ক্ষমতার দাপটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেই
- ৩১ অক্টোবর ২০২২, ০০:০৫
ক্ষমতার দাপটে বাংলাদেশে শুধু রাজনৈতিক বিরোধীরা কোণঠাসা কিংবা অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এমন নয়। বহু সাধারণ মানুষও মোটাদাগে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। টেন্ডার দখল, টার্মিনাল দখল, সরকারি জমি দখল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দখল- এগুলো মামুলি বিষয়। বিচার বিভাগের কাছে প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ থেকেও মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে অহরহ। বহু মানুষ অধিকার পাচ্ছেন না। অনেকে খুন জখমের শিকার হয়ে চুপ থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেক নিরীহ নারী ধর্ষণসহ নানা নির্দয় আচরণের শিকার হয়ে মুখ বুজে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। গত শনিবার এমনই একজন অধিকারবঞ্চিত নারী উপায়ান্তর না দেখে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সপরিবারে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান।
সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে সারা দেশে পরিচিতি পাওয়া নারায়ণগঞ্জের এই নিরীহ নারীর আত্মাহুতির চেষ্টা তার জন্য প্রতিকার এনে দিতে পারে কি না সন্দেহ। তবে ঘটনাটি সারা দেশে আরো অভিভাবকহীন যেসব পরিবার রয়েছে তাদের কাউকে কাউকে আত্মঘাতের পথে ঠেলে দেয় কি না সে আশঙ্কার সৃষ্টি করছে। জানা যায়, সোনারগাঁ থানার শারমিন ওরফে শিরিন আট বছর আগে বাড়ি করে সেখানে বসবাস করছিলেন। ওই সময় এই জমির ওপর কেউ দাবি জানায়নি। হঠাৎ করে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা হান্নান তাকে বাড়ি ছাড়তে চাপ দেন। তার বিরুদ্ধে মামলা করে হুমকি ধমকি দিতে থাকেন। সর্বশেষ গত দুই মাস আগে সন্তানসহ তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন।
আমাদের প্রশাসন ও সামাজিকব্যবস্থা কতটা নিষ্ঠুর ঘটনাটি তার জ্বলন্ত উদাহরণ। প্রতিকার পেতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ঘুরেছেন শারমিন। কোথাও সাড়া পাননি। সামান্য মানবিক বোধসম্পন্ন একটি সমাজে এমন ঘটনা ঘটলে প্রতিকার পাওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কাছে যাওয়ার আগে মিডিয়ায় তা নিয়ে হইচই হওয়ার কথা। নির্দয় ঘটনাটির দুই মাস হয়ে গেলেও কোনো সাড়া শব্দ নেই। দেখা যাচ্ছে, উৎখাত হওয়া নিরীহ নারীর খবর মিডিয়াও প্রকাশ করছে না বা করতে পারছে না। শেষ পর্যন্ত তিনি তিন শিশুসন্তানকে নিয়ে প্রেস ক্লাবে এসে আত্মহনন করে জাতির বধির কানে আওয়াজ দিতে চেয়েছেন। তিনি জানান, ক্ষমতাসীনদের হুমকিতে তার স্বামী আগেই পালিয়ে গেছেন। তার কিশোরী মেয়েটি মাথায় গুরুতর অসুস্থতায় ভুগছে।
ঘটনাটি সামাজিকভাবে ফায়সালা হতে না পারার কারণ বুঝতে অসুবিধা হয়নি। সরকারি দলের ক্ষমতাসীন লোকদের বিরুদ্ধে কথা বলা ঝুঁকিপূর্ণ। এই পর্যায়ে প্রশাসনের নীরবতা না ভাবিয়ে পারে না। স্থানীয় পুলিশ বলছে, মামলা হওয়ায় বিষয়টি এখন আদালতের বিচার্য। প্রশ্ন হচ্ছে, একটি বিবদমান বিষয়ে গৃহবাসীকে কিভাবে উৎখাত করা যায়। আদালত এখনো রায় দেননি স্থানীয় ওই প্রভাবশালীর পক্ষে। এ অবস্থায় পুলিশ এই নারীর পরিবারকে বাড়িতে নিরাপদে থাকার ব্যবস্থা কেন করেনি। এই নারী ও তার শিশুসন্তানের আত্মহনন চেষ্টার আগে চেতনানাশক সেবন করেন। এর দ্বারা তারা সম্ভবত পুড়ে মরার কষ্ট কমাতে চেয়েছিলেন। সৌভাগ্য হচ্ছে, তারা প্রাণে মরেননি। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সরকার এ অসহায় পরিবারের চিকিৎসায় হাত বাড়াবে এমনটাই মানবিক।
ক্ষমতার অপব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা না নেয়ায় সমাজে অরাজকতা বেড়েছে। এক শ্রেণীর মানুষ ক্ষমতাসীন দলের আশ্রয়ে অন্যের বাড়িঘর-জমিজমা দখলের সুযোগ নেয়। হবিগঞ্জের একটি ঘটনায় দেখা গেছে, স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা সংখ্যালঘুর বাড়ি দখল করেছেন। এমন ঘটনা সর্বত্রই ঘটছে। ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছেন। এর মূল কারণ, বিচার ও প্রশাসন থেকে দলীয় লোকদের ছায়া দেয়ার প্রবণতা। নারায়ণগঞ্জের এই নিরীহ নারীর আত্মাহুতি প্রচেষ্টার ঘটনা নিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার। যতক্ষণ না প্রমাণ হচ্ছে বাড়িটি আওয়ামী লীগের হান্নানের নয়, ততক্ষণ পর্যন্ত বাড়িতে সন্তান নিয়ে তাকে নিরাপদে থাকার ব্যবস্থা করুন। অন্য দিকে, এ ঘটনায় হান্নানের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রমাণ মিললে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা