গোচারণভূমি সঙ্কুচিত হচ্ছে কেন?
- ২৩ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০৫
নয়া দিগন্তের বেড়া, পাবনার সংবাদদাতা জানান, সমবায়ী প্রতিষ্ঠান বাঘাবাড়ী মিল্কভিটার গোচারণভূমির (বাথান) প্রায় ৫৫০ একর জমি বেদখল হয়ে গেছে। মিল্কভিটার বাথান কমিটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যথাযথ তদারকির অভাবে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ওই জমি নিজেদের নামে জালদলিল ও পত্তনির মাধ্যমে জোর করে ভোগদখল করছে। এতে সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে দেশের উত্তরের বৃহত্তম গোচারণভূমি।
মিল্কভিটা সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৩ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এক অর্ডিন্যান্স বলে পাবনা জেলার সাঁথিয়া, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর ও সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার বাথান হিসেবে পরিচিত সমর্পিত খাস ও অর্পিত প্রায় এক হাজার ৮০০ একর জমি সরকারি দুগ্ধ উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকারী সমবায়ী প্রতিষ্ঠান মিল্কভিটার নামে এককালীন লিজ দেন। সেই থেকে দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতিগুলো মিল্কভিটা থেকে বার্ষিক লিজ নিয়ে রাউতারা বাথানের জমি গোচারণভূমি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। সমিতির কিছু স্থানীয় প্রভাবশালী লোক মিল্কভিটা ও ভূমি অফিসে কর্মরত অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে জমির ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে সেসব জমি ভোগদখল করে আসছেন। আবার অনেকেই বাথানের জমি গোচারণভূমি হিসেবে লিজ নিয়ে ঘাস চাষ না করে ইরি-বোরো ধানের আবাদ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিন জানা যায়, স্বাধীনতার আগে চলনবিল অঞ্চলের সাঁথিয়া, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর, উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর উপজেলায় প্রায় পাঁচ হাজার একর জমি গোচারণভূমি ছিল। জালদলিল ও ভুয়া পত্তনি নিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রভাবশালীরা জোর করে সেই গোচারণভূমি নিজেদের দখলে নিয়ে নেন। শাহজাদপুর উপজেলা ভূমি অফিস সূত্র জানায়, বর্তমানে বাথান এলাকায় গোচারণভূমির পরিমাণ কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় এক হাজার ৪০০ একরে। এর মধ্যে ফরিদপুর উপজেলায় প্রায় ১০০ একর খাস, শাহজাদপুর উপজেলায় সমর্পিত খাস ৭১২.৬৮ একর ও অর্পিত ৫৭৯.১৬ একর গোচারণভূমি রয়েছে।
তবে মিল্কভিটা সমিতির ম্যানেজার জানান, বর্তমানে মাত্র ৮৫০ একর জমি তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অবশিষ্ট ৫৫০ একর (১৬৫০ বিঘা) জমি ভুয়া দলিল ও পত্তনির মাধ্যমে স্থানীয় একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি দখল করে নিয়েছেন। অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে সরকারি এই জমি উদ্ধারের জন্য সিরাজগঞ্জ আদালতে ছয়টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
অবৈধ দখলদারদের কবলে পড়ে উত্তরের বৃহত্তম গোচারণভূমি শাহজাদপুরের বাথান এলাকার বুড়িপোতাজিয়া, কুঠিরভিটা, রাউতগাড়ি, রামকান্তপুর ও হান্নি মৌজায় ১০০ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে ‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ’। মিল্কভিটাভুক্ত কয়েকটি প্রাথমিক দুগ্ধ সমবায় সমিতির একাধিক কর্মকর্তা তাদের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানিয়ে বলেন, স্বাধীনতার পর এই বিস্তীর্ণ গোচারণভূমিকে (বাথান) কেন্দ্র করে পাবনা সিরাজগঞ্জের দুগ্ধ অঞ্চলের বাঘাবাড়ীতে বড়াল নদীর পাড়ে স্থাপন করা হয় সরকারি দুগ্ধ উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকারী সমবায়ী প্রতিষ্ঠান মিল্কভিটা। মিল্কভিটার বাঘাবাড়ী ‘ক’ ও ‘খ’ অঞ্চলে পাঁচ শতাধিক প্রাথমিক দুগ্ধ সমবায় সমিতি রয়েছে। সমিতিতে গো-খামারের সংখ্যা রয়েছে ২২ সহস্রাধিক। বছরের ৯ মাস এই বাথানগুলোতে লক্ষাধিক গরু বিচরণ করে থাকে।
সমিতির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ভুয়া দলিল ও পত্তনির মাধ্যমে একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছেন মিল্কভিটার জমি। অবৈধ দখলদারদের কবলে পড়ে উত্তরের বৃহত্তম গোচারণভূমি সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। সমিতির কিছু কিছু কর্মকর্তা জমি লিজ নিয়ে ঘাসের পরিবর্তে ধান আবাদ করছেন। এতে বাথানে কাঁচা ঘাসের সঙ্কট সৃষ্টি হচ্ছে। প্রাথমিক দুগ্ধ সমবায় সমিতির সদস্যরা বাথানের বেদখল হওয়া জমি দখলমুক্ত করতে এবং ধান আবাদ বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
শাহজাদপুর উপজেলা ভূমি অফিস জানায়, কিছু দখলদার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে এসে জমির মালিকানা দাবি করছেন। তারা কোনো দুগ্ধ সমিতিকে জমি লিজ না দেয়ারও অনুরোধ করেন। ফলে বিষয়টি সরকারের দৃষ্টিগোচর হয়। এরপর ভুয়া আরএস রেকর্ড করার অভিযোগে ওইসব দখলদারের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও শাহজাদপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) বাদি হয়ে আদালতে পৃথক ছয়টি মামলা করেন। শাহজাদপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা