২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
বিপ্লব ও সংহতি দিবস আজ

জাতীয় ঐক্য রচনার দিন

-

দেশে গণতন্ত্র এখন বেহাল দশায়। জনগণের মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত, ভোটাধিকার হারিয়ে গেছে ক্ষমতার চোরাবালিতে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করার পরিবর্তে দিন দিনই নাজুক অবস্থার দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। আমাদের রজনীতিকদের সঙ্কীর্ণ মানসিকতা, অসহিষ্ণুতা এবং অদূরদৃষ্টির কারণে গণতন্ত্র উন্মুল হয়ে পড়েছে। দেশ চলছে একটি ভঙ্গুর গণতান্ত্রিক কাঠামোর অধীনে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও অনাস্থার প্রেক্ষাপটে বর্তমান সময়েও জাতির দিন কাটে শঙ্কায়। অনেক ক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন বাহিনীকে ভীতির চোখে দেখছেন নিরীহ শান্তিপ্রিয় মানুষ। গুম খুনের ঘটনাগুলো বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে।
বর্তমানে বিদ্যমান পরিস্থিতি অনেককেই ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। সে দিনটির প্রাক্কালে বাংলাদেশে অরাজক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল। স্বার্থান্বেষী ও চক্রান্তকারীরা দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীতে অনুপ্রবেশ করে চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। সদ্য স্বাধীন একটি দেশের জন্য যা ছিল সত্যিই মহা দুর্যোগ। তবে আমাদের সশস্ত্রবাহিনী ও জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে দেশবিরোধী চক্রের ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে সুসংহত করেছিল দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব। সংগ্রামী জনতা দৃঢ়প্রত্যয়ে গর্জে উঠেছিল বিদেশী আগ্রাসন, আধিপত্যবাদ এবং তার দোসরদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে। সিপাহি-জনতার বৈপ্লবিক সংহতির অনন্য দিনটিতে বাংলাদেশের স্বকীয় জাতিসত্তাসহ অনন্য বৈশিষ্ট্য মূর্ত হয়ে উঠেছিল। এখনো দেশ ও জাতি নানা ষড়যন্ত্র সঙ্কটের মুখে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, জাতীয় ঐক্য, সুশাসন ও ঐতিহ্যের চেতনা দুর্বলতর হচ্ছে। দুর্নীতি লুটপাটের লাগামহীন আবর্তে তুলিয়ে যাচ্ছে দেশ। রাষ্ট্রযন্ত্রের পরতে পরতে অব্যবস্থাপনা। এ অবস্থায় ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক দিনটি আমাদের অন্যতম প্রেরণা হতে পারে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের সার্বিক মুক্তির জন্য।
১৯৭৫ সালের ২ নভেম্বর রাতে সেনাবাহিনীর তদানীন্তন চিফ অব জেনারেল স্টাফ খালেদ মোশাররফ হঠাৎ সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দী করে একটি পাল্টা অভ্যুত্থানের পথে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। একই সময়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার শীর্ষস্থানীয় নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়, যা ছিল নজিরবিহীন। এমন প্রেক্ষাপটে জাতীয় পরিস্থিতি এতটাই অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে যে, কার্যত তখন সরকারের কোনো অস্তিত্বই অনুভূত হচ্ছিল না। এ দিকে ৬ নভেম্বর রাতে ঢাকায় সিপাহিরা একজোট হয়ে তদানীন্তন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করে আনেন। তাদের সাথে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দেন বিপুল সাধারণ মানুষ। তারা রাজপথে নেমে সেনাপ্রধানকে স্বাগত এবং সেনাবাহিনীকে অভিনন্দন জানান দেশকে চরম নৈরাজ্য থেকে রক্ষা করায়। সেনাপ্রধান জিয়াকে এ অবস্থায় রাষ্ট্রচালনার গুরুদায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হয়। সৈনিক-জনতা যাকে দেশ চালনার গুরুভার অর্পণ করেছিলেন, তিনি দৃঢ়তার সাথে রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিতে চেষ্টা করেন শত প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে। দুর্ভাগ্য, বাংলাদেশের বৈরী শক্তির হাতে তাকে জীবন দিতে হয়। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের সেই দিনে যারা জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় অনবদ্য অবদান রেখেছেন; তাদের সেই অবদান এখনো সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।
৭ নভেম্বরের আদর্শ হচ্ছে দেশপ্রেম, জাতীয় মর্যাদা, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, জনগণের ঐক্য এবং দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মূল্যবোধের পরিচর্যা। সর্ববিধ সঙ্কীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় স্বার্থে চিন্তাভাবনা ও তৎপর হওয়ার তাগিদ দেয় ঐতিহাসিক দিনটি। আজ আমাদের শপথ নিতে হবে সব ধরনের ষড়যন্ত্র ও আগ্রাসী শক্তির কার্যকর মোকাবেলায়। জাতীয় ইতিহাসে তাৎপর্যময় এই দিনে সবার প্রতি আমাদের আহ্বান : আসুন, দ্বিধা, সংশয় ও হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে সবাই এক হয়ে দেশ থেকে চিরতরে দূর করি বিভাজনের রাজনীতি, শোষণের অর্থনীতি ও অবক্ষয়ের সংস্কৃতি। সেই সাথে জাতীয় ঐক্যের শক্তিবলে গণতন্ত্র ও সুশাসনের বিকাশ এবং মৌলিক ও মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করি। সুদৃঢ়প্রত্যয়ে ও যৌথ সংগ্রামে অবসান ঘটাই সন্ত্রাস-সহিংসতা, দুর্নীতি-দলীয়করণ, ক্ষমতার দম্ভ ও অপপ্রয়োগে জর্জরিত সমাজ, রাষ্ট্র ও রাজনীতির যাবতীয় গ্লানি।


আরো সংবাদ



premium cement