২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ঢাকা ওয়াসায় প্রকল্পের নামে অর্থ লোপাট

অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেই

-

রাষ্ট্রের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান নিয়ে প্রতিনিয়ত দুর্নীতি অনিয়ম লুটপাটের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে সরকারি নিযুক্ত কর্তাব্যক্তিরা সেবা দেয়ার মানসিকতা বাদ দিয়ে নিজেদের সুযোগ-সুবিধার দিকে বেশি নজর দিচ্ছেন। কিছু ক্ষেত্রে তাদের লিপ্সা এতটা বেড়েছে, প্রকল্প প্রণয়ন করা হচ্ছে প্রধানত নিজেদের উদরপূর্তি করতে। নির্বাহী কর্মকর্তারা এ জন্য নিজেদের নিয়ন্ত্রণে একটি চক্রও গড়ে তুলেছেন। ওই চক্রের বিষয়ে কেউ কিছু বলতে সেভাবে সাহস পায় না। এভাবে বেশির ভাগ সরকারি প্রতিষ্ঠান চলে গেছে অসাধু শ্রেণীর আয়ত্তে। ঢাকা ওয়াসার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দাপট ও অনিয়ম নিয়ে দীর্ঘ দিন আলোচনা হচ্ছে। এবার সহযোগী একটি পত্রিকার খবরে জানা যাচ্ছে- প্রকল্পের নাম করে প্রতিষ্ঠানটি থেকে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি লোপাট করা হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের এক অনুসন্ধানে এই দুর্নীতির খবর পাওয়া গেছে। সংস্থাটির কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যাচ্ছে, চারটি প্রকল্প থেকে তিন হাজার ১৫০ কোটি টাকা গায়েব করে দেয়া হয়েছে। পদ্মা যশলদিয়া নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে ঢাকা ওয়াসা। এতে ব্যয় করা হয়েছে তিন হাজার ৬৭০ কোটি টাকারও বেশি। প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা ছিল পদ্মা থেকে ৪৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা। এ প্রকল্প থেকে সর্বোচ্চ পানি সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে ২৫ কোটি লিটার। এ প্রকল্প থেকে লোপাট করা হয়েছে এক হাজার ১০০ কোটি টাকা।
দ্বিতীয় প্রকল্পটি দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার নির্মাণ। তিন হাজার ৭১২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ব্যয় সম্পন্ন হওয়া প্রকল্পে দেখা গেল পয়ঃবর্জ্য সংগ্রহের কোনো পাইপলাইন তৈরি হয়নি। নতুন করে সংযোগ লাইন স্থাপন না হওয়া পর্যন্ত এ প্রকল্প থেকে পয়ঃশোধনের কাজ হবে না। এ প্রকল্প থেকে লোপাট হয়েছে এক হাজার কোটি টাকা। গন্ধবপুর ও গুলশান-বারিধারা পানি শোধনাগার প্রকল্প থেকে এক হাজার ৫০ কোটি টাকা লোপাট হওয়ার তথ্য পেয়েছে দুদকের অনুসন্ধানী দল। এগুলো ছাড়াও প্রতিবেদনে ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতির মাধ্যমে জালিয়াতি করে অর্থ আত্মসাতের তথ্য দিয়েছে। একটি পকেট কমিটি করে সমিতির ঠিকাদারি বিল বাবদ হাতিয়ে নেয়া হয়েছে প্রায় ৪২ কোটি টাকা। এ কাজ করতে গিয়ে অনিয়ম দুর্নীতি ও বড় ধরনের গোঁজামিলের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে অর্থ লোপাটের আরো কয়েকটি ঘটনা উল্লেøখ করা হয়েছে।
এ ছাড়াও দুর্নীতি-অনিয়ম, লোপাট ও দুর্বল সেবার জন্য ঢাকা ওয়াসার বিরুদ্ধে মানুষের অসন্তোষের অন্ত না থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির প্রধান পদটি ১৩ বছর ধরে আঁকড়ে ধরে আছেন তাকসিম এ খান। প্রতিবেদনে এসেছে- তার নিয়োগ দেয়া বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা সিন্ডিকেট করে ওয়াসাকে দুর্নীতিবাজদের আখড়া বানিয়েছেন। এ সময়ে দুর্নীতির সাথে পাল্লøা দিয়ে দফায় দফায় পানির দাম বাড়ানো হয়েছে। একই ধরনের অব্যবস্থা দেখা গেছে চট্টগ্রাম ও খুলনার ওয়াসায়ও। সেখানে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা দাপট দেখাচ্ছেন; কিন্তু পরিষেবা দিচ্ছেন না। গ্রাহকরা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছেন অনিয়ম-দুর্নীতিতে ভোগান্তি হচ্ছে তাদের। দুর্ভাগ্য হচ্ছে- এর বিরুদ্ধে ন্যূনতম কোনো ব্যবস্থা নেই। তাহলে কি আমরা ধরে নেব, সেবাদানকারী ওয়াসা পরিষেবা দেয়ার পরিবর্তে সরকারের পছন্দের একদল লোকের বিধিবহির্র্ভূত সুযোগ-সুবিধা গ্রহণে ব্যবহার হচ্ছে? কারণ দায়িত্বশীল প্রত্যেকটি ব্যক্তির বেতনভাতা ও সুবিধাদি কয়েকগুণ বাড়ানো হয়েছে। অথচ তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের একটিও তদন্ত করেনি সরকার।
বাংলাদেশে সেবাদানকারী বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের অবস্থা এখন একই রকম। একদল লোক সেগুলো লুটেপুটে খাচ্ছে। এভাবে বছরের পর বছর চলতে পারে না। এ বাড়াবাড়ির অবসান করতে হবে। বিশেষ করে উত্থাপিত সুনির্দিষ্ট অভিযোগগুলো তদন্ত করতে হবে। কারো দোষ পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সৎ ও যোগ্য লোকদের দায়িত্বে আনতে হবে। যাতে করে মানুষ প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে উপযুক্ত সেবা পেতে পারে।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল