সুশাসনের বিকল্প নেই
- ০৩ অক্টোবর ২০২২, ০০:০৫
ব্যাংক খাত যেকোনো দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। এ খাতের দুর্বলতা পুরো অর্থনীতির জন্য অশনিসঙ্কেত। আমাদের ব্যাংক খাত দীর্ঘ দিন ধরে দুর্বল। অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক বা গোষ্ঠীস্বার্থের অনুকূলে কার্যক্রম পরিচালনার মতো বিভিন্ন কারণে এ খাত এখন ধুঁকছে। স্বাভাবিক পরিণতি হিসেবে অর্থনীতিতে সঙ্কট ঘনিয়ে আসতে শুরু করেছে।
নয়া দিগন্তের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে ব্যাংক খাতে মন্দার চিত্র উঠে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য-উপাত্ত উল্লেখ করে ব্যাংক খাতে লেনদেনে বিদ্যমান মন্দাবস্থার বিস্তারিত প্রকাশ করেছে দৈনিকটি। রিপোর্টে বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, দেশের অর্থনীতি ও ব্যাংক খাতে বড় ধরনের মন্দা দেখা দেয়ার আগে এ মন্দার এমন প্রবণতা দেখা যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ই-ব্যাংকিং ও ই-কমার্সের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছর জুলাই মাসে এমআইসিআর ও নন-এমআইসিআর চেকের লেনদেনের অঙ্ক কমেছে ২৭.৬০ শতাংশ। লেনদেনের সংখ্যা কমেছে ২৮.৩৮ শতাংশ। একই সময়ে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারে (ইএফটি) ব্যাংক লেনদেন ১০.৭৬ শতাংশ কমেছে। রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্টে (আরটিজিএস) লেনদেন হ্রাস পেয়েছে ২৩.৭০ শতাংশ। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরেও লেনদেনে একই অবনতিশীল প্রবণতা দেখা গেছে এবং তা অব্যাহত রয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে।
বিশেষায়িত ধরনের ব্যাংক হিসাবেও জুলাই মাসে লেনদেন জুনের চেয়ে কমেছে। কৃষক, হতদরিদ্র, সামাজিক নিরাপত্তা ও অন্যান্য বিশেষ ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের অঙ্ক আগের মাসের তুলনায় কমেছে ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ব্যাংক খাতে এমন মন্দাবস্থা হঠাৎ দেখা দিয়েছে বিষয়টি এমন নয়। গত এক যুগের বেশি সময় ধরে দুর্নীতি, অনিয়ম, রাজনৈতিক বিবেচনা ইত্যাদি খাতটিকে গ্রাস করেছে।
ব্যাংক খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১০টি দুর্বল ব্যাংক চিহ্নিত করে সেগুলোর ওপর তদারকি কায়েম করে। এর আগেও বিভিন্ন সময় কয়েকটি ব্যাংক তদারকির আওতায় নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে তেমন কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ যে ব্যাংকগুলোয় তদারকি করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার মধ্যে রয়েছে- বেসরকারি খাতের পদ্মা, ন্যাশনাল ও এক্সিম ব্যাংক। আর রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা, সোনালী, রূপালী, অগ্রণী, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক।
চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশ কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) অনুসন্ধানে ব্যাংক খাতে হাজার হাজার কোটি টাকার অনিয়ম ও দুর্নীতি ধরা পড়ে। সিএজির প্রতিবেদনে বলা হয়, একশ্রেণীর দুর্বৃত্ত নানা কৌশলে ব্যাংক থেকে বিপুল অর্থ তুলে নিয়েছে। ঋণ নিয়ে খেলাপি হওয়া, খাস জমি মর্টগেজ রেখে ঋণ নেয়া, ব্যাংকের সাথে যোগসাজশে যাচাই-বাছাই ছাড়া অযোগ্য এমনকি অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নমে ঋণ নেয়া হয়েছে। আছে জালিয়াতি, প্রতারণার মতো ঘটনাও। ব্যাংক খাতের এসব অনিয়ম সাধারণ মানুষ করেনি। করেছে প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা।
বর্তমানে যেসব কারণে অর্থনীতিতে সঙ্কট বিরাজ করছে, তার মধ্যে অন্যতম খেলাপি ঋণ। খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া তো দূরের কথা; বরং খেলাপিদের নানাভাবে অবাঞ্ছিত সুবিধা দেয়া হয়েছে, যা দুর্বৃত্তদের লুটপাটে উৎসাহিত করেছে।
কার্যত ব্যাংক খাতে সুশাসন দূরের কথা, ন্যূনতম কোনো শাসন আছে বলে মনে হয় না। দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা অব্যবস্থাই এ খাতে এবং সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। মূলত সুশাসনের কোনো বিকল্প নেই। এখনো সতর্ক না হলে হয়তো ধস নামবে। তখন সামাল দেয়া কঠিনতর হতে পারে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা