২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ভরা মৌসুমেও চালের দাম নাগালের বাইরে

সংসার এখন অনেকেরই গলার কাঁটা

-

নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বেড়েছে, সেই তুলনায় সাধারণ মানুষের আয় বাড়েনি; বরং করোনাকাল থেকে বিপুল মানুষের সেই যে আয় কমেছে, তা আর পূরণ করা অনেকের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এতে করে বড় কষ্টে আছে খেটে খাওয়া মানুষ। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, বেশির ভাগ দিন তাদের ভাতের সাথে আলু সিদ্ধ ও শাকপাতা খেয়ে দিন কাটছে। মাছ-গোশত কেনা তাদের কল্পনাবিলাস। এই কয়েক মাসে খাদ্যসামগ্রী চাল-ডাল, আটা-তেল, ময়দা-চিনি, পেঁয়াজ-রসুন, মসলা ও তরিতরকারির দাম যে হারে বেড়েছে তাতে শ্রমজীবীদের জন্য সংসার এখন ‘গলার কাঁটা’সম। বাস্তবে দিন এনে দিন খাওয়া গোষ্ঠীসহ স্বল্প আয়ের মানুষের সংসার আর চলছে না।
এসব মানুষের কষ্টের কথা শোনার কেউ নেই। বাজার-ব্যবস্থাপনা দুর্বল হওয়ায় এই শীতেও এক কেজি সবজি কিনতে লাগছে ৩০-৪০ টাকা। এ জন্য শ্রমজীবীদের এখন আর সবজিও তেমন জোটে না। ডালের সাথে কখনো আলু সিদ্ধ, কখনো বা শাকপাতা এসব খেয়েই উদর পূর্তি করতে হচ্ছে। খাদ্যমান কতটুকু পুষ্টিগুণসম্পন্ন, তা ভাবার অবকাশ নেই। তাদের খাবার তালিকায় এখন শুধু থাকছে ভাত আর ভর্তা। এভাবেই চালিয়ে নিতে হচ্ছে সংসার। কোনো মতে দিন কাটানোই এখন বিপুল এ জনগোষ্ঠীর একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেঁচে থাকার সংগ্রামে তারা ব্যতিব্যস্ত।
সরকার এত দিন উন্নয়নের কথা উচ্চকণ্ঠে প্রচার করেছে; কিন্তু এই উন্নয়ন যে সাধারণ মানুষের ভাগ্য ফেরাতে তেমন কোনো কাজে আসছে না তা এখন বোঝা যাচ্ছে। আসলে উন্নয়নের সুফল মুষ্টিমেয় মানুষের ঝুড়িতে গিয়ে জমা হচ্ছে। সেসব ভাগ্যবানদের কোনো চিন্তা না থাকলেও সংসার চালাতে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত দেশের বেশির ভাগ মানুষ। বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, করোনার আগে যেখানে দেশে হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৪২ লাখ, সেখানে এখন অনুমান করা হচ্ছে- এ সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। এর আলামত পাওয়া যাচ্ছে সাম্প্রতিক নানা পরিসংখ্যানে।
এই যখন সাধারণের অর্থনৈতিক অবস্থা, তখন দেশের প্রধান খাদ্যশস্য চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। চালের দামে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। আমনের ভরা মৌসুমেও এর দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকার ওপেন মার্কেট সেলের (ওএমএস) চাল বিক্রি সারা দেশে বাড়িয়েছে। দেশব্যাপী ওএমএসের দোকানের সামনে দীর্ঘ হচ্ছে অপেক্ষমাণ মানুষের সারি। অনেক নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষও এখন এ লাইনে দাঁড়াতে বাধ্য হচ্ছে। সংবাদপত্রের খবর থেকে জানা যায়, গ্রামে সাত সকালে ঘুম থেকে জেগেই ওএমএস দোকানের সামনে হাজির হচ্ছে মানুষ। চার-পাঁচ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে জীর্ণ শরীরে ওএমএসের চালের অপেক্ষায় থাকছে তারা। সকালে পানতা খেয়ে ছুটছে ওএমএসের দোকানে, যাতে সস্তা দামের এই চাল পাওয়া যায়। ১০০ টাকা সাশ্রয়ে পাঁচ কেজি চাল (ওএমএস) পেতে তাদের এই প্রাণপাত। এক শ’ টাকা বাঁচাতে এমন পরিশ্রম করতে হচ্ছে শ্রমজীবীদের।
নিত্যপণ্যের দাম শুধু বেড়েই চলছে, সাধারণের আয় বাড়েনি, রোজগার আগের মতোই আছে; কিন্তু সব কিছুর দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে স্বল্প আয়ের মানুষসহ শ্রমজীবী শ্রেণীর। সংসার সামলাতে কম কিনে, কম খেয়ে কোনোমতে দিন পার করছে। দ্রব্যমূল্যের এ অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতিতে মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা। এই দুর্দিনের অবসান কবে হবে তা কারো জানা নেই।


আরো সংবাদ



premium cement