কূটনৈতিক ও গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়াতে হবে
- ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০৫
মিয়ানমারে জাতিগত নির্মূল অভিযানের কারণে ২০১৭ সালে সে দেশের বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা নাগরিক পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি ফেলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার ভরণপোষণ, আবাসন ও নিরাপত্তা নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ পেরেশানিতে রয়েছে। এখন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডে দুই দেশের সীমান্ত অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। দেশটির নিক্ষিপ্ত মর্টার শেলের আঘাতে সীমান্তে হতাহতের ঘটনাও ঘটছে, যা আমাদের জন্য চরম উদ্বেগের।
সীমান্তে মিয়ানমারের উসকানিমূলক আচরণে সৃষ্ট আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা রুখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ। গত মঙ্গলবার ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের ডেকে সীমান্তে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সম্পর্কে ব্রিফ করা হয়েছে। এর আগে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের ব্রিফ করা হয়। ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন, সীমান্তে উত্তেজনার বিষয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে কয়েক দফা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। মিয়ানমারের গোলা যাতে বাংলাদেশে এসে না পড়ে সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। মিয়ানমারের ওপর প্রভাব খাটাতে আসিয়ান রাষ্ট্রদূতদেরও অনুরোধ করা হয়েছে।
এ দিকে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টিতে আরাকান আর্মি ও আরসাকে দায়ী করে মিয়ানমার। বাংলাদেশে আরাকান আর্মি ও আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) ঘাঁটি থাকার অভিযোগ এনেছে মিয়ানমার। মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত সোমবার সে দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে জানায়, গত ১৬ সেপ্টেম্বর আরাকান আর্মি ও আরসা মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের বিপি-৩১ আউটপোস্টে মর্টার হামলা চালায়। এর মধ্যে তিনটি মর্টার শেল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গিয়ে পড়ে। ১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর আরাকান আর্মি ও আরসা বর্ডার গার্ড পুলিশের বিপি-৩৪ আউটপোস্টে মর্টার হামলা চালালে ৯টি শেল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পড়ে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে আন্তরিক সম্পর্কের মধ্যে ফাটল ধরাতে আরাকান আর্মি ও আরসা ইচ্ছাকৃতভাবে এ ধরনের হামলা চালাচ্ছে। কিন্তু আরাকান আর্মি ১৭ সেপ্টেম্বর এক বিবৃতিতে জানায়, রাজনৈতিক, সামরিকসহ সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়ে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী মরিয়া হয়ে সেনা সংখ্যা বাড়াচ্ছে। একই সাথে দেশের বিভিন্ন স্থানে মর্টার শেল নিক্ষেপ ও বোমাবর্ষণ করছে। সামরিক বাহিনীর এ আক্রমণে বিশেষ করে সীমান্ত এলাকার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কঠিন পরিস্থিতিতে দিন কাটাচ্ছে। ১৬ সেপ্টেম্বর এ ধরনের একটি মর্টার হামলায় বাংলাদেশের বান্দরবানের ঘুমধুম এলাকায় ১৭ বছরের এক তরুণ নিহত ও পাঁচজন আহত হন।
মিয়ানমারের দাবি যে সর্বৈব অসত্য তা বুঝতে কোনো অসুবিধা হয় না। দেশটির পশ্চিমে বাংলাদেশের অবস্থান, আর ওই দু’টি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর একটি আরাকান আর্মি মিয়ানমারের দক্ষিণে তৎপর। আরাকান আর্মির গোলা কোনোভাবেই বাংলাদেশে আসার কথা নয়। এতে বোঝা যায়, বাংলাদেশকে ইচ্ছা করে সঙ্ঘাতে জড়ানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে মিয়ানমার।
মিয়ানমারের এমন বৈরী আচরণের পরও বাংলাদেশ ধৈর্য রক্ষা করছে। ঢাকা এমন কিছু করেনি যে, মিয়ানমারের গোলা এসে বাংলাদেশের জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ব্যাহত করবে। সীমান্তে বসবাসকারীরা বাইরে যেতে পারছেন না, ক্ষেত-খামারে কাজ করতে যেতে পারছেন না, ঘরবাড়িতে থাকতে পারছেন না।
এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান, কোনো ধরনের সঙ্ঘাতে না জড়ানো। সঙ্ঘাতে জড়ালে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের না নেয়ার বিষয়ে একটি অজুহাত পাবে। সে রকম কোনো অজুহাত মিয়ানমারকে এ মুহূর্তে দিতে চায় না ঢাকা। এর জন্য প্রয়োজন মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চাপ সৃষ্টি করা। একই সাথে প্রকৃত পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত হতে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সর্বোচ্চ তৎপর থাকা।
আমরা মনে করি, মিয়ানমার যাতে এ অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদারের বিকল্প নেই।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা