২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠন

আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিন

-

বাংলাদেশে একসময় উচ্চশিক্ষার সুযোগ সীমিত থাকায় অবস্থাপন্ন পরিবারের শিক্ষার্থীরা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারলে বিদেশে, বিশেষ করে পাশের দেশ ভারতে পাড়ি জমাতেন। এ প্রবণতা রুখতে দেশে বেসরকারি খাতে উচ্চশিক্ষার যাত্রা শুরু হয় ১৯৯২ সালে। সে ধারাবাহিকতায় বর্তমানে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০৮টি।
লক্ষণীয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর শিক্ষার্থীদের বিদেশে পড়তে যাওয়ার হার অনেক কমেছে। এ কথা সত্য যে, আমাদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ছাড়া বাকিগুলোর পড়ালেখার মান তলানিতে। বেসরকারি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে সনদবাণিজ্যের অভিযোগও আছে। অথচ ইউরোপ-আমেরিকার বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগই গড়ে উঠেছে বেসরকারি পর্যায়ে।
আমাদের দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালের বেশির ভাগ গড়ে উঠেছে মূলত বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে। এখানে শিক্ষা খাত সেবামূলক হয়ে ওঠেনি। এর ওপর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় নানা আইন করা হয়েছে। যাতে যেকোনো সময় যেকোনো প্রতিষ্ঠানে হস্তক্ষেপ করা যায়। এতে আর্থিক খাত যেমন- ব্যাংক-বীমার মতো এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড ভেঙে প্রকৃত উদ্যোক্তাদের সরিয়ে দিয়ে সরকার নিজেদের পছন্দের লোক বসিয়ে নিয়ন্ত্রণে নিচ্ছে। সম্প্রতি দেশের নামী দু’টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ-সাউথ এবং মানারাতের ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠনের নামে এমনটাই করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই এমনকি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে সম্প্রতি ওই দু’টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড নতুন করে গঠন করা হয়েছে। এ দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড ভেঙে দেয়ার কারণ অস্পষ্ট। ওই প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সূত্রের বরাতে জানানো হয়, পুনর্গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডে কারা থাকবেন, এ বিষয়ে ইউজিসির কোনো পরামর্শ বা মতামত নেয়নি সরকার। বিষয়গুলো নিয়ে ইউজিসিকে অন্ধকারে রাখা হয়েছে। ইউজিসি নতুন এ ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের বিষয়ে কিছুই জানে না।
ট্রাস্টি বোর্ড ভেঙে দেয়ার ব্যাপারে গড়পড়তায় শুধু এতটুকু বলা হয়েছে, সরকারের বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষ তদন্তে দেখা যায়, অভিযুক্ত দু’টি প্রতিষ্ঠানের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগে সেখানে নতুন করে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠান দু’টির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মালিক সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেছেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তা আগে প্রকাশ করা হোক। তারপর অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়েও যদি কোনো সদুত্তর না আসে তাহলে ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠনের প্রশ্ন আসতে পারে। এখন যা করা হচ্ছে এটি নেহাতই চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্ত। এমনটি করা ঠিক হবে না। কারণ তাতে অন্যরা (প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টিরা) আতঙ্কিত বোধ করবেন।
দেশের শিক্ষা খাতের সংশ্লিষ্টদের মতো আমরাও মনে করি, যে প্রক্রিয়ায় নর্থ-সাউথ এবং মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়েছে, তাতে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টিরা আতঙ্ক বোধ করবেন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া বর্তমান ট্রাস্টিদের বাদ দেয়া উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে হবে। এতে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে। খ্যাতিমান শিক্ষাবিদরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হতে আগ্রহ হারাবেন। একই সাথে ভালো মানের কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় নতুন করে কেউ আগ্রহবোধ করবেন না। পরিণতিতে দেশের বেসরকারি শিক্ষা খাত দুর্বলই থেকে যাবে। তাই শুধু শিক্ষা খাত নয়, সরকারকে সব খাতে সঙ্কীর্ণ গোষ্ঠীস্বার্থ পরিত্যাগ করে সার্বজনীন নীতি অবলম্বন করতে হবে। কারণ, বিভাজনের নীতি দিয়ে আর যাই হোক, কোনো কল্যাণ বয়ে আসে না।


আরো সংবাদ



premium cement