২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
অসংক্রামক রোগে দুই-তৃতীয়াংশ মৃত্যু

এ অনুযায়ী স্বাস্থ্যনীতি প্রয়োজন

-

মৃত্যুর কারণ নিয়ে মানুষের পর্যবেক্ষণ রয়েছে। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণা করে কিছু কারণের কথা বলা হয়েছে। ভবিষ্যতেও যে মানুষ একই কারণে একই ধারায় প্রাণ হারাবে সেটি বলা যায় না। করোনা মহামারী নিয়ে মানুষ বিষম ভয় পেয়ে যায়। তথ্য উপাত্ত বলছে, এটি মানুষের সাম্প্রতিক বছরগুলোর গড় মৃত্যুহার বেশি বাড়িয়ে দেয়নি; বরং এটি অন্যান্য সংক্রামক ব্যাধিতে মানুষের মৃত্যুর একটি সাধারণ কারণের মতো কাজ করেছে। মানুষের মৃত্যুর জন্য এখনো অসংক্রামক রোগ বড় ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দেশে মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশ হচ্ছে অসংক্রামক রোগে। এর সাথে মানুষের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের প্রবণতা সেগুলো জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হতে পারে।
চিকিৎসাব্যবস্থার উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান। মরণশীল প্রাণী হিসেবে মানুষের নিয়তিতে কোনো পরিবর্তন আনার লক্ষ্য চিকিৎসাশাস্ত্র নির্ধারণ করেনি। কষ্ট দুঃখ লাঘব করে সুস্থ জীবনযাপনে এটি সহযোগিতা করতে পারে। ওই সেমিনারে বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাপন নিয়ে যেসব তথ্য উঠে এসেছে সেটি উদ্বেগজনক। একদিকে হিসাব করে দেখানো হচ্ছে, দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। অন্যদিকে, মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যা বেড়েছে; বরং এ দেশের মানুষ আগে কিছুটা কম আয়ু পেলেও এখনকার চেয়ে আরো সুস্থ জীবনযাপন করত। তবে গড় আয়ু বৃদ্ধির বিষয়টি অনেকে সন্দেহের চোখে দেখে।
সেমিনারে তথ্য উপস্থাপন করা হয়, দেশে ১৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ৩৫ শতাংশ ধূমপানে অভ্যস্ত। প্রাপ্তবয়স্কদের ৬ শতাংশ স্থূল। বিভিন্ন মাত্রায় স্বাভাবিকের চেয়ে তাদের ওজন বেশি। ২০ থেকে ৭৯ বছর বয়সীদের ১৪ শতাংশ ডায়াবেটিসে ভুগছেন। ৩৫ বছরের বেশি বয়সী ৪৫ শতাংশ নারী ও ৩৪ শতাংশ পুরুষ উচ্চরক্তচাপে ভুগছেন। এসব তথ্য-উপাত্ত বলে দিচ্ছে, দেশের মানুষের প্রকৃত স্বাস্থ্যের অবস্থা। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যনীতিতে এ বিষয়টি সর্বাধিক প্রাধান্য দিলে দেশের মানুষ উপকৃত হতে পারে। ধূমপানের চেয়ে ভয়াবহ হচ্ছে বায়ুদূষণ। কিছু দিন ধরে ঢাকা শহরের বায়ুমান বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে। ধূমপান না করেও আমরা সবচেয়ে বেশি দূষিত বায়ু গ্রহণ করছি। এ বিষয়ে দেশ-বিদেশে বহু আলোচনা হলেও আমাদের সরকারের খুব একটা টনক নড়েনি।
জনসাধারণের বড় একটি অংশ পুষ্টিহীনতায় ভুগছে; এতে কোনো সন্দেহ নেই। করোনাকাল আমাদের দরিদ্র জনগোষ্ঠী দ্বিগুণ করে দিয়েছে। এ অবস্থায় জনগণের আরেকটি অংশ স্থূল হয়ে যাচ্ছে। উভয়টিকে বড় স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। সেমিনারের কর্তাব্যক্তিরা সরকারের স্বাস্থ্যনীতি নিয়ে সন্তুষ্ট। সরকারের সাফল্যের চিত্র এতে বলার চেষ্টা করা হয়েছে। মুক্ত আলোচনার সুযোগ নিয়ে কেউ প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরারও চেষ্টা করেছেন। বলা হয়েছে, জটিল রোগের চিকিৎসা নিতে গিয়ে প্রতি বছর ৬২ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যান। আর ব্যয় মেটানোর সামর্থ্য না থাকায় চিকিৎসা নিতে পারেন না ১৬ শতাংশ পরিবার।
সেমিনারে উল্লেøখ করা হয়, সবচেয়ে বেশি মানুষ দেশে প্রাণ হারায় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা স্ট্রোকে। মৃত্যুর দ্বিতীয় ও তৃতীয় কারণ হচ্ছে হৃদ ও শ্বাসতন্ত্রের রোগ। এসব মৃত্যুর পেছনেও আগের বিবৃত কারণগুলো রয়েছে। গত তিন বছর করোনা নিয়ে প্রস্তুতি ও তোড়জোড় দেখানো হয়েছে। করোনা এখন আমাদের দেশের অন্যান্য ঠাণ্ডাজনিত একটি রোগের মতো আচরণ করছে। আমাদের বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণে উঠে আসছে মৃত্যুর প্রধান কারণ অসংক্রামক রোগ। এর পেছনে যেসব কারণ রয়েছে সেগুলো মোকাবেলায় আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় সেভাবে কোনো প্রস্তুতি ও প্রচার নেই। আমাদের স্বাস্থ্যনীতির কেন্দ্রেও এটি নেই। দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসঙ্কট অনুযায়ী আমাদের স্বাস্থ্যনীতি ঢেলে সাজানো এখন সময়ে দাবি।


আরো সংবাদ



premium cement