২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ভেজাল খেজুরগুড়ে বাজার সয়লাব

জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর

-

দেশে একটি প্রবণতা দেখা যায়, বাজারে যেসব জিনিসের চাহিদা বেশি সেসব পণ্য নকল ও ভেজাল তৈরি হয় ব্যাপকভাবে। যদিও নকল ও ভেজাল করা আইনত অপরাধ। তবু একশ্রেণীর মানুষ এ ধরনের অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে খাদ্যপণ্যে এ প্রবণতা বেশি।
খাদ্যপণ ভেজাল হলে তা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দেখা দেয়। পাঁচ-সাত বছর আগে সবজি, মাছ, গোশত ও ফলমূলে ফরমালিন দিয়ে পচন ঠেকানো হতো। ওই সময় ফরমালিনমুক্ত মাছ-গোশত ও ফলফলাদি পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। তখন জনমতের চাপে খাদ্যপণ্য ফরমালিনমুক্ত করতে তৎপর হয় সরকার। ফলে উল্লিøখিত খাদ্যপণ্যে ফরমালিন দেয়ার প্রবণতা কমেছে বটে তবে ভেজাল পণ্য উৎপাদন কমেনি।
এখনো ভেজাল খাদ্যপণ্যে বাজার সয়লাব। গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ, চাহিদা থাকায় অতিরিক্ত মুনাফার আশায় শীতের ঐতিহ্য খেজুরগুড়ে নানা উপকরণ মিশিয়ে ভেজাল গুড় তৈরি করে বেশি দামে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, একসময় ফরিদপুর অঞ্চল খেজুরগুড়ের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। এখন খেজুরগাছের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। ফলে চাহিদার তুলনায় গুড় উৎপন্ন হয় কম। একই সাথে কয়েক দশক আগেও বাজারে গুড়ের দাম ছিল কম। এখন গরিব মানুষের পক্ষে খেজুরের গুড় কিনে খাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এ সুযোগে ফরিদপুরের হাটবাজার ভেজাল খেজুড়গুড়ে সয়লাব। এ চিত্র শুধু ফরিদপুরে নয়, দেশের যেখানে খেজুরগুড় উৎপন্ন হয় সেখানেই। অথচ এটি ছিল গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য।
আগে শীত মৌসুমে খেজুর রসের প্রচুর সরবরাহ থাকায় প্রায় প্রতিটি গৃহস্থের বাড়িতে রস জ্বাল দেয়ার বড় চুল্লিø বানানো হতো। ওসব চুল্লিøতে খেজুর রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির ধুম পড়ে যেত। টিনের বড় থামাল বা তাফালে রস জ্বাল দিয়ে ঘন করা হতো। তারপর সেই রস কাঠের পাটা নেড়ে জমাট বাঁধিয়ে গুড় বানানো হতো। সেই গুড় কাপড়ে মোড়ানো ছোট ছোট পাত্রের ছাঁচে ফেলে বানানো হতো পাটালি। পাটালি ছাড়াও তৈরি করা হতো ঝোলাগুড়। শীতের আমেজে পিঠাপুলিতে ব্যবহৃত হতো পাটালিগুড়।
অগ্রহায়ণের মাঝামাঝি থেকে ফাগুন মাস পর্যন্ত শীতের পুরো মৌসুমে গ্রামগঞ্জে খেজুরগুড় পাওয়া যেত। কিন্তু নির্বিচারে খেজুরগাছ কেটে ফেলা, বিপরীতে নতুন করে খেজুরগাছ না লাগানো, পাশাপাশি গাছি-পেশায় নতুনদের আগ্রহ কম থাকায় বর্তমানে খেজুরগুড় চাহিদার তুলনায় খুব অল্প উৎপাদন হয়। খেজুরগাছ কী পরিমাণ কমেছে, একটি নমুনা পাওয়া যায় ফরিদপুরের পরিসংখ্যান থেকে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, ফরিদপুরে এখন প্রায় দুই শ’ হেক্টর জমিতে এক লাখ ২০ হাজারের মতো খেজুরগাছ রয়েছে। এসব গাছ থেকে প্রায় সাড়ে ১৫ শ’ টন রস হয়, যা থেকে পাওয়া যায় প্রায় আড়াই শ’ টন গুড়।
নয়া দিগন্তের প্রতিবেদনে উল্লেøখ করা হয়েছে, গাছিরা প্রতি কেজি খেজুরের খাঁটি গুড় ৪০০ টাকায় বিক্রি করেন। ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন ৫০০-৬০০ টাকা দরে। আর ভেজাল গুড় প্রতি কেজি বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা দরে। এখন চিনির চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে বাজারে খাঁটি খেজুর রসের গুড় কিনতে হয়। ফলে খেজুরগুড়ের অনেক খুচরা ব্যবসায়ী এ গুড় কিনে ভেজাল গুড় তৈরি করছেন। তারা বিভিন্ন স্থান থেকে খেজুরের ঝোলাগুড় কিনে সাথে রঙ, আটা ও চিনি মিশিয়ে ভেজাল গুড় তৈরি করছেন। সেসব গুড় আসল গুড়ের চেয়ে অর্ধেক দামে বিক্রি করে অতিরিক্ত মুনাফা করছেন।
সবার জানা, ভেজাল গুড় খেয়ে শারীরিক সমস্যা দেখা দেবে, জনস্বাস্থ্য হুমকিতে পড়বে। তাই শীতের ঐতিহ্য খেজুরগুড়ের ভেজাল উৎপাদন বন্ধ করতে সরকারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তৎপর হওয়া উচিত।


আরো সংবাদ



premium cement