২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
১৮ দিন বিদ্যুৎহীন হাসপাতাল

সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিন

-

এ এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। দেশের একটি বৃহৎ বিভাগীয় হাসপাতালে ১৮ দিন ধরে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। সার্জারিসহ অন্য সব চিকিৎসাসেবা চলছে মোবাইল সেটের টর্চ জ্বালিয়ে অথবা মোমবাতির আলোয়। ঘটনাস্থল বরিশালের শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। এ হাসপাতালে একাধিক ব্লকে বিদ্যুৎসংযোগ নেই। ফলে দু’টি ব্লকে মেডিসিন, সার্জারি, ডেন্টাল, মানসিক ও রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণ ২৫ অক্টোবর বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাব।
পত্রপত্রিকার খবর অনুযায়ী, হাসপাতালের অতি গুরুত্বপূর্ণ সার্জারি বিভাগের ওটিগুলো চলছে মোবাইলের টর্চ লাইটের আলোয়। এমনকি কখনো মোমবাতি জ্বালিয়ে। বিদ্যুৎ না থাকায় বন্ধ রয়েছে সিটি স্ক্যান, এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রামসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা। হাসপাতালের পরিচালক বলেন, ‘বর্তমানে হাসপাতালের জি ও বি ব্লকে বিদ্যুৎসংযোগ নেই। ওই দুই ব্লকে মেডিসিন, সার্জারি, ডেন্টাল, মানসিক ও রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।’
নাম প্রকাশ না করে একজন নার্স বলেন, ‘রাতে আমরা ঠিকভাবে ইনজেকশন দিতে পারছি না। চলাফেরা করতে পারছি না।’ দায়িত্বরত এক চিকিৎসক বলেন, ‘এভাবে একটি হাসপাতাল চলতে পারে না। হাসপাতালের পুরো সিস্টেমই এলোমেলো।’


সেবা না পাওয়ায় হাসপাতাল ছেড়ে যাচ্ছেন অনেক রোগী। একজন রোগীর স্বজন বলেন, ‘এভাবে মনিটরিং ছাড়া হাসপাতাল চলতে পারে না।’
১৮ দিনে একটি অতীব জরুরি স্থাপনায় বিদ্যুৎসংযোগ পুনরুদ্ধার করা যাবে না; এর চেয়ে বড় ব্যর্থতা আর কী হতে পারে আমাদের জানা নেই। তবে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের এ বিষয়ে জবাব সব সময়ই প্রস্তুত থাকে। এ হাসপাতালের বিদ্যুৎসংক্রান্ত কাজে নিয়োজিত গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তা বলেছেন, বর্তমানে যে দু’টি ব্লকে বিদ্যুৎসংযোগ নেই সেগুলো মেরামত করতে ২৪ লাখ থেকে ২৫ লাখ টাকার প্রয়োজন। কিন্তু সেই অর্থ কখন কিভাবে পাওয়া যাবে কিংবা কত দিনের মধ্যে বিদ্যুৎসংযোগ পুনরুদ্ধার করা যাবে সে বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগ, হাসপাতালের পরিচালক বা অন্য কোনো দায়িত্বশীল কর্মকর্তাই কিছু বলতে পারেননি।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) একটি গণমাধ্যমকে বলেন, বর্তমানে সার্জারি ওয়ার্ডগুলো এবং রেডিওলজি বিভাগে বিদ্যুৎ নেই। এতে করে রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা করানো যাচ্ছে না। চিকিৎসকরা ঠিকভাবে চিকিৎসা দিতে পারছেন না। নার্সরাও সেবা দিতে পারছেন না। রোগীরা বেকায়দায় রয়েছেন। তিনি আরো বলেন, ‘মনে হয় হাসপাতালটি ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ লাইন মেরামত করা হয়নি। এ জন্য বিদ্যুতের কেবল নষ্ট হয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে।’


গত ৫০ বছরে এ সংযোগ যদি মেরামত করা না হয়ে থাকে তবে বলতে হবে এতদিন যে চলেছে সেটিই অনেক বেশি। তবে এটি নিশ্চিত, মেরামত খাতে গণপূর্ত বিভাগের অর্থ বরাদ্দ থাকার কথা প্রতি বছর। আর সেই অর্থ সম্ভবত ব্যয়ও হয়েছে। তাহলে মেরামত হলো না কেন তা খতিয়ে দেখা দরকার।
স্বাস্থ্যসেবা খাতে বিদ্যমান স্থবিরতার ভয়াবহ চিত্র স্পষ্ট হয়ে যায় বিগত করোনা মহামারীর সময়। এখন শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিদ্যুৎসংযোগ নিয়ে যে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে সেটিও নতুন দৃষ্টান্ত। মানুষের জীবন-মরণ নিয়ে এমন হেলাফেলা বিশ্বের আর কোথাও সম্ভব কি না আমাদের জানা নেই। কিন্তু বাংলাদেশে সবই সম্ভব।
কিন্তু সেবার নামে রোগীদের প্রতি এমন চরম অবহেলা চলতে পারে না। হাসপাতালের বিদ্যুৎসংযোগ অবিলম্বে পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজটি করতে হবে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement