বাস্তবায়ন হয়নি ক্ষতিপূরণ আইন
- ২৩ অক্টোবর ২০২২, ০০:০৫
আমাদের দেশে প্রতি বছর বহু মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত হলেও নিরাপদ সড়ক গড়ে তুলতে উল্লেøখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এ কারণে সড়কে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। পাশাপাশি হাজার হাজার মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। সড়ক দুর্ঘটনার কারণে দেশের বিপুলসংখ্যক পরিবার আর্থিক দিক দিয়ে অসহায় হয়ে পড়ছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ধুঁকে ধুঁকে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে।
সরকারি হিসাব উল্লেøখ করে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানিয়েছে- দেশে প্রতি বছর সড়কে প্রায় আট হাজার মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে ১৭ বছরের কম বয়সী শিশু ১২ সহস্রাধিক। সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের ৬৭ শতাংশের বয়স ১৫-৬৪ বছর। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুঝুঁকিতে ১৫-৪৯ বছর বয়সীরা। ফি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ৮০ হাজার মানুষ পঙ্গুত্ববরণ করছেন। এ হিসাবে শুধু সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে ২২০ জন মানুষ পঙ্গুত্ববরণ করছেন।
এ দিকে গত শুক্রবার সড়ক নিরাপত্তা-বিষয়ক এক সংলাপে জানানো হয়, গত এক বছরে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে প্রতিদিন ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর গত ১০ বছরে সড়কে প্রতিদিন গড়ে মারা গেছেন ১৪ জন। অন্য দিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য মতে, প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশে ২৪ হাজার ৯৫৪ জন নিহত হন।
ডব্লিউএইচওর তথ্য থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনাজনিত কারণে জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) ক্ষতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের হিসাবে সড়ক দুর্ঘটনায় একজন কর্মক্ষম ব্যক্তি প্রাণ হারালে ২৪ লাখ ৬২ হাজার ১০৬ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়। সেই হিসাবে প্রত্যেক নিহত ব্যক্তির পরিবার এ পরিমাণ অর্থ রাষ্ট্র থেকে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকারী।
যদিও সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এ সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের আর্থিক সহায়তা তহবিল থেকে নিহত ব্যক্তির পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা ও আহত ব্যক্তিকে তিন লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিধান রয়েছে; কিন্তু আইন কার্যকরের তিন বছরের মাথায় এ ক্ষতিপূরণ দেয়ার কার্যক্রম আজো শুরু হয়নি। অথচ বাস্তবতার আলোকে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের আর্থিক সহায়তা কার্যক্রম চালু জরুরি ভিত্তিতে করা উচিত ছিল।
দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ও ক্ষতি কমাতে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল সক্রিয় করা একান্তভাবে কর্তব্য। কিন্তু তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না কেন; সে সম্পর্কে সরকারি তরফের কোনো বক্তব্য নেই। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বিআরটিএর দায়িত্ব হলো- আগে ভালোভাবে প্রশিক্ষণ নেয়ার পরই গাড়ি চালানোর লাইসেন্স দেয়া উচিত। তবে এ কথাও সত্য, ডোপ টেস্টের নামে চালকরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সার্টিফিকেট দেয়ার নামে তাদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হচ্ছে।
সড়ক দুর্ঘটনাগুলো আমাদের হাতে তৈরি। তাই এগুলোকে দুর্ঘটনা বলা যায় না। এটি ক্র্যাশ। চালক প্রশিক্ষিত ও দক্ষ না হলে সড়কে দুর্ঘটনা আরো বাড়বে, এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায়। সে জন্য প্রয়োজন কিভাবে চালকদের দক্ষ বানানো যায় সেই কর্মসূচি হাতে নেয়া। শুধু দক্ষই নয়, চালকদের নিরাপদও বানাতে হবে যেন যেকোনো পরিস্থিতি তারা সামাল দিতে পারেন।
আমরা মনে করি, গাড়ির ফিটনেস প্রক্রিয়া ও চালককে লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে বিআরটিএ যতœবান হলে দেশে অনেকাংশে সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসবে। এ ছাড়া প্রণীত সড়ক আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ করা হলে চালকরা শাস্তির ভয়ে সতর্ক হয়ে গাড়ি চালাবেন। এতে করে সড়কে দুর্ঘটনা কমে আসবে। একই সাথে সড়কে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ও আহত ব্যক্তিকে আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের অর্থ দেয়া হলে তাদের আর্থিক দিকের খানিকটা বিহিত হয়। তাই জরুরি ভিত্তিতে সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়া ও জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল সক্রিয় করার পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা