২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
জলবায়ুজনিত শীর্ষ ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

বৈশ্বিক ফোরামে উপস্থাপনে ব্যর্থতা

-

বাংলাদেশ বিশ্বের দুর্যোগপ্রবণ দেশগুলোর মধ্যে প্রথম কয়েকটি দেশের একটি। আমাদের উপকূলীয় জনপদে লবণাক্ততার পাশাপাশি বছর বছর ঝড়ঝঞ্ঝা আঘাত হানে। আর বিভিন্ন এলাকায় বন্যা তো লেগেই থাকে।
গত তিন দশকে বাংলাদেশে টর্নেডো-ঘূর্ণিঝড়ে বিপুলসংখ্যক মানুষের প্রাণহানিসহ কৃষিতে ক্ষতি, বাস্তুচ্যুতির ঘটনা এবং আর্থিক ক্ষতি বিশ্লেষণ করলে বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি দীর্ঘমেয়াদি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হওয়ার কথা; কিন্তু আন্তর্জাতিক ইনডেক্সে সাত নম্বরে রয়েছি আমরা। এ ব্যর্থতার কারণ, জলবায়ুর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে এখনো সেভাবে নিজেকে তুলে ধরতে না পারা।
জার্মান ওয়াচের গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স অনুযায়ী, মোস্ট অ্যাফেক্টেড ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ নেই। তবে দীর্ঘমেয়াদি ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেস্কে ১০টি দেশের মধ্যে আমাদের দেশের অবস্থান সাত নম্বরে। ২০০০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যপ্ত জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের পরিবর্তন হয়নি; অর্থাৎ সাত নম্বরে দেখানো হয়েছে। কারণ হিসেবে জার্মান ওয়াচের গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্সে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে পুয়ের্তোরিকোতে হারিকেন মারিয়া এবং হারিকেন জিনির (২০০৪) মতো বিধ্বংসী ঘটনা ঘটেছে। মিয়ানমারে ২০০৮ সালে ঘূর্ণিঝড় নার্গিস ভয়াবহভাবে আঘাত হানে। এ জন্য দেশগুলো ঝুঁকির তালিকায় আমাদের চেয়ে উপরে অবস্থান করছে। কিন্তু তথ্য উপাত্ত বলছে- বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল। পরবর্তীতে আইলা-সিডরে হাজারো মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। একই সাথে বিরূপ জলবায়ুর প্রভাবে নদীভাঙনে কৃষিজমি এবং বাড়িঘর বিলুপ্তির ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক। ফসলের ক্ষতির কথা না হয় বাদই দেয়া গেল।
বাস্তবতা হলো- জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এবং ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হওয়ার কথা; কিন্তু যথোপযুক্ত তথ্য-উপাত্ত সংশ্লিষ্ট দফতরে উপস্থাপনের অভাবে ঝুঁকির শীর্ষে থাকার পরও সাত নম্বরে অবস্থান করতে হচ্ছে আমাদের। ফলে ঝুঁকি বিবেচনায় আন্তর্জাতিক যে ফান্ড পাওয়ার কথা তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি আমরা।
যে সব তালিকায় বাংলাদেশকে সাত নম্বরে দীর্ঘমেয়াদি ‘ক্লাইমেট ভালনারেবল কান্ট্রি হিসেবে রাখা হয়েছে, সেখানে আমাদের আগের ছয়টি রাষ্ট্রের তথ্য যদি বিশ্লেষণ করা হয়; তাহলে দেখা যাবে এসব রাষ্ট্রের মোট লোকসংখ্যা বাংলাদেশের একটি জেলার সমান বা কম। সে ক্ষেত্রে কোনোভাবে লোকসংখ্যার দিক বিবেচনায় বাংলাদেশের চেয়ে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ কোনো দেশের মানুষ আছে বলে মনে করার কারণ নেই। তাই আগামী দিনে যাতে ভালনারেবল ইনডেক্স তৈরির সময় বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যাকে বিবেচনায় নিয়ে তৈরি করা হয়, সে লক্ষ্যে আমাদের নীতিনির্ধারকরা, গবেষকদের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক ফোরামে অবদান রাখতে হবে। তাই আজ রোববার থেকে শুরু হওয়া এবারের কপ-২৭ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সরকারি কর্তাকর্তারা এ বিষয়ে যথাযথ তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরবেন বলে সবার প্রত্যাশা।
যদিও এবার জলবায়ু সম্মেলনের ৩০ বছর পূর্ণ হচ্ছে, এত দিনে বৈশ্বিক পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু হয়নি; বরং পরিস্থিতির আরো অবনতি হচ্ছে। এটি বিশ্ব নেতৃত্বের ব্যর্থতা। এমন প্রেক্ষাপটে আজ রোববার মিসরের শারম-আল-শেখে শুরু হচ্ছে জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৭। এই সম্মেলন চলবে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত। বাংলাদেশও এ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিপূরণ বাবদ সৃষ্ট তহবিলে অর্থ না দিতে চলতি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ একটি অজুহাত হিসেবে এ সম্মেলনে দেখাতে পারে উন্নত বিশ্ব। কিন্তু এ বিষয়ে বাংলাদেশের মতো ক্ষতিগ্রস্ত সব দেশকে সোচ্চার হতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনে বিপদাপন্ন দেশের ফোরামভুক্ত সব দেশকে সোচ্চার থাকতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কঠোর হয়ে দমন করতে চাই না : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা শরণখোলা প্রেসক্লাবের নির্বাচনে আলী সভাপতি-আনোয়ার সম্পাদক রিমান্ড শেষে কামরুল-জ্যাকবকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ সংবিধানে যেসব সংস্কার প্রস্তাব দিলো বিএনপি যমুনা রেল সেতু উদ্বোধন জানুয়ারিতে, ট্রায়াল ট্রেনের যাত্রা শুরু চিন্ময়ের মুক্তি নিয়ে বাংলাদেশের সাথে আলোচনা করতে ভারতকে অনুরোধ ইসকনের শেখ হাসিনাসহ ৪৪ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে হেফাজতের অভিযোগ চিন্ময় কৃষ্ণের জামিন নামঞ্জুর আশুলিয়ায় মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকদের বিক্ষোভ বিদেশী শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ফেরার পরামর্শ মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মোংলায় নারীকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ

সকল