২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
বারবার রঙ-সুতার মূল্যবৃদ্ধি

তাঁতশিল্পের দুর্দিন দূর করতে হবে

-

তাঁত শিল্পের জন্য খ্যাত সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার মতো এলাকায় দফায় দফায় রঙ-সুতা ও অন্যান্য উপকরণের বারবার দাম বাড়া এবং ভারতীয় শাড়ির সহজলভ্যতায় তাঁতশিল্প এখন চরম সঙ্কটে। সহযোগী একটি দৈনিকের উল্লাপাড়া সংবাদদাতার এক খবরে বলা হয়েছে, দেশী শাড়ির উপযুক্ত মূল্য না পেয়ে অনেক তাঁত মালিক তাদের তাঁত বা কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন। অনেকে ঋণের দায়ে জর্জরিত এবং পালিয়ে পালিয়ে বেড়াতে বাধ্য হয়েছেন। বেকার হয়ে পড়া তাঁত শ্রমিকরা পেশা বদলিয়ে অনেকে রাজধানী বা অন্যত্র পোশাকশিল্পে কাজ নিয়েছেন। এমনকি তাদের অনেকে কাজই পাননি।
জানা যায়, উল্লাপাড়া উপজেলার ইসলামপুর, বালশাবাড়ি, দাদপুর, পাইকপাড়া, মধুপুর, পাঁচিলা, নতুন বাবলাপাড়া, গোপীনাথপুর, কোনাবাড়ি, নতুন চাঁদপুর, নতুন দাদপুর, মরিচা প্রভৃতি গ্রামে এক লাখেরও বেশি তাঁত আছে। কম করে হলেও ৫০০ পরিবার তাঁতশিল্পে জড়িত।
উল্লাপাড়া উপজেলার চকনিহাল গ্রামের তাঁত মালিক আলামুদ্দিন ও শাহালম জানান, তাঁতের সুতার দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে তাঁতশিল্পে ধস নামায় এসব পরিবারে নেমে এসেছে চরম দুর্দশা। বালশাবাড়ি গ্রামের তাঁত মালিক সবের আলী জানান, কয়েক পুরুষ ধরে তারা তাঁতশিল্পের সাথে জড়িত। তাদের আয়-রোজগারের প্রধান উৎস তাঁতে বোনা শাড়ি, লুঙ্গি ও গামছা। কিন্তু কয়েক বছর ধরে বারবার রং, সুতা ও কাপড় তৈরির অন্যান্য সরঞ্জামের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। ভারতীয় শাড়িতে সয়লাব হয়ে গেছে কাপড়ের বাজার। ফলে ন্যায্যমূল্যে তাদের উৎপাদিত কাপড় বিক্রি হচ্ছে না। আর এতে অনেক ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন তিনি। সরকারি সহায়তাও পাচ্ছেন না তাঁত মালিকরা। এসব কারণে তিনি তার ৩০টি তাঁত বন্ধ করে দিয়েছেন। তার মতোই তাঁতশিল্পের এমন করুণ অবস্থার কথা জানালেন নতুন দাদপুর গ্রামের বদর উদ্দিন, আলাউদ্দিন, নতুন বাবলাপাড়ার তোফাজ্জল হোসেন, মনিরুল ইসলাম, দাদপুরের শাস্তাপ আলীসহ আরো অনেক তাঁত মালিক। এদিকে, বাজারে নিজেদের তাঁতে উৎপাদিত কাপড় উপযুক্ত মূল্যে বিক্রি না হওয়ায় মোটা অঙ্কের ঋণের দায়ে ইসলামপুর এলাকার আহম্মদ আলী, আব্দুর রাজ্জাক, ঠাণ্ডুমিয়া, জামাল মিয়া ও মোশারফ হোসেনসহ অনেক তাঁত মালিক তাদের কারখানা বন্ধ করে দিয়ে ঘর বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন বলে জানান স্থানীয়রা। এই অবস্থায় বেকার হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার তাঁতশ্রমিক। তাঁত কারখানায় সুতা কেটে সরবরাহকারী দীপালী রানী জানান, ববিনে সুতা তুলে তাঁতের কারখানায় সরবরাহ করে সংসার চালাতেন তিনি। এখন অনেক তাঁত কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ববিনে তোলা সুতা আর তেমন সরবরাহ করতে পারছেন না। ফলে চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়েছে তার সংসার। এই ব্যাপারে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড উল্লাপাড়া উপজেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত অফিসার বলেন, কাপড়ের বাজারে তাঁতীদের তৈরি কাপড়ের কদর আসলে কমে গেছে। ফলে, উপজেলার তাঁতপল্লীতে এখন পর্যন্ত ৬০ হাজারের বেশি তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে। লিয়াজোঁ অফিসার বলেন, তাঁত বোর্ড তাঁত মালিকদের ঋণ দেয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট আন্তরিক। কিন্তু ঋণ নিয়ে মালিকরা সময় মতো তা শোধ না করায় বিপদে পড়ছে তাঁত বোর্ড অফিস। উল্লাপাড়ার ৫০০ তাঁতির কাছ থেকে তাঁত বোর্ড ৮০ লাখ টাকার বেশি পাবে। আদায় না হওয়া এই টাকা আদৌ আদায় করা সম্ভব হবে কি না এ নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। অবিলম্বে এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে আমরা এখনো আশাবাদী।


আরো সংবাদ



premium cement