কৃষক ও ব্যবসায়ীদের দেখবে কে?
- ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০৫
আলু উৎপাদনে বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম বলে পরিচিত জয়পুরহাট জেলা; কিন্তু পাইকারির চেয়ে এবার আলু দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। এ জেলার কোল্ড স্টোরেজগুলোতে আলু প্রকারভেদে অর্থাৎ কেজি ১৬-১৭ টাকায় বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে এর দর ৩২-৩৪ টাকা অর্থাৎ প্রায় দ্বিগুণ। সাধারণ ক্রেতারা বেশি দামে আলু কিনে ক্ষতির শিকার। অথচ ভারী হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেট। আর আলু রেখে মোটা অঙ্কের লোকসান দিচ্ছেন ব্যবসায়ী, হিমাগারমালিক আর কৃষকরা। পাইকারি বাজারে আলুর মূল্য ও চাহিদা কম থাকায় এ অবস্থা। নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদনে এ তথ্যগুলো রয়েছে। এটি পাঠিয়েছেন এই পত্রিকার জয়পুরহাট প্রতিনিধি।
মৌসুমের প্রথমে ভালো দাম পেয়ে আলু বিক্রি না করে বেশি লাভের প্রত্যাশায় হিমাগারে আলু রেখে বিপাকে পড়েছেন প্রধানত ব্যবসায়ী ও কৃষকরা। দর পড়ে যাওয়ায় হিমাগারে আলুর এই ভরা মৌসুমেও কৃষক ও ব্যবসায়ী খুব কমই যাচ্ছেন। গতবার এ সময়ে হিমাগারে যত আলু ছিল, এ বছর আলু তার কয়েকগুণ বেশি সংরক্ষিত রয়েছে। বাজারে সব পণ্যের দাম অনেক বাড়লেও আলুর দর বাড়েনি। ফলে আলু সংরক্ষণ ভাড়া আর আলু ক্রয়কালে ব্যবসায়ীদের ঋণ আদায় করতে না পেরে হিমাগারমালিকরা এখন বিপাকে। চাষি, ব্যবসায়ী ও হিমাগারের স্বত্বাধিকারীরা জানান, গতবার অনুকূল আবহাওয়ায় এ জেলায় আলু ফলন ছিল ভালো। ফলে ভালো দাম থাকায় এবার পয়লা মৌসুমে না বেচে হিমাগারে আলুর অনেক বেশি রাখা হয়েছে। এতে কোল্ড স্টোরেজ বা হিমাগার ব্যয়সমেত ৬৫ কেজির বস্তায় আলুর জন্য ব্যয়ের পরিমাণ এক হাজার ২৫০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা। বর্তমান বাজারে আলু প্রতি বস্তা এক হাজার টাকার কিছু বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ফলে গড়ে বস্তাপ্রতি লোকসান প্রায় ২৫০ টাকার মতো। বাজারে আলুর যে দাম তাতে আরো মোটা অঙ্কের লোকসান গুনতে হবে। সাথে আলু কিনতে দেয়া ব্যবসায়ীদের ঋণের অর্থ আর হিমাগার বা কোল্ড স্টোরেজে আলু রাখার ভাড়ার টাকা উঠাতে বড় বেকায়দায় সংশ্লিষ্ট হিমাগারমালিকরা। এ অবস্থায় লোকসান ঠেকাতে রফতানি ছাড়া উপায় নেই। জয়পুরহাট হাটবাজার ও হিমাগারে সরেজমিন দেখা গেছে, ৬৫ কেজি ওজনের কার্ডিনাল (লাল) জাতের আলু প্রত্যেক বস্তা এক হাজার ১০ টাকা; ডায়মন্ড (সাদা) জাতের আলু প্রতি বস্তা এক হাজার ৬০ টাকা; দেশী পাকরি (লাল) জাতের আলু প্রতি বস্তা এক হাজার ১৫০ টাকা এবং রুমাদা (পাকরি) জাতের আলু প্রতি বস্তা এক হাজার ১০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। একটি হিমাগারের ম্যানেজার বলেছেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সারা দেশে সব জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এর বিপরীতে, আলুর দাম দিন দিন পড়ছে। এ জন্য লোকসান দিতে হচ্ছে চাষি ও ব্যবসায়ীদের সাথে হিমাগারমালিকদেরও। বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে এ লোকসান বাড়বে।’
জয়পুরহাট কৃষি বিভাগ জানায়, গত বছর ভালো দাম পেয়ে আলু চাষের প্রতি কৃষকের আগ্রহ বেড়ে যায়। ফলে তাদের সাথে ব্যবসায়ীরাও বাণিজ্যিকভিত্তিতে আলুর চাষ করেছেন। তারা মৌসুমের শুরুতেই হিমাগারমালিকদের থেকে ঋণ নিয়ে লাভের প্রত্যাশায় এ জেলায় ২০টি হিমাগারে অনেকে আলু রেখেছেন। তখন আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ২৫৩ বস্তা। এ আলু উত্তোলন করতে হবে আগামী ১৫ নভেম্বরের আগে। এবার হিমাগারে ১৭ লাখ ৫১ হাজার ১৫৩ বস্তা আলু এখনো আছে। অথচ গতবারের চেয়ে অর্ধেক আলু বিক্রি হয়েছে।
ক্ষেতলালের জনৈক ব্যবসায়ী জানান, ‘গতবার আলু কারবারে লাভ হয়েছিল। তাই এবার ঋণ নিয়ে দেশী পাকরি জাতের (লাল) সাড়ে তিন হাজার বস্তা আলু এবং স্টিক লাল জাতের ১১ হাজার বস্তা কয়েকটি হিমাগারে রেখেছেন। বাজারদরে বিক্রি করা হলে ৩৮ লাখ টাকা ক্ষতি হবে। কালাই উপজেলার এক কৃষকের কথা, ‘আলু নিয়ে বড় বিপদে রয়েছি। আলু না বেচে হিমাগারে সংরক্ষিত রাখার খেসারত দিতে হচ্ছে।’ কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে, ‘আলুর দর পড়ে যাওয়ায় সবাই উদ্বিগ্ন। রফতানির জন্য আমরা কয়েক প্রতিষ্ঠানের সাথে বারবার আলোচনা করছি।’ কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রক্রিয়াকরণ ও নানামুখী ব্যবহার করা গেলে আলুর দরপতন ঠেকানো সম্ভব বলে তারা মনে করেন।
আলুচাষি এবং হিমাগারমালিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য আমরা আবেদন জানাচ্ছি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা