজে অনুমান করা যায় একটি সহযোগী দৈনিকের প্রতিবেদন থেকে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রার বেশির ভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গভীর নলকূপ কিংবা সুপেয় পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। এ কারণে বিদ্যালয়ের শিশুদের পানযোগ্য পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এমনও বিদ্যালয় আছে, যেখানে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থীর তৃষ্ণা মেটাতে মাত্র দুই কলস পুকুরের পানি পাওয়া যায়। সেই পানিতে ফিটকিরি মিশিয়ে পান করতে হয়।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের সূত্রমতে, সংশ্লিষ্ট উপজেলায় মোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৪২টি। এর মধ্যে ৪১টিতে গভীর নলকূপ নেই। ১৩টির নলকূপ দীর্ঘ দিন ধরে অকেজো। আর ৪০টিতে নলকূপ থাকলেও তাতে লবণাক্ততা বেশি। ৩৫টি বিদ্যালয়ে স্বল্প ধারণক্ষমতার ট্যাংকে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা হলেও চাহিদা পূরণ হয় না। এসব বিদ্যালয়ে ২২ হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে।
সুপেয় পানির সংস্থানে এ এলাকার কয়েকটি বিদ্যালয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পানির ট্যাংকে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা হলেও তাতে বর্ষাকাল শেষে পরবর্তী এক মাসের জন্য পানির জোগান থাকে। বাকি সময় পুকুরের পানি ফিটকিরি দিয়ে বিশুদ্ধ করে শিশুদের পানের ব্যবস্থা করা হয়। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, কয়রার ১৫টির মতো বিদ্যালয়ের ছাদে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য ট্যাংক স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কিছু বিদ্যালয়ে নলকূপের প্ল্যাটফর্ম থাকলেও নলকূপ নেই। ফলে বিদ্যালয় চলাকালে এসব বিদ্যালয়ের প্রতিদিন অনেক দূরের পুকুর থেকে কলসে করে পানি এনে, তা ফিটকিরি দিয়ে বিশুদ্ধ করে শিশুদের খাওয়াতে হয়। কলসে করে পানি আনা কষ্টসাধ্য ও তাতে সামান্যই পানি আনা যায়। এত অল্প পানিতে প্রয়োজন পূরণ হয় না। ফলে শিক্ষকসহ শিশু শিক্ষার্থীদের পিপাসায় কষ্ট পেতে হয়।
ওই উপজেলায় শিক্ষক-শিশু শিক্ষার্থীদের অবর্ণনীয় কষ্টের বিষয়টি ফুটে উঠেছে সংশ্লিষ্ট এলাকার শিক্ষা কর্মকর্তার বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘বেশির ভাগ স্কুলের গভীর নলকূপ নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। অনেক জায়গায় আবার নেই। কিছু শিক্ষার্থী বাড়ি থেকে বোতলে করে পানি নিয়ে আসে।’
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, উপকূলীয় অঞ্চলের পানিতে লবণের সহনীয় মাত্রা প্রতি লিটারে এক হাজার মিলিগ্রাম। তবে কয়রার কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নলকূপের পানিতে প্রতি লিটারে ছয়-সাত হাজার মিলিগ্রাম পর্যন্ত লবণের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। কিছু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নলকূপ থাকলেও লোনাপানি ওঠে।
সুপেয় পানির সঙ্কট মানেই হলো জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় রকমের হুমকি। সবার জানা, খাবার উপযোগী পানি পান না করলে পানিবাহিত অনেক রোগে মানুষ আক্রান্ত হয়। তাই উপকূলের মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে হবে।
আমরা মনে করি, উপকূলীয় জনপদে সুপেয় পানি সমস্যা সমাধানে সরকারি স্কুল ও সব স্থাপনায় নতুন নলকূপ স্থাপন করা প্রয়োজন। এ ছাড়া যেসব বিদ্যালয়ে বহুতল ভবন আছে, সেগুলোতে ওয়াশ ব্লকের মাধ্যমে পানির ব্যবস্থা করা। সরকারকে এ জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দিতে হবে। যাতে পর্যায়ক্রমে সব বিদ্যালয়ে নলকূপ, পানির ট্যাংক স্থাপন করে পানির সঙ্কট দূর করা সম্ভব হয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা