বাসযোগ্য থাকছে না ঢাকা
- ০৪ অক্টোবর ২০২২, ০০:০৫
দীর্ঘ ও অসহনীয় হয়ে উঠেছে রাজধানীর যানজট পরিস্থিতি। পরিবেশ দূষণ, বায়ুদূষণ, নাগরিক পরিষেবার করুণ অবস্থার সাথে এখন ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে সার্বিক ব্যর্থতায় প্রাচীন এই নগরী বসবাসের পুরোপুরি অযোগ্য হয়ে পড়তে যাচ্ছে কি না- এমন প্রশ্ন উঠে আসছে। গত রোববার ভয়াবহ যানজটের কবলে পড়ে রাজধানী। রাজধানীর উত্তরা-বিমানবন্দর সড়কে স্থবির হয়ে যায় যানবাহন চলাচল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটের চাপ পড়ে পুরো নগরে। চরম ভোগান্তিতে পড়ে মানুষ। রাতের বৃষ্টির কারণে রাস্তায় এবং বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) কর্তৃপক্ষের খোঁড়াখুঁড়ির গর্তে পানি জমে গিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে এ অবস্থা। পরে মেশিন দিয়ে রাস্তার পানি সেচে দীর্ঘ প্রায় ছয় ঘণ্টা পর যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের বিমানবন্দর-গাজীপুর অংশে প্রায় এক যুগ ধরে চলা বিআরটি প্রকল্পের ধীরগতির কারণে এ রুটে হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন চরম ভোগান্তির শিকার হয়। বৃষ্টির দিনে পানি জমে যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে। আর শুকনো দিনে বায়ুদূষণে নাকাল হয় মানুষ। বছরের পর বছর ধরে ঢিমেতালে কাজ করায় মানুষের ভোগান্তি অসহনীয় হয়ে উঠলেও এ নিয়ে মুখ খোলার উপায় নেই। উন্নয়ন কাজের বিরোধিতা মানে তো দেশদ্রোহিতাই!
দেশে যানচলাচলে ন্যূনতম শৃঙ্খলা কখনো ছিল না। এমনকি ট্রাফিক সিগন্যালের মতো প্রাথমিক নাগরিক ব্যবস্থাও আমরা চালু করতে পারিনি। সুষ্ঠু যান চলাচলের জন্য যতটুকু সড়ক থাকা জরুরি সেটুকু তৈরি করা যায়নি, বিলুপ্ত খালগুলো উদ্ধার করে বিকল্প রুট তৈরি করা যায়নি। পরিকল্পিত নগরায়নের জন্য বিশেষজ্ঞরা যেসব সুপারিশ করেন সেগুলো উপেক্ষিত থেকে গেছে। শুধু সম্প্রতি নগরীর সৌন্দর্যের উপকরণ হয়ে বড় বড় ফ্লাইওভার মাথা তুলেছে সরকারের আগ্রহে। কিন্তু তাতে আসল কাজ হয়নি। ক্ষেত্রবিশেষে যানজট বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন প্রতিদিনই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে যানজট।
সাম্প্রতিক গবেষণার তথ্য বলছে, ২০২২ সালে ঢাকার সড়কে প্রতিদিন ৮০ লাখের বেশি কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে, যা ২০১৭ সালে ছিল দিনে ৫০ লাখ। যানজটে বিনষ্ট হওয়া প্রতিদিনের কর্মঘণ্টার আর্থিক মূল্য প্রায় ১৪০ কোটি টাকা। শুধু মানুষের ভোগান্তি আর কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে তাই নয়, ক্ষতি হচ্ছে জিডিপি এবং মাথাপিছু আয়েরও। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা বলছে, শুধু রাজধানীর যানজটেই বছরে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ২ দশমিক ৯ শতাংশ। অর্থমূল্যে যা লাখ কোটি টাকার সমান।
যানজটের এই ক্ষতি শুধু রাজধানী বা চট্টগ্রামের মতো বড় শহরে নয়, ছোট ছোট শহরেও এখন প্রকট হয়ে উঠছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও নিবন্ধনহীন যানবাহনের কারণে যানজট ক্রমেই জটিল আকার ধারণ করছে। সুষ্ঠু নগর পরিকল্পনার অভাব ঢাকা শহরকে বসবাসের অনুপযোগী করে ফেলছে। ১৯৭৪ সালে যেখানে ঢাকার জনসংখ্যা ছিল মাত্র ২০ লাখ সেই ঢাকায় এখন বাস করে প্রায় দুই কোটি মানুষ। অথচ আশপাশের দেশগুলোর রাজধানীর জনসংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার তুলনায় নিতান্তই সামান্য। চীনের বৃহত্তম সাংহাই শহরে দেশের জনসংখ্যার মাত্র ১ দশমিক ৮ শতাংশ বাস করে। ভারতের প্রধান শহরে জনসংখ্যার ২ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় ৪ শতাংশ, পাকিস্তানে ৮ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ভিয়েতনামে ৮ দশমিক ১ শতাংশ বাস করে। অথচ বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১১ দশমিক ২ শতাংশই বাস করে ঢাকায়। মানুষ যেসব সুবিধার জন্য ঢাকায় থাকতে চায় সেসব সুবিধা আমরা ঢাকার বাইরে সম্প্রসারণ করতে পারিনি। এমনকি আশপাশের জেলাগুলোর সাথে সহজ যাতায়াত অবকাঠামোও আমাদের নেই। ফলে ঢাকা এক ঘিঞ্জি বসতিতে পরিণত হয়েছে এবং এই নগরী তার জনসংখ্যার বিপুল চাপ নিতে পারছে না। এ বিষয়ে ভাবার মতো সময় সুযোগ আমাদের সরকারের হাতে মনে হয় কমই আছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা