২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
রেলশূন্য হচ্ছে রেলের শহর!

কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া উচিত

-

একটি সহযোগী দৈনিকের সিরাজগঞ্জ জেলা বার্তা পরিবেশক এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, একদা ‘রেলসিটি’ নামে অভিহিত সিরাজগঞ্জ শহর এখন ট্রেন বা রেলশূন্য; এক সময় ভোরের ট্রেনের হর্ন শুনে এ শহরবাসীর ঘুম ভাঙত। দিনভর রেলইঞ্জিনের ঝিকঝিক আওয়াজের সাথে হাজারো লোকের কলকোলাহলে মুখরিত হতো যে সিরাজগঞ্জ, সেখানে বর্তমানে মাত্র একটি ট্রেন যাতায়াত করে থাকে। অতীতকালে ‘উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার’ এ শহরটিতে পূর্বপ্রান্তে যমুনা নদীবন্দরে লঞ্চসহ বিভিন্ন জাহাজ ও ফেরি ভিড়ত।
আরো উল্লেখ করা হয়েছে একই প্রতিবেদনে, নদীবন্দর থেকে সিরাজগঞ্জ শহরে ঢুকতেই দু’দিকে বেঁকে যাওয়া রেলপথে সর্বদা কোনো না কোনো ট্রেন চালু থাকত। মাত্র তিন দশকের মধ্যে এসব দৃশ্য এখন কেবলই স্মৃতি হয়ে গেছে। জানা যায়, উনিশ শতকের শুরুতে তৎকালীন ব্রিটিশ আমলে যমুনাবিধৌত সিরাজগঞ্জকে রেলওয়ে সিটি বা রেলশহররূপে গড়ে তোলা হয়েছিল। এই শহরের বুকচিরে দু-দু’টি রেলসড়ক যমুনা নদীর তীরে গিয়ে শেষ হয়েছিল। সিরাজগঞ্জ শহরটিতে ছিল রায়পুর, সিরাজগঞ্জ বাজার ও ঘাট এবং বাহিরগোলা নামে চারটি রেলস্টেশন। এই শহরের লোকজনের জীবিকা নির্ভর করত এই স্টেশনগুলোর ওপর। এমনকি, নিকট অতীতে যমুনার ওপর দিয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের পরও সিরাজগঞ্জ হয়ে পদ্মা ও সুন্দরবন এক্সপ্রেস নামে দু’টি আন্তঃনগর ট্রেন, একটি মেইল ট্রেন ও একটি লোকাল ট্রেন চলাচল করত। পরে এক এক করে এসব ট্রেন বন্ধ হয়ে যায়।
এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ ‘স্বার্থরক্ষা সংগ্রাম কমিটি’র আহ্বায়ক ডা: জহুরুল হক রাজা বলেন, ১৯১৫ সালে অর্থাৎ শতাধিক বর্ষ আগেই ভারতবর্ষের তদানীন্তন ব্রিটিশ সরকার চলনবিলের বুকচিরে ঈশ্বরদী-সিরাজগঞ্জ রেললাইন নির্মাণ করেছিল। ফলে এ দেশের উত্তরাঞ্চলের সাথে ঢাকাসহ পুরো পূর্বাঞ্চলের নিয়মিত যোগাযোগব্যবস্থায় নতুন দিগন্ত সূচিত হয়েছিল। ট্রেনে সিরাজগঞ্জ এসে যমুনা ঘাট থেকে, যমুনার পূর্বতীরে, বর্তমান জামালপুরের জগন্নাথগঞ্জ ঘাট হয়ে ঢাকায় উত্তরবঙ্গের লোকেরা আসা-যাওয়া করতেন। রায়পুরের সাবেক রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার প্রভাত কুমার দাস বলেছেন, একদা এ শহরে চারটি রেলস্টেশন ছিল। এর মধ্যে রায়পুরে ছিল ট্রেনের রক্ষণাবেক্ষণ, রেল ঘোরানো ও কয়লা ইঞ্জিন মেরামতের কারখানা। সেখানে বহু যন্ত্রপাতির ধ্বংসাবশেষ আজও আছে। এমনকি, রেল স্টাফকোয়ার্টার পর্যন্ত এখানে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। আবার এর অনেক বাসাই অন্যের জবরদখলে চলে গেছে। প্রবীণ সাংবাদিক মোস্তফা কামাল বলেছেন, সিরাজগঞ্জ-বগুড়া রেললাইন নির্মাণ ও ঐতিহ্যবাহী রায়পুরকে রেলজংশন করা ছাড়া সিরাজগঞ্জ রেল সিটি হতে পারবে না। রায়পুরকে রেলওয়ে জংশন করা হলে আমাদের সরকারের আর্থিক সাশ্রয় ছাড়াও একটি বিরাট ঐতিহ্য ফিরে আসবে। এখানে রেলের বিপুল নিজস্ব জমি রয়েছে। আরেকজন প্রবীণ সাংবাদিক আবদুল কুদ্দুস (৭৫) জানান, একসময় এই রেলসিটি থেকে ধনী লোকেরা ট্রেনে চড়ে কলকাতায় গিয়ে মার্কেটিং করে ফিরতেন। বাংলাদেশ স্বাধীনতা পাওয়ার পরও এখানে ট্রেন গুরুত্ব পেত। বর্তমানে সে দিন আর নেই। ফলে অনেকের ব্যবসাই বন্ধ হয়ে গেছে। রেলের অনেক জায়গা যেহেতু আছে, তাই রায়পুর একটি রেলজংশন গড়ে তোলা উচিত বলে তার অভিমত। তাহলে সিরাজগঞ্জ ‘রেলসিটি’ আবার হতে পারবে বলে তিনি মনে করেন।
সজাগ নাগরিকরা মনে করেন, এক দিকে সরকার রেল অধ্যুষিত বাংলাদেশ গড়ে তুলছে অন্য দিকে, রেলসিটি সিরাজগঞ্জ রেলবিহীন হয়ে পড়ছে। এ ব্যাপারে সরকারের আশু সুদৃষ্টিই সবার কাম্য।


আরো সংবাদ



premium cement