মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করুন
- ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০৫
সাধারণ নাগরিকদের সাদা পোশাকে গভীর রাতে তুলে নেয়ার ঘটনা আবারো ঘটছে। এক সপ্তাহের মধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে তিনজনকে নিরাপত্তা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এমন এক সময় এ ঘটনা ঘটছে যখন গুম নিয়ে দেশে-বিদেশে জোরালো প্রতিবাদ হচ্ছে। বিভিন্ন মহল থেকে চাপ আসছে নিখোঁজ নাগরিকদের নিয়ে তদন্ত ও ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে। এ বিষয়ে একটি স্বাধীন শক্তিশালী কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেছে জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কমিশন। এ কাজে সাহায্য করারও প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি। সরকার এখনো এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এই পরিস্থিতির মধ্যেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের কাজটি আবার শুরু হলো।
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এই মুহূর্তে দেশে সব রাজনৈতিক দল ও সচেতন পর্যবেক্ষকরা সক্রিয়। দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন ও একটি সুষ্ঠু পরিবেশ ফেরাতে এটি জরুরি। সাদা পোশাকে তুলে নেয়ার ঘটনাগুলো খেয়াল করলে এটি স্পষ্ট যে, নির্দিষ্ট লোকদেরই টার্গেট করে তুলে নেয়া হচ্ছে। ৯ সেপ্টেম্বর সিলেটের কুলাউড়া থেকে তুলে নেয়া হয় পাঁচবার ইউপি মেম্বার নির্বাচিত হওয়া উপজেলা বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল মুক্তাদির মনুকে। তার পাঁচ দিন পর তুলে নেয়া হয় সিলেট যুবদলের সেক্রেটারি মাকসুদকে। দু’টি অভিযানই চালানো হয় গভীর রাতে সাদা পোশাকে। মাকসুদের ক্ষেত্রে ২০-২৫ জন লোক বাড়ির গেট ভেঙে জোর করে তাকে নিয়ে যায়। একটি স্বাধীন দেশে একজন মানুষকে কেন বিনা ওয়ারেন্টে গভীর রাতে তুলে নেয়া হবে তা বোধগম্য নয়। হতে পারে এরা বিরোধী দলের সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগও থাকতে পারে। সে জন্য আইনি ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে। এমন গুমের ঘটনা আগেও ঘটেছে। পরে কারো কারো লাশ পাওয়া গেছে। অনেকে এখনো নিখোঁজ। জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কমিশন গুম হওয়া ৭৬ জনের তালিকা করেছে।
রাজধানীর রামপুরা থেকে ১১ সেপ্টেম্বর ডা: শাকির বিন ওয়ালিকে তুলে নেয়া হয় সিআইডির লোক পরিচয়ে। পুলিশ প্রশাসন তার ব্যাপারে কোনো খোঁজ দিতে পারেনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি বৈধ কর্তৃপক্ষ তুলে নেয়ার পর কেন সরকারের একটি সংস্থাও তার দায় নেবে না সেটিই রহস্য। ১৪ সেপ্টেম্বর সরকারের একটি সংস্থা ডা. শাকিরকে আদালতে হাজির করে। তার বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদের অভিযোগ আনা হয়। শাকিরের বাবা একজন স্বনামধন্য ডাক্তার। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ধর্মকর্ম করা দাড়ি রাখা কি জঙ্গিবাদ? শাকিরের বিরুদ্ধে অভিযোগকে তিনি মিথ্যাচার বলেছেন।
এর আগেও জঙ্গিবাদের অভিযোগে বহু মানুষকে দমন-পীড়ন করা হয়েছে, যার অনেকগুলো পরে ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়। এগুলোর পেছনে প্রায়ই ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার সম্পর্ক দেখা গেছে।
একটি স্বাধীন দেশে এভাবে যদি বিচারহীনতার সংস্কৃতি অবাধে চলতে থাকে তাহলে স্বাধীনতার মূল্য কী? জঙ্গিবাদ দমনের নামে একজন ব্যক্তিকে গুম করে ফেলা কোন আইন-বিধির মধ্যে পড়ে? সাদা পোশাকে তুলে নেয়ার ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের আট দফা সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। সেই নির্দেশনা লঙ্ঘন করা ক্ষমতাসীনদের কাছে কোনোভাবেই কাম্য নয়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা মানলে মানবাধিকার নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে অভিযোগ বা অনাকাক্সিক্ষত চাপ আসত না। আমরা মনে করি, এ ধরনের ঘটনার অবসান হওয়া উচিত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক শ্রেণীর কর্মকর্তা অতি উৎসাহী হয়ে এসব করছেন বলেও অভিযোগ আছে। দেশের, জনগণের ও ক্ষমতাসীনদের নিজের স্বার্থেই এগুলো বন্ধ করতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা