ঢাবি প্রশাসনের ঘুম ভাঙবে কবে
- ০৯ অক্টোবর ২০২২, ০০:০৫
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ছাত্রলীগ বিরোধী মত মোটেও সহ্য করতে পারছে না। তাদের অসহিষ্ণুতা এবং বেপরোয়া কর্মকাণ্ড এত বেড়েছে যে, কোনো ছাত্র সংগঠনই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সহ বড় বড় কলেজে নিজেদের কর্মসূচি বাধাহীনভাবে পালন করতে পারছে না। বলা ভালো, পালন করতে দেয়া হচ্ছে না। অবস্থা এতটাই সঙ্গিন যে, ছাত্রলীগ ছাড়া আর কারো যেন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো কর্মসূচি পালনের অধিকার বা এখতিয়ার নেই।
বাস্তবে ছাত্রলীগ সারা দেশের শিক্ষাঙ্গনগুলোতে একচেটিয়া দখলদারিত্ব কায়েম করেছে। তা ধরে রাখতে যেকোনো কর্মকাণ্ড করতে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা পিছপা হচ্ছেন না। এ জন্য কোনো সংগঠনের কার্যক্রম বরদাশত করছে না। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং পুলিশ একযোগে ছাত্রলীগকে সহযোগিতায় নেমেছে বললে ভুল বলা হবে না। বিশেষ করে দেশের প্রধান বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ছাত্র সংগঠনের যেন প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ। ছাত্রলীগের এমন মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে বারবার। অতিসম্প্রতি ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঢাবি ভিসির সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে নির্মমভাবে সংগঠনটির নেতাকর্মীকে পেটানো হয়; যা ছিল নজিরবিহীন। অবাক করা বিষয় হলো- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ওই ঘটনায় নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখতে পারেনি। ঠিক, এমন আরেকটি অগ্রহণযোগ্য কাণ্ড ফের ঘটালো ছাত্রলীগ।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার তৃতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক স্মরণসভায় হামলা চালিয়ে পণ্ড করে দিয়েছে ছাত্রলীগ। এতে রিকশাচালক ও ছাত্রলীগের চারজনসহ আয়োজক সংগঠনের কমপক্ষে ১৬ জন আহত হন। গত শুক্রবার ওই স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। নয়া দিগন্তসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার রায়ে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের ২০ নেতাকর্মীর মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।
সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, আবরার হত্যার তৃতীয় বার্ষিকীর নির্ধারিত কর্মসূচি সফল করতে রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হন আয়োজক সংগঠন ‘আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের’ নেতাকর্মীরা। তবে কর্মসূচি শুরু হওয়ার আগেই ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী গিয়ে বাধা দেন। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে বাগি¦তণ্ডা হয়। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বেধড়ক মারধর শুরু করেন। হামলার সময় আক্রমণকারীদের অনেকের মাথায় হেলমেট, হাতে কাঠ, লাঠি, বাঁশসহ অবস্থান করতে দেখা যায়।
ছাত্রলীগ যে কত বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এর নমুনা হলো- ঘটনা ঘটিয়েই ক্ষান্ত হননি। আহতদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগে নেয়া হলে সেখানেও উপস্থিত হন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় তাদের হাসপাতালের দরজায় মুহুর্মুহু আঘাত করতে দেখা যায়। তারা ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে হাসপাতালের নিরাপত্তা রক্ষীরা তাদের অনুরোধ করে বাইরে বের করে গেট লাগিয়ে দেন। হাসপাতালের বাইরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিলে ভেতরে আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের নেতাকর্মীরা আটকা পড়েন। ওই পরিস্থিতিতে মেডিক্যালের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। রোগী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছাড়িয়ে পড়ে।
গুরুতর বিষয় হচ্ছে, হামলাকারীদের বদলে মারধরের শিকার ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ আক্রান্ত নেতাকর্মীদের আটক করেছে পুলিশ। আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নগ্নভাবে যে ছাত্রলীগকে মদদ গিচ্ছে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রক্টরের বক্তব্যে তা স্পষ্ট। এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, একটি দল ক্যাম্পাসে সবসময় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। অনুমতি না নিয়ে প্রোগ্রাম করলে যেকোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সেটার দায় তাদের নিজেদের নিতে হবে।’
আইন মেনে যেকোনো কর্মসূচি পালন করা রাষ্ট্রের সব নাগরিকের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার। এতে কেউ বাধা দিতে পারে না। সঙ্গত কারণে ছাত্রলীগের এমন বেআইনি কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে ঢাবি প্রশাসনকে অবশ্যই পক্ষপাতহীন হতে হবে। আর পুলিশকে দলীয় রাজনৈতি কর্মীর আচরণ পরিহার করে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সদস্য হিসেবে যে শপথ নিয়েছে সেটি রক্ষা করতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা