২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
চালের বাজার আবার অস্থির

শক্ত হাতে দুষ্টচক্র ভাঙুন

-

আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারসহ সরকারের নানা উদ্যোগে গত দুই সপ্তাহ ধরে কমতির দিকে ছিল চালের বাজার। মোটা চাল স্বর্ণার কেজি ৫৫ টাকা থেকে কমে ৫৩ টাকা হয়। অন্য দিকে, মাঝারি চালের মধ্যে পাইজাম ৫৮ থেকে কমে ৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ইরি-আটাশ চালের কেজি ৫৭-৫৮ টাকা। অন্য দিকে, মিনিকেটের কেজিতে কোথাও এক টাকা কমেছে। তা ছাড়া নাজিরশাইল ও মিনিকেটের দাম বেশির ভাগ দোকানে অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে গত বৃহস্পতিবার থেকে ভারত আতপ চাল রফতানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলে বাজার আবারো ঊর্ধ্বমুখী।
চালের বাজার ফের অস্থির হওয়া প্রসঙ্গে সচিবালয়ে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের এক সংলাপে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এ মুহূর্তে আউশের যে উৎপাদন, আমি গত ১০-২০ বছরে এমন উৎপাদন দেখিনি। সে জায়গা থেকে দাম বাড়া, আমি মনে করি অনুচিত।’
দীর্ঘদিন ধরে চালের বাজার চড়া। সপ্তাহখানেক আগে হঠাৎ বেড়ে যাওয়া চালের দাম কমতে শুরু করে। তবে রফতানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা দেয়ার অজুহাতে বাংলাদেশের বাজারে ফের অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে আবার সক্রিয় দুষ্টচক্র। শুধু এক ধরনের চাল রফতানিতে শুল্ক বাড়িয়েছে ভারত অথচ দেশে সব চালের দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে সরবরাহ বাড়িয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার শুল্ক ছাড় দিলেও সুফল মিলছে না। বেসরকারি আমদানি না বাড়ায় শুল্ক ছাড়ের প্রভাব পড়েনি বাজারে।
জাতিসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য মতে, চলতি বছর দেশে তিন কোটি ৮৪ লাখ টন চাল উৎপাদন হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি। গত বছর বাংলাদেশে চাল উৎপাদন হয় তিন কোটি ৭৮ লাখ টন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য মতে, দেশে এখন বছরে চালের চাহিদা তিন কোটি পাঁচ লাখ টনের মতো। অর্থাৎ চাহিদার চেয়ে চাল উদ্বৃত্ত থাকার কথা ৭০-৭৩ লাখ টন। অথচ প্রতি বছর ২৫-২৬ লাখ টন চাল আমদানি করতে হয় বাংলাদেশকে। সংশ্লিষ্টরা জানান, চাল উদ্বৃত্ত থাকার কথা।
খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে চলতি বছর বেসরকারি খাতের মাধ্যমে ১০ লাখ টন চাল কেনার অনুমতি দেয়া হয়েছে। আর সরকার নিজে ১০ লাখ ৩০ হাজার টন চাল ও গম চারটি দেশের সাথে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। অথচ গত ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে মাত্র ৯৩ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে। এতে আমদানি সুবিধার পরেও বাজারে আমদানি করা চালের সরবরাহ সেভাবে বাড়ছে না। সরকারি তথ্য বলছে, চলতি বোরো সংগ্রহ অভিযানে গত সোমবার পর্যন্ত ১৯ লাখ ৫০ হাজার ৫৩১ টন চাল সংগ্রহ হয়েছে।
সরকারি তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী এ মুহূর্তে দেশে চালের উদ্বৃত্ত থাকার কথা থাকলেও এই নিত্যপণ্যের দাম বাড়াচ্ছে কে? পাইকারি চাল ব্যবসায়ীদের দাবি, নানা অজুহাতে চালের দাম বাড়ানো হয়। এলসি থেকে শুরু করে দেশে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন ৮-১০টি মিল মালিক। তারাই মূলত চালের দাম বাড়ানোর বিষয়ে কলকাঠি নাড়ছেন। তবে মিল মালিকরা বলছেন, মিলগেটে নির্ধারিত দামের বেশি দরে চাল বিক্রি করা হয় না।
বাজার বিশ্লেষকদের মতো আমরাও মনে করি, চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং চলমান সঙ্কট দূর করতে সবার আগে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানিতে জোর দিতে হবে। কিভাবে এবং কোন দেশ থেকে দ্রুত চাল এনে দেশের বাজারে সরবরাহ বাড়ানো যায়, সে চেষ্টা করতে হবে। একই সাথে চালের বাজারে গড়ে ওঠা দুষ্টচক্র শক্ত হাতে ভাঙতে হবে। এ ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেয়া যাবে না।


আরো সংবাদ



premium cement