দরকার নীতিগত বড় পরিবর্তন
- ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০
মিয়ানমারের ঔদ্ধত্য দিন দিন লাগামহীন হয়ে যাচ্ছে। দেশটির ছোড়া মর্টারের আঘাতে এবার এক কিশোর প্রাণ হারিয়েছে। দফায় দফায় রোহিঙ্গাদের দেশছাড়া করে বাংলাদেশে পাঠানোর পর এবার নতুন করে আক্রমণাত্মক ভূমিকায় নেমেছে। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে কোনো আগ্রহ দেখানো দূরে থাক, পাল্টা আগ্রাসন চালাচ্ছে। এমন অসুস্থ ও অস্বাভাবিক অবস্থার মোকাবেলা কিভাবে করতে হবে তা নিয়ে আমারা যেন দোলাচলে ভুগছি। যদিও প্রসঙ্গটি জাতিসঙ্ঘে নিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেøখ করেছেন আমাদের এক মন্ত্রী। তবে এটা প্রতীয়মান যে, প্রতিবেশীর এমন শত্রুতার মোকাবেলায় আমাদের না আছে প্রস্তুতি, না আছে বন্ধু রাষ্ট্রের সাহায্য সমর্থন পাওয়ার কার্যকর চেষ্টা।
গত শুক্রবার তমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় মিয়ানমারের দিক থেকে বিক্ষিপ্ত মর্টার শেল পড়তে শুরু করে। রাত ৮টায় সেখানে রোহিঙ্গা শিবিরের কাছে একটি মর্টার বিস্ফোরিত হয়। এতে ছয় রোহিঙ্গা আহত হন। পরে আহতদের একজন মারা যান, আরেক শিশুর অবস্থা গুরুতর। জানা যায়, গোলাটি এমন জায়গায় পড়েছে যেখানে বসতি কম। এটি একটু ভেতরে পড়লে হতাহতের সংখ্যা বাড়ত। এর আগে ৯ সেপ্টেম্বর সীমান্তের ওপার থেকে ছোড়া গুলি তমব্রু বাজারের পাশে এক কৃষকের আঙিনায় এসে পড়ে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির অভ্যন্তরে চলা সামরিক কর্মকাণ্ড সন্ত্রস্ত করছে সীমান্তের বাংলাদেশী জনপদ। প্রায়ই গোলাগুলির উচ্চশব্দে সীমান্তবাসী আতঙ্কিত হয়ে উঠছেন। সীমান্তবর্তী ফসলের মাঠে যেতে পারছেন না কৃষক। রয়েছে দেশটির সামরিক হেলিকপ্টারের সীমানা লঙ্ঘন। রোহিঙ্গা বিতাড়নের উত্তেজনার মধ্যে বহুবার এমন সীমানা লঙ্ঘন মিয়ানমার করেছে। তার উপর রয়েছে মাইন আতঙ্ক। সীমান্ত অতিক্রম করতে গিয়ে বহু রোহিঙ্গার অঙ্গহানি হয়েছে। শুক্রবার মর্টার আঘাত হানার আগে বেলা ৩টায় তমব্রু সীমান্তের বিপরীতে শূন্যরেখায় গরু আনতে গিয়ে মাইন বিস্ফোরণে এক তরুণের গোড়ালি উড়ে যায়। এ মুহূর্তে সীমান্ত পরিস্থিতি নাজুক।
মিয়ানমার আমাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে চায়, না শত্রুতা- দেশটির আচরণে তা স্পষ্ট। প্রথমে রোহিঙ্গাদের বাঙালি বলে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে। তাদের ফিরিয়ে নিতে কোনো তাগিদ অনুভব করছে না। এ নিয়ে নেইপিডো যত অঙ্গীকার করেছে তা নিজেই মানেনি। এখন নতুন করে সীমান্তে আক্রমণাত্মক আচরণ করছে। ফলে দেশটির সাথে থাকা বাংলাদেশ সীমান্তের অধিবাসীরা শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন। ভবিষ্যতে কতটা স্বস্তিতে বসবাস করতে পারবেন তারা তা নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে।
মিয়ানমার আমাদের সাথে কী ধরনের নীতি গ্রহণ করেছে, তা অনুমান করা কষ্টকর নয়। অথচ দেশটির সাথে কী নীতি গ্রহণ করা উচিত আমাদের নীতিনির্ধারকরা দীর্ঘ দিনেও ঠিক করতে পারছেন না। রোহিঙ্গাদের ঠেলে দিয়ে মিয়ানমার যখন যুদ্ধংদেহী নীতি নেয়, তখন আমাদের সরকার সে দেশ থেকে চাল আমদানির দেনদরবার করেছে। এখনো বাণিজ্যিক সম্পর্ক উদারের চেষ্টা দেখা যায়। অথচ একই পণ্য আমরা অন্য দেশ থেকে সহজে কিনতে পারি। এ ক্ষেত্রে মনে রাখা আবশ্যক, যে ক্ষতি করছে; তার প্রতি উদারতা দেখালে, একে দুর্বলতা হিসেবে দেখা হয়। মিয়ানমারের এ আচরণে তার প্রতিফলন ঘটেছে বলে মনে হয়।
মিয়ানমার শাসন করছে স্বৈরাচারী সামরিক জান্ত। তারা আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্কা করে না। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একঘরে উত্তর কোরিয়ার সাথে নেইপিডোর রয়েছে সুসম্পর্ক। নিষেধাজ্ঞার চাপে থাকা রাশিয়া দেশটিকে অস্ত্রশস্ত্র ও নীতিগত সহায়তা দিয়ে সাহায্য করছে। ফলে জাতিসঙ্ঘ কিংবা গণতান্ত্রিক বিশ্বের নিয়ম থোড়াই কেয়ার করছে মিয়ানমার। এ অবস্থায় নেইপিডোর আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘ কতটুকু প্রতিকার এনে দিতে পারবে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। তাই এ মুহূর্তে মিয়ানমারকে বুঝিয়ে দিতে হবে, আগ্রাসী অগণতান্ত্রিক আচরণ বাংলাদেশ সহ্য করবে না। আমরা যদি নিজেরাই নেইপিডোর সমীহ আদায় করতে পারি, তাহলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও আমাদের পক্ষে সক্রিয় হবে। সঙ্গত কারণে ঢাকার উচিত মিয়ানমারের সাথে নীতিগত বড় ধরনের পরিবর্তন আনা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা