২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
বরগুনায় পাউবোর জমি বেদখল

উদ্ধারে নেই তৎপরতা

-

সারা দেশে বিপুল সরকারি বা খাসজমি রয়েছে। কিন্তু প্রভাবশালীরা বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন সেসব খাসজমি হাতিয়ে নিতে সব সময় অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকেন। স্থানীয় প্রশাসনও তাদের এই অবৈধ দখলে তেমন কোনো বাদ সাধে না। আমাদের সমাজ-বাস্তবতায় এর দু’টি কারণ বিদ্যমান, এক- ক্ষমতাসীন দলের লোকজনকে অর্থের বিনিময়ে সুযোগ-সুবিধা দিয়ে মাঠপ্রশাসনের দায়িত্বশীল অনেক কর্মকর্তা স্থানীয় দুষ্টচক্রের সাথে এক ধরনের আঁতাত গড়ে তোলেন। দ্বিতীয় যে কারণটি বিদ্যমান তা হলো- সরকারি দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের সাথে বিবাদে না জড়িয়ে তারা রুটিন চাকরি করে যান। ফলে দেশব্যাপী সরকারি সম্পত্তির বিপুল অংশই আজ হাতছাড়া। এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণাঞ্চলের জেলা বরগুনায়। বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের শত কোটি টাকার জমি হাতছাড়া হয়ে গেছে। তবু অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো তৎপরতা নেই। নয়া দিগন্তের বরগুনা সংবাদদাতার পাঠানো গতকাল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সঠিক নজরদারি না থাকায় কয়েকশ’ কোটি টাকার জমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে। জেলার আমতলী পৌর শহরের দুই-তৃতীয়াংশ জমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের। এ এলাকার প্রায় সব জমি এখন প্রভাবশালীদের দখলে। সরকারি জমি দখল নিতে বাদ যাননি জনপ্রতিনিধিরাও। দখলদারদের মধ্যে কয়েকজন প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির নাম সবার শীর্ষে রয়েছে। তারা শুধু নিজেরা দখল নিয়ে ক্ষান্ত হননি; সাঙ্গোপাঙ্গদেরও দখল নিতে সহযোগিতা করেছেন। অন্য দিকে, পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া বাজার বেড়িবাঁধের পাশের জমি একইভাবে দখল করে দখলদাররা বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো বাধা দেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
এ বিষয়ে আমতলী উপজেলা চেয়ারম্যানের বক্তব্য উদ্ধৃতি হিসেবে সংবাদ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান বলেছেন, ‘কিছু নামধারী নেতাকর্মী নিজেদের স্বার্থে জমি দখল করেছেন। এদের জন্য দলের ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ হচ্ছে।’ মূলত রাজধানী শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের সরকারি জমি আর কেউ দখল করার সাহস রাখেন না; শুধু ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ছাড়া। এটিই বর্তমানে দেশের বাস্তবতা। তাই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, বর্তমান সরকারি দল দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকায় সারা দেশে সরকারি জমির কত শতাংশ তাদের লোকজন দখল করেছেন, তার তথ্য থাকলে বোঝা যেত, কিভাবে জনগণের সম্পদ লুটপাটের মহোৎসব চলছে। এ ক্ষেত্রে শুধু পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি দখল হয়নি, বিভিন্ন খাস খতিয়ানভুক্ত জমিও দখল হয়েছে। দখলকারীরা সংখ্যায় অনেক। এদের বেপরোয়া দখলবাজির কারণে শুধু বরগুনার দু-একটি উপজেলা নয়, সারা দেশে নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
নয়া দিগন্তের খবর থেকে আরো জানা গেছে, আমতলীতে সরকারি জমি দখল করে সীমানা প্রাচীর দিয়ে পজেশন বিক্রি করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকায়। অনেকে জায়গা দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ করছে। গত পাঁচ বছরে ভবন নির্মাণের কাজ জোরেশোরে চললেও পাউবোর পক্ষ থেকে কোনো বাধা দেয়া হয়নি।
আমরা মনে করি, মাঠপ্রশাসনে যারা দায়িত্ব পালন করেন, তাদের কর্তব্যকাজের মধ্যে সরকারি সম্পত্তির যথাযথ সংরক্ষণের দায়িত্বও বর্তায়। কিন্তু তারা তা করতে ব্যর্থ হচ্ছেন বা করছেন না। কেন করছেন না, এ নিয়ে কোনো অনুসন্ধান নেই, তদন্ত নেই। এর সহজ মানে দাঁড়ায়- সরকার সুশাসন প্রতিষ্ঠার চেয়ে দলীয় নেতাকর্মীকে অবৈধ সুবিধা দিয়ে সন্তুষ্ট রাখতে চায়। এর মাধ্যমে ক্ষমতার বলয় আরো শক্ত করতে চায়। দেশের এমন বাস্তবতার পরও আমরা আশা করব, বরগুনায় পাউবো কর্তৃপক্ষ সংস্থাটির হাতছাড়া হওয়া শত কোটি টাকার সম্পদ উদ্ধারে তৎপর হবে।


আরো সংবাদ



premium cement