আগে কারণ দূর করতে হবে
- ১৯ অক্টোবর ২০২২, ০০:০৫
সারা দেশে চলছে ইলিশ ধরার ব্যাপারে ২২ দিনের কঠোর নিষেধাজ্ঞা। এর মধ্যে দেশের জেলেদের একাংশের বাধ্য হয়ে বেপরোয়া আচরণের খবর দিয়েছেন ঢাকার একটি সহযোগী দৈনিকের প্রতিনিধি। জানা গেছে, এ নিষেধাজ্ঞার ফলে ইলিশ ধরা, পরিবহন, কেনাবেচা, মজুদ ও বিনিময় বন্ধ ঘোষিত হয়েছে। ইলিশের গুণগতমান এতে বাড়লেও সাড়ে পাঁচ লাখ নিবন্ধিত জেলে এর ফলে কর্মহীন বা বেকার। এখন সরকার তাদের খাদ্যসহায়তা করলেও এর বণ্টনে স্বচ্ছতার অভাব আর পরিমাণ কম হওয়ার কারণে নিষেধাজ্ঞা না মেনেই মৎস্যজীবীরা ইলিশ ধরছেন। ফলে পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সাথে তাদের সংঘর্ষ হচ্ছে। কোনো কোনো স্থানে তারা হামলা করছেন অভিযানে নামা বাহিনীসহ কর্মকর্তাদের ওপর।
দক্ষিণবঙ্গের বরিশালের হিজলা উপজেলায় মা ইলিশ রক্ষা করতে গিয়ে হামলার শিকার হলেন সংশ্লিষ্ট মৎস্য কর্মকর্তা এবং পুলিশসহ ২০ জন। এমনকি তখন তাদের পেটানো হয়েছে বাঁশ দিয়ে। গত শুক্রবার ভোরে হিজলার গৌরনদী ইউনিয়নের মেঘনা নদীতে এটি ঘটেছে। ১৬ জন পুলিশ নিয়ে ২০ জনের একটি টিম মেঘনায় মৎস্য সংরক্ষণ অভিযানে গিয়েছিল। তারা অন্য দিনের মতো গভীর রাতে ট্রলার ও স্পিডবোট নিয়ে এই কাজে অবতীর্ণ হন। ভোরে ইলিশ আহরণরত জেলেদের কাছে যাওয়ামাত্র হামলার মুখে পড়েন। জেলেদের ট্রলারের বাঁশ দিয়ে তাদের ওপর হামলা করা হয়। তখন আগের মৎস্যজীবীদের সাথে তাদের আরো অনেকে হামলায় যোগ দিতে ছুটে আসেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ফাঁকা গুলি করে। ইতোমধ্যে অভিযান টিমের ২০ জনের সবাই আহত হন। মাথায় আঘাতে গুরুতর আহত হয়েছেন পুলিশ সদস্য মাহফুজ। তবে সিনিয়র এক মৎস্য কর্মকর্তা দাবি করেছেন, সে সময় ধাওয়া করে হামলাকারী ৯ জনকে আটক করা হয়েছে। অন্যদের ধরার প্রয়াস চলছে।
প্রায় একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে শরীয়তপুরের জাজিরা এলাকায়। ওই অভিযানে প্রায় সময়ই হামলা চলে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, মৎস্য কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী পদ্মা ও মেঘনার নানা জায়গায় বারবার হামলার কবলে পড়ছেন। এসব হামলায় খোদ ইউএনও এবং পুলিশসহ ছয়জন আহত হন। উল্লেখ্য, ইলিশ শিকার থেকে বিরত রাখার জন্য প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ সেখানে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে।
শরীয়তপুর জেলা মৎস্য বিভাগ জানায়, এখন ইলিশ মাছের প্রজনন মৌসুম বিধায় ৭ থেকে শুরু করে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২২ দিন এ জেলায় পদ্মা ও মেঘনার ৭১ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকাজুড়ে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। তবুও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এবং এ নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে এসব নদীতে নিয়মিত অনেকে মাছ ধরছেন। ফলে নিয়মিত সরকারি বিভিন্ন বাহিনীর হাতে আটক হয়ে জেল-জরিমানা হচ্ছে অনেকেরই। মাত্র গত এক সপ্তাহে শরীয়তপুর জেলায় বড় দুই নদীতে অভিযান চালিয়ে ১২৭ জেলেকে নানা মেয়াদে কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের হাতে এ ছাড়াও জব্দ হয়েছে ২০ লাখ মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল ও ৭৮০ কেজি মা ইলিশ মাছ। আর ৯ অক্টোবর স্থানীয় মাঝিরঘাটে জেলেরা জাজিরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ওপর হামলা করেন। পুলিশ তখন জেলেদের ওপর ৯ রাউন্ড গুলি চালায়। এ দিকে মৎস্যজীবীদের ইটের আঘাতে আহত হন ইউএনও কামরুল হাসান। পরদিন গোসাইর হাটে মেঘনায় অভিযানকালে তারা আবার জেলেদের হামলার শিকার হলেন। সে দিন শতাধিক জেলে নৌকা নিয়ে মৎস্য শিকারবিরোধী অভিযানের টিমের ওপর লাঠিসোটাসহ হামলা চালিয়েছেন। এতে আহত হন উপজেলা কৃষি অফিসার এবং পুলিশের একজন এসআইসহ পাঁচজন। একই রাতে ১৮ জনকে ধরে আদালতে জেল দেয়া হয়েছে। জাজিরার ইউএনও বলেন, জেলেরা একযোগে হামলা করেছেন আমাদের নৌকা ও স্পিডবোটে। তাদের আটক করা হলে তারা আরো আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন। অনেকে আটকদের ছাড়িয়ে নিতে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ বাধান। এখন নিয়মিত তাদের সচেতন করে তোলা হচ্ছে যেন রাতে কেউ ইলিশ না ধরেন। জেলার কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘জেলার ২৫ হাজার নিবন্ধিত মৎস্যজীবীর ১৯ হাজারকে ২৫ কেজি চাল দেয়া হচ্ছে খাদ্যসহায়তারূপে। এবার ইলিশ বেশি থাকায় লোভে পড়ে জেলেরা নদীতে নেমে সংঘর্ষে আটক হচ্ছেন। আইন না মানলে সরকার কঠোর হবেই।’
মৎস্যজীবীদের অসন্তোষের কারণ আগে দূর করার দাবি জানাই আমরা। না হয়, এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবেই।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা