কৃষকের কান্না শুনতে হবে
- ২০ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০৫
শিল্পকারখানার বর্জ্যে কৃষিজমি দূষিত হয়ে পড়ছে। বছরের পর বছর সে জমিতে চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। কৃষকেরা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এমন অবস্থা ঢাকার অদূরে নরসিংদী সদর উপজেলার নুরালাপুর, মেহেরপাড়া ও নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের সাতগ্রাম ইউনিয়নে এবং সোনারগাঁয়ের তালতলায়। এখানে হাজার হাজার বিঘা জমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষকেরা। তারা কৃষিজমিতে কারখানার দূষিত বর্জ্য ফেলা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কসংলগ্ন রাইনাদী নতুন সড়কে গত রোববার প্রতিবাদ সভায় তিন ইউনিয়নের শত শত কৃষক জড়ো হন। তারা বলেন, মিলের বর্জ্য ও কালো পানিতে তাদের জমির মাটি দূষিত হয়ে পড়েছে। প্রায় পাঁচ বছর ধরে জমিতে ঠিকমতো ফসল ফলাতে পারছেন না। কৃষকদের অভিযোগ, কারখানার অপরিশোধিত তরল বর্জ্য কোনোরকম শোধন বা ট্রিটমেন্ট ছাড়া সরাসরি কৃষিজমিতে ফেলা হচ্ছে। এতে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে তালতলার কৃষকদের কয়েক শ’ বিঘা জমির ইরি, বোরো ধান পচে নষ্ট এবং মিঠাপানির মাছ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
কৃষকদের মধ্যে বেশির ভাগ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি। তাদের সামান্য জমিজমা আছে এবং ওইটুকু জমির ফসল তাদের সারা বছরের খাবারের জোগান দেয়। কিন্তু বর্জ্যজনিত দূষণে ফসল ঠিকমতো না হওয়ায় তারা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অনেক কৃষক জমিতে ফসল ফলাতে না পেরে তাদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
মেহেরপাড়ার আবিজা বেগম গণমাধ্যমকে জানান, স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি ৯০ শতাংশ জমিতে ধান চাষ করতেন। দূষণের কারণে তার জমি এখন নর্দমায় পরিণত হয়েছে।
নুরালাপুরের কৃষক শাহ জাহান মিয়া বলেন, তার চার বিঘা ধানি জমি ছিল। এ জমি থেকে সারা বছরের ধান পেতেন। কারখানার বর্জ্যে মাটি দূষিত হয়ে পড়ায় গত পাঁচ বছর ধরে জমিতে ঠিকমতো ফসল হচ্ছে না।
মানববন্ধনে কৃষকরা বলেন, স্থানীয় পরিবেশ দফতর বা উপেজলা প্রশাসনের মতো কোনো কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো প্রতিকার করছে না।
একটি ইংরেজি দৈনিকে এ সম্পর্কিত প্রতিবেদনে নরসিংদীর পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালকের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। তিনি স্বীকার করেন, ‘ক্রমাগত দূষণের ফলে ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে, এটা ঠিক। কারখানার বর্জ্যে দূষণ হচ্ছে কিনা কিংবা দূষণ সৃষ্টিকারী কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে গত পাঁচ বছরে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা সে বিষয়ে অবশ্য কিছু বলেননি। তবে আশ্বাস দেন, দূষণের প্রতিবাদে যে এলাকায় বিক্ষোভ হয়েছে খোঁজখবর নিয়ে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, সরেজমিন তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেলে কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এটা সত্য যে, দেশে শিল্পকারখানার বর্জ্য শোধন না করে কোথাও ফেলার বিরুদ্ধে জোরালো আইন আছে। প্রত্যেক কারখানায় বর্জ্য শোধনের ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) থাকার বাধ্যবাধকতাও আছে আইনে। কিন্তু বাস্তবতা এটিই যে, বেশির ভাগ কারখানায় ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নেই। তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিশেষ উপায়ে ম্যানেজ করে কাজ চালিয়ে যান।
ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ প্রতিবাদ বিক্ষোভ করলে অনেক সময় পরিবেশ বিভাগ বা প্রশাসনের লোকদের কপাল খোলে। তারা কারখানার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি ধমকি দিয়ে নিজের পকেট ভারী করার সুযোগ নেন। রোববারের প্রতিবাদ বিক্ষোভেও কৃষকরা উল্লেখ করেন যে, প্রতিবাদ করলে অনেক সময় তাদের বিরুদ্ধে প্রভাবশালীরা চাঁদাবাজির মামলা দেন, হামলা চালান। তখন বাড়ি ছাড়া হয়ে থাকতে হয়। এসব কারণে জোরালো প্রতিবাদ সংগঠিত করাও কঠিন। ফলে ক্ষতিগ্রস্তদের সমস্যা যেখানে ছিল সেখানে থেকে যায়। কোনো বাস্তবভিত্তিক সমাধান হয় না।
আমরা আশা করি, ক্ষতিগ্রস্ত গরিব কৃষকদের সমস্যা নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসবেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা