২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
অপরিকল্পিত নগরায়ন

শীতেও উষ্ণ ঢাকা

-

বাংলা পৌষ-মাঘ এই দুই মাস শীতকাল। এবার পৌষের শুরু থেকে উত্তরের জেলাগুলোতে শীত জেঁকে বসেছে। গ্রামীণ জনপদে ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীত এবং উত্তরের হিমেল হাওয়ায় মানুষ কাহিল হয়ে পড়েছে। অথচ এ অবস্থাতেও ঢাকার আবহাওয়া উষ্ণ। গত বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ঢাকায় একই দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গ্রামাঞ্চলের সাথে ঢাকার দিনের তাপমাত্রার পার্থক্য প্রায় ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতেও রাজধানীতে শীত যেন কোথায় লুকিয়ে আছে। ঢাকায় যখন শীত উধাও; তখন উত্তরাঞ্চলসহ গ্রামাঞ্চলে কাঁপন ধরিয়েছে শীত। উদ্বেগজনক হলো, ঢাকায় একেক এলাকায় একেক রকমের তাপমাত্রা। গত ৩০ বছরে ঢাকার আবহাওয়ার গড় তাপমাত্রার রেকর্ড বলছে, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২-১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু গত ৬ বছরে ঢাকার গড় তাপমাত্রা কোনোভাবে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামেনি। ব্যতিক্রম শুধু ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি। ওই দিন রাজধানীর তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়াবিদ ও পরিবেশবিদরা বলছেন, গত দুই যুগে ঢাকার সবুজ এলাকা ও জলাভূমি কমে গিয়ে বেশির ভাগ এলাকা কংক্রিটে ঢেকে গেছে। সেখানে দিনের বেলা সূর্যের তাপ আসার পর তা রাতেও জমে থাকছে। ফলে রাতেও তাপমাত্রা খুব বেশি কমছে না। আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যমতে, গত ১৬ বছরে ঢাকায় গড়ে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেড়েছে। গত ১০০ বছরে দেশের তাপমাত্রা দশমিক ৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বাড়লেও রাজধানী শহরে বেড়েছে ২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। এর মধ্যে রাজধানীর বাতাসে দূষিত বস্তুকণার পরিমাণ এত বেড়েছে যে, বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।
প্রকৃতি ধ্বংস করে নগরায়ন এবং প্রকৃতির সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ ভবন তৈরির কারণে তাপমাত্রার এ পার্থক্য সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া ভয়াবহ দূষণ, বিপুল যান চলাচল ও সুউচ্চ ভবনের কারণে ঢাকায় শীত তেমন অনুভূত হয় না।
ঢাকা শহরের জলবায়ু ও আবহাওয়া নিয়ে করা বিশ্বব্যাংকের গত বছরের এক গবেষণায় দেখা যায়, রাজধানীতে দিন-রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য দ্রুত কমে আসছে। বিশেষ করে শীতকালে এ পার্থক্য বেশি অনুভূত হচ্ছে। ওই গবেষণায় দেখা গেছে, সামগ্রিকভাবে ঢাকার গড় তাপমাত্রা দেশের অন্য যে কোনো গ্রামীণ এলাকার চেয়ে পৌনে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতকাল ধরা হয়। এ সময়ে ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২-১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকার কথা। শীতে কোনো এলাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে সেখানে শৈত্যপ্রবাহ হচ্ছে বলে বলা হয়। দেশের বেশির ভাগ এলাকায় শীতকালে ছয় থেকে ১০টি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য, ঢাকায় গত ছয় বছরে শৈত্যপ্রবাহ হয়েছে মাত্র একবার। শীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫-১৮ ডিগ্রি থাকছে। আর আশপাশ এলাকা থেকে মূল ঢাকায় তাপমাত্রা থাকছে তিন থেকে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
ঢাকায় বায়ুমণ্ডলের একটি স্তর তৈরি করে রেখেছে দূষণ। ধুলাবালি ও ধোঁয়ার সাথে কুয়াশা মিলিত হয়ে একটি স্তর তৈরি হয়েছে, যা ভেদ করে সূর্যের আলো যতটুকু নিচে আসা দরকার ততটুকু আসে না। ফলে তাপমাত্রা বেশি থাকলেও আলো পাওয়া যায় না। এ ছাড়া ঢাকা শহরে সবুজ এলাকা ও জলাভূমি দ্রুত কমছে। পাশাপাশি নীতিমালা না মেনে কাচ ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি ভবন নির্মাণ হওয়ায় ঢাকা উষ্ণ হয়ে উঠেছে।
এ থেকে কিছুটা পরিত্রাণ পেতে ঢাকার ভবনগুলোর ছাদে গাছ লাগানো, শহরে সবুজ এলাকা বাড়াতে বৃক্ষরোপণ, যে ক’টি জলাভূমি এখনো টিকে আছে, তা রক্ষা করা এবং ড্যাপ বাস্তবায়নের ওপর জোর দিতে হবে। তা না হলে অদূর ভবিষ্যতে ঢাকা সম্পূর্ণভাবে বাস উপযোগিতা হারাবে।


আরো সংবাদ



premium cement