আর্থিক সঙ্কটে চাই ব্যয় সঙ্কোচন নীতি
- ১৪ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০
ডলার সঙ্কটে আমাদের অর্থনীতি বিপর্যয়ে পড়েছে। সরকার চেষ্টা করছে ব্যয় সঙ্কোচনের পাশাপশি বৈদেশিক ঋণ নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে। এ জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় বহু পণ্যের আমদানি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সরকার নিজ উদ্যোগে বহু ঋণপত্র অনুমোদন করছে না। অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যসঙ্কটের ঝুঁকি নিয়েও সরকার এমন প্রান্তিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর প্রভাব ইতোমধ্যে বাজারে পড়ছে। দ্রুত পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাবে তার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। অন্য দিকে সব ধরনের সংস্কারের প্রস্তাব মেনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ থেকে ঋণ নিতে যাচ্ছে সরকার। বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক ঋণদানকারী অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথেও ঋণ পেতে দেনদরবার করা হচ্ছে। দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে সরকারের এমন জোরালো প্রচেষ্টা।
একই সময় খবর পাওয়া যাচ্ছে, ডলার ব্যয় করে সরকার লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করছে। কোনো ধরনের ইতিবাচক অর্জন ছাড়াই সরকার এ ধরনের খরচ বন্ধ বা সীমিত করার পরিবর্তে আরো বাড়ানো হচ্ছে। সহযোগী একটি দৈনিক যুক্তরাষ্ট্রের আইন দফতরের প্রকাশিত তথ্যের বরাতে জানাচ্ছে, জানুয়ারিতে নেলসন মুলিনস রিলে অ্যান্ড স্কারবোরো এলএলপি নামে একটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ দেয় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র্র মন্ত্রণালয়। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটিকে আগামী বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত মাসে ২০ হাজার ডলার খরচ দিতে হবে। তবে আনুষঙ্গিক খরচের প্রয়োজন হলে বাড়তি ডলার জোগান দেয়ার শর্তও রয়েছে। নেলসন মুলিনস বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ হয়ে আরো দু’টি লবিস্ট ফার্মকে নিয়োগ দিয়েছে। তাদের পেছনেও সরকারকে নিয়মিত অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে। আরেকটি লবিস্ট প্রতিষ্ঠান বিজিআরকে আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত প্রায় একই ধরনের সেবা দিতে মাসে ২৫ হাজার ডলারে নিয়োগ দেয়া হয়। এর সাথে যুক্ত হবে বিদেশভ্রমণসহ আনুষঙ্গিক সব খরচ। এ ছাড়া সরকারদলীয় এক সংসদ সদস্য আরেকটি প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশের পক্ষে নিয়োগ দিয়েছেন বছরে এক লাখ ৬২ হাজার ডলারের বিনিময়ে। তাদের সাথে হয়েছে তিন বছরের চুক্তি।
প্রতিষ্ঠানগুলোর পেছনে ডলার ঢালা হলেও সেগুলো বাংলাদেশের পক্ষে জোরদার কোনো কাজ করতে পারছে না। নেলসন মুলিনস এ পর্যন্ত মার্কিন কংগ্রেসের কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর একটি মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করিয়ে দিয়েছে। তারা মার্কিন কংগ্রেসেরে সদস্য নন। এমনকি তারা পদস্থ কোনো কর্মকর্তা কিংবা গুরুত্বপূর্ণ কেউ নন। পত্রিকার খবরে প্রকাশ, মার্কিন কংগ্রেসের সদস্য নন এমন মানের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করতে লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এক কূটনীতিক। সব মিলিয়ে সরকার চলতি বছরে পাঁচটি লবিস্ট প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিয়েছে। এতে বাংলাদেশের কোনো লাভ হয়েছে কি না সেই খবর কোথাও নেই। এমনকি বর্তমান সরকারও কোনোভাবে উপকৃত হতে পারছে তারও খবর নেই। দেশের অর্থনীতিতে যখন বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় সবচেয়ে প্রয়োজনীয় তখন মোটা অঙ্কের অর্থ কেন আমরা খরচ করছি এর পেছনে সেই প্রশ্নের উত্তরও কোথাও নেই।
এসব লবিস্ট প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়ার লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্র্রের বাইডেন প্রশাসনের নীতিনির্ধারকদের সাথে বর্তমান সরকারের সম্পর্ক বৃদ্ধি ও মানবাধিকার প্রশ্নে দু’দেশের দূরত্ব কমানো। মূলত মানবাধিকার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলাবাহিনী র্যাব ও এর কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর সরকার লবিস্ট ফার্ম নিয়োগের জোরালো প্রচেষ্টায় নামে। মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র, বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও জাতিসঙ্ঘ বাংলাদেশের প্রতি কিছু প্রস্তাব রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্র্রের সাথে সম্পর্ক পুরনো জায়গায় ফিরিয়ে নিতে হলে সে অনুযায়ী কার্যক্রম নিতে হবে। সরকার সেসবের কিছু না করে লবিস্ট ফার্ম দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের আস্থায় আনতে চায়। এটি কোনোভাবে টেকসই উদ্যোগ নয়। এতে দরিদ্র দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থার মধ্যে শুধু সরকারি কোষাগারের অর্থ অপচয় বাড়াবে। সরকারের উচিত এ ধরনের অপ্রয়োজনীয় অর্থ ব্যয় থেকে সরে আসা। এ দুর্দিনে যতটা পারা যায় বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা। সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে এই প্রত্যাশা সবার।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা