২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
নানামুখী সঙ্কটে নেমেছে দুর্দিন

মৃৎশিল্পীদের দিকে কে তাকাবে?

-

একটি সহযোগী দৈনিকের টাঙ্গাইল সংবাদদাতা জানান, জেলার মৃৎশিল্পীদের নানা সঙ্কটে দুর্দিন চলছে। অনেকেই এ পৈতৃক পেশা ত্যাগ করে চলে যাচ্ছেন। আধুনিকতার ছোঁয়ায় মাটির পণ্যের বাজার দখল করে নিয়েছে প্রধানত চীনামাটি, মেলামাইন ও প্লাস্টিকের পণ্যসামগ্রী। করোনা মহামারীর প্রভাবে এ পেশায় জড়িতরা আরো বেশি বিপাকে পড়েছেন। ব্যবসায়ে তীব্র মন্দায় পরিবারের ব্যয় মেটাতেই হিমশিম খেতে হয় টাঙ্গাইলের মৃৎশিল্পীদের।
তারা বলছেন, এ শিল্প টিকিয়ে রাখার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার পৃষ্ঠপোষকতা নেই। নেই সরকারি ঋণের ব্যবস্থা। পর্যাপ্ত পুঁজির অভাবে অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। আর যারা পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে মৃৎশিল্পের পেশায় থেকে যাচ্ছেন তাদের দুর্ভোগের অন্ত নেই। এ জেলায় অতীতে মানুষের তৈজসের চাহিদা পূরণ করত মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিল, কলসি, থালা বা সানকি, কুয়ার পট, খেলনা, পিঠার খরমা বা সাজ প্রভৃতি। এগুলোর ছিল ব্যাপক ব্যবহার। তাই মেলা ও বাজারে মাটির তৈরি এসব পণ্যই শোভা পেত। এসব তৈজসপত্র স্বাস্থ্যসম্মত ও সুস্বাদু পণ্যের আধার। উৎকৃষ্ট হলেও আজকাল বেশি ব্যবহার হয় অ্যালুমিনিয়াম, প্লাস্টিক ও মেলামাইন সামগ্রী। গ্রামের নানান উৎসব ও হাটবাজারে, প্রাকৃতিক উপাদানের মৃৎশিল্পের বদলে কৃত্রিম জিনিসপত্র জায়গা করে নিয়েছে।
স্থানীয় বিসিক জানায়, কুমার পরিবার টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় ১৫৮টি, বাসাইলে ১১৫টি, নাগরপুরে ১০৭টি, মির্জাপুরে প্রায় ১০০টি, দেলদুয়ারে ৬৫টি, ঘাটাইলে ৬০টি, ভূঞাপুরে ২২০টি, কালিহাতীতে ২৮০টি, গোপালপুরে ১১২টি, ধনবাড়ীতে ১০টি ও মধুপুর উপজেলায় ৯টি রয়েছে। টাঙ্গাইল জেলায় সর্বমোট এক হাজার ২৩৫টি কুম্ভকার পরিবার থাকলেও অনেকেই আর এই পেশায় নেই এখন।
সরেজমিন দেখা যায়, শিল্পীরা সুনিপুণ হাতে তৈরি করছেন পুতুল, ফুলের টব, কুয়ার পট, হাঁড়ি, খেলনা, শোপিস প্রভৃতি। এসব পণ্যসামগ্রী শহরে দোকান ও বাসাবাড়িতে বিক্রি হয়। বর্তমানকালে সামাজিকতায় মৃৎশিল্পের কদর তেমন নেই। সৌখিন জিনিস ও কুয়ার পট তৈরি করাই মৃৎশিল্পীদের ভরসা। তারা জানিয়েছেন, আজও মাটির ব্যাংক, পুতুল, ঘোড়া, ফুলদানি, গরুর গাড়ি ইত্যাদির চাহিদা অনেক। গ্রামীণ মেলার দর্শকরা বলেছেন, এ জেলার মৃৎশিল্পীরা পণ্যের পসরা সাজিয়ে মেলার আকর্ষণ বাড়িয়ে থাকেন। তবে বর্তমানে হাতেগোনা কিছু মৃৎশিল্পীই আছেন। কাঠও মাটির স্থান অনেকটা দখল করে নিয়েছে। অথচ অতীতে মেলাগুলোর আকর্ষণ ছিল বিভিন্ন প্রকার মৃৎশিল্প। এখন আর সে ব্যবস্থা নেই। তাই যৎসামান্য তৈজসপত্র কুমাররা মেলায় আনেন। তারা বলেছেন, মাটির তৈজসপত্র একদা গৃহস্থালির প্রধান উপকরণ ছিল। এমনিতেই তাদের বছরে তিন-চার মাস বেকার থাকতে হয়। তদুপরি নানা কারণে ভবিষ্যৎ ফিকে হয়ে এসেছে। বিসিকের দাবি, সরকার নানাভাবে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে মৃৎশিল্পে। প্রশিক্ষণ ও ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে সহযোগিতা করা হয় শোপিস তৈরি করা হলে।
সরকার দেশের মৃৎশিল্পের সম্ভাবনা বিকশিত করতে সাধ্যমতো সহায়তা দেবে বলে আমরা আশা করি।


আরো সংবাদ



premium cement