অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেই
- ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০৫
ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন শেষ পর্যন্ত অন্যায় অপকর্ম করার সাইনবোর্ড হয়ে উঠছে। হেন কোনো প্রতারণা নেই যা এই ছাত্র সংগঠনটির পদ-পদবি ব্যবহার করে করা হচ্ছে না। সম্প্রতি রাজশাহী ছাত্রলীগ সভাপতির একটি অডিও ফাঁস হয়েছে। ফোনের অপরপ্রান্তে থাকা এক তরুণীকে তিনি বলছেন, ‘বড় চিটারি-বাটপাড়ি করে ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েছি’। হুমকি দিয়ে এটি জানানোর অর্থ- মেয়েটি সময়মতো তার ডাকে হাজির হয়নি। তার কথায় যৌন কেলেঙ্কারির ইঙ্গিত রয়েছে। চুরি, ডাকাতি, অপহরণ, ধর্ষণ, টর্চার শেলে নির্যাতন, সিট বাণিজ্য করার খবর সারা দেশ থেকে প্রতিদিন সংগঠনটির সদস্যদের বিরুদ্ধে পাওয়া যাচ্ছে। ভাগবাঁটোয়ারা ও পদ-পদবি প্রাপ্তির দ্বন্দ্বে প্রায়ই রক্ত ঝরানোর পাশাপাশি তারা ক্ষতি করছে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার পরিবেশের। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ক’দিন পরপরই শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দিচ্ছে ছাত্রলীগ।
চবি ছাত্রলীগের কমিটির পরিধি বাড়ানোর দাবিতে অব্যাহত নানা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পর এবার তারা বিশ্ববিদ্যালয়টি অবরোধ করেছে। সোমবার থেকে তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ ডাকে। প্রথম দিন শহর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়মুখী নিজস্ব যানবাহন বন্ধ করে দেয়। বিকল্প উপায়ে অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছানোর চেষ্টা করলেও সেখানে বাধা সৃষ্টি করে। তারা মূল ফটকে তালা লাগিয়ে দেয়। ফটকের পাশ দিয়ে ছোট গেট দিয়ে প্রবেশ করতে গেলে বাধা দিয়ে হেনস্তা করেছে পিকেটাররা। প্রথম দিন এ জন্য বিভিন্ন বিভাগের ১১টি পরীক্ষা বাতিল হয়ে যায়। বিঘœ ঘটে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তিপরীক্ষা ও কিছু বিভাগের মৌখিক পরীক্ষায়।
এভাবে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দিচ্ছে ছাত্রলীগ নামধারী কিছু ব্যক্তি তাদের স্থূল স্বার্থ উদ্ধারের জন্য। জানা যায়, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দলটির মোট ১৫১ সদস্যের কমিটি থাকার কথা। সেখানে চার শতাধিক সদস্যসম্বলিত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরপরও তাদের সবাইকে সন্তুষ্ট করা যায়নি। এদের বড় একটি অংশ পদ না পেয়ে নিজেদের বঞ্চিত মনে করছে। গঠিত কমিটির একটি অংশও তাদের সাথে একমত পোষণ করেছে। তারা আশ্বাস দিচ্ছে, কমিটিতে আরো অনেককে স্থান দেয়া হবে। কথিত বঞ্চিতরা মনে করছে- শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে সবার ক্ষতি করে তারা ঊর্ধ্বতনদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে দাবি আদায় করবে। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, একটি বিশ্ববিদ্যালয় এ বিপুল সংখ্যক ছাত্রনেতার কাজ কী? চাঁদবাজি, ছাত্র নির্যাতন ও ইভটিজিংসহ অসংখ্য অভিযোগ ক্যাম্পাসে থাকা দলটির বিভিন্ন সদস্যের বিরুদ্ধে।
ছাত্রলীগ এভাবে চবিতে একাডেমিক কার্যক্রমের ক্ষতিসাধন করে গেলেও ভিসিসহ কর্তৃপক্ষ নির্বিকার। তিনি অবরোধকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজন মনে করছেন না। অন্য দিকে, ঊর্ধ্বতন শিক্ষা কর্তৃপক্ষ ও সরকারি দলও এ অনাহূত ক্ষতিসাধনের বিরুদ্ধে কিছু বলতে রাজি নয়। ছাত্রলীগের আজ ভয়াবহ পতনের অন্যতম কারণ- ছাড় দেয়ার এই নীতি। একই কারণে স্বার্থান্বেষী ও দুষ্কৃৃতকারীরা এর সদস্যপদ গ্রহণ করতে বেপরোয়া। একবার এই সাইনবোর্ড গায়ে চড়াতে পারলে তার ‘সাতখুন মাফ’। সারা দেশ থেকে এত অভিযোগ আসছে কিন্তু এদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেই। যখন প্রশাসন সরকারি ছাত্র সংগঠনের পরিচয় জানতে পারে, তখন আইনগত ব্যবস্থা নেয় না। অন্য দিকে, সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে- অর্থের বিনিময়ে তারা পদবি বিক্রি করে। সুতরাং অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে শীর্ষ নেতৃত্বের কোনো ব্যবস্থা নেয়ার কথা চিন্তাও করা যায় না।
সরকারি ছাত্র সংগঠনটিকে আরো পচে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে হলে সরকারকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। এ সংগঠনটির আশ্রয়ে যারা অন্যায় করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। তা হলে দুষ্কৃতকারীরা এ সংগঠনটিতে প্রবেশে আগ্রহ হারাবে। অন্য দিকে, ছাত্র সংগঠনটিও তার হারানো ভাবমর্যাদা ফিরে পাওয়ার পথ পেতে পারে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা