২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
সরকারি কাজে আর্থিক স্বচ্ছতার অভাব

এজন্য উৎসাহও নেই

-

সরকারের কর্মকাণ্ড পরিচালনায় আর্থিক অস্বচ্ছতা নতুন বিষয় নয়। তবে বিভিন্ন বিভাগে সরকারি কোষাগারের অর্থ ব্যয়ে শৃঙ্খলা কতটা লঙ্ঘন হচ্ছে; আর সরকারি সেবা নিতে গিয়ে জনসাধারণকে নিয়মের বাইরে কত বেশি খরচ করতে হচ্ছে সেটা আলোচনা হতে পারে। এ ব্যাপারে দুর্নীতি ও অনিয়মের চিত্র বরাবর ঊর্ধ্বমুখী। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে এটি সব ধরনের রেকর্ড ভঙ্গ করে। চামচ, চেয়ার, বালিশসহ তুচ্ছ কেনাকাটায় প্রথম মানুষ দেখতে পেল দুর্নীতিবাজরা লাখ টাকা খরচ করছেন। সরকারি কাজে দুর্নীতি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। অস্বাভাবিক হচ্ছে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করা। দেখা যাচ্ছে, খুব কম ক্ষেত্রে সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। ফলে দেশে সরকারি কাজে দুর্নীতির লাগাম টানা যাচ্ছে না।
সরকারি কর্মকাণ্ডের আর্থিক স্বচ্ছতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যুরো অব ইকোনমিক অ্যান্ড বিজনেস অ্যাফেয়ার্স প্রতি বছর প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ‘ফিসকাল ট্রান্সপারেন্সি-২০২২’ শিরোনামের সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, আর্থিক স্বচ্ছতার আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের ন্যূনতম শর্ত পূরণকারী দেশগুলোর তালিকায় ঠাঁই হয়নি বাংলাদেশের। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আয়-ব্যয়সহ বাজেটের ব্যাপারে পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যায় না। সরকারি আয়-ব্যয়ের নিরীক্ষায় বাস্তব চিত্র উঠে আসে না। কাজটি করে মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় (সিএজি)। তাদের মন্তব্য হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানটির স্বাধীনতা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের নয়। অন্য দিকে, প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের জন্য বিভিন্ন পক্ষের সাথে সরকারের কৃত চুক্তি ও নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নেই। এ ব্যাপারে প্রকৃত তথ্য-উপাত্ত জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয় না।


এবার ১৪১টি দেশ নিয়ে তারা প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এদের মধ্যে ৭২টি দেশের সরকার ন্যূনতম শর্ত পূরণ করেছে। বাকি ৬৯টি দেশ ন্যূনতম শর্ত পূরণ করতে পারেনি। আর্থিক স্বচ্ছতার ন্যূনতম মানদণ্ডে উন্নীত হওয়া দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো হলো ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা। আমরা রয়েছি পেছনের কাতারে থাকা দেশ পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও মালদ্বীপের সাথে। মিয়ানমারের সামরিক জান্তা শাসিত সরকারের অবস্থাও আমাদের মতো। তবে এবারের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থা আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আর্থিক অস্বচ্ছতা বা দুর্নীতি কমেছে বিষয়টা এমন নয়।
বাংলাদেশকে একটি সত্যিকার কল্যাণ রাষ্ট্র্রে রূপান্তর করতে হলে আর্থিক অস্বচ্ছতা দূর করতে হবে। বর্তমান সরকারের দীর্ঘ শাসনে সে ব্যাপারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে এখনো দেখা যায়নি। মাঠপর্যায়ে অনিয়ম দুর্নীতি তহবিল তছরুপ প্রতিরোধ করতে হলে আগে এ ব্যাপারে একটি নীতি গ্রহণ করতে হবে। প্রথমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সরকারের ভেতর থেকে কেউ দুর্নীতি করবে না। সরকার কাউকে এ ব্যাপারে প্রশ্রয়ও দেবে না। বাস্তবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে বেশ কয়েক বছর ধরে লুটপাটের আয়োজন করা হয়েছে। বহু আর্থিক প্রতিষ্ঠান ভেতর থেকে ফোকলা হয়ে গেছে। সরকারি অফিসে ঘুষ ও তহবিল তছরুপ মহামারী আকার ধারণ করেছে। অন্য দিকে, উন্নয়ন প্রকল্পগুলো একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার সহজ টার্গেটে পরিণত হয়েছে। এর ফলে মুদ্রা পাচার বহু গুণে বেড়ে গেছে।
এ অবস্থার পরিবর্তন আনতে হলে বড় ধরনের সংস্কার দরকার। ক্ষমতাসীন সরকারকে হতে হবে সাহসী ও আপসহীন। এখনো সরকারের মধ্যে এমন নীতি গ্রহণের সদিচ্ছা দেখা যাচ্ছে না। তবে আমরা আশা করব, সত্যিকার অর্থে সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করবে। সব ক্ষেত্রে আর্থিক স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement