জবাবদিহিতা নেই সরকারের
- ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০৫
বৈশ্বিক যুদ্ধাবস্থার মধ্যে খাদ্যশস্য উৎপাদন ও চলাচলে বিঘœœ ঘটায় এক ধরনের অস্থিরতা সৃৃষ্টি হয়। খাদ্য আমদানিকারক দেশগুলো এর পর্যাপ্ত জোগান নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। অনেক দেশ জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য আমদানি করে। আমাদের দেশেও কিছুটা বেকায়দায় পড়ার শঙ্কা দেখা দেয়। এ পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে সরকারের ভেতরের একটি অংশ নিজেদের কোনো ধরনের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ব্যবহার করছে কি না সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যের সরবরাহ অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে গেছে। চাল ও গমের দাম পড়তির দিকে, আভাস পাওয়া যাচ্ছে- সামনে দাম আরো কমে যাবে। এ অবস্থায় সরকার বড় বড় ক্রয়াদেশ দিচ্ছে চলতি বাজারের চেয়ে বেশি দামে।
খবরে জানা যাচ্ছে, সরকারি পর্যায়ে রাশিয়া থেকে গম আমদানি করতে যাচ্ছে। চুক্তি হচ্ছে সরকারের সাথে সরকারের। ২৪ আগস্ট সিদ্ধান্ত হয় রাশিয়ার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টন গম প্রতি টন ৪৩০ ডলারে কেনা হবে। চুক্তি সইয়ের ৪০ দিনের মাথায় প্রথম চালান দেশে আসবে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে চুক্তির পুরো অংশ দেশে আসবে। আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যের দাম এখন লুকানো বিষয় নয়। প্রতি সপ্তাহে চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে এটি খোলাবাজারে নির্ধারিত হয়। গম আমদানি করে বাংলাদেশের এমন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সূত্রে সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে রাশিয়ার রফতানিকারকরা প্রতি টন গম তাদের কাছে ৩৭০ ডলার চাচ্ছেন। এমন এক টন গম আমাদের দেশের বন্দরে পৌঁছাতে আরো ১০ ডলার খরচ হবে। বর্তমান বাজার মূল্যের হিসাবে সরকার প্রতি টন গম ৫০ ডলার বেশি দিয়ে কিনছে।
ভিয়েতনামের একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান থেকে অন্যান্য রফতানিকারক দেশের তুলনায় টনপ্রতি ৫৬ ডলার বেশি দাম দিয়ে দুই লাখ ৩০ হাজার টন চাল কেনার খবর পাওয়া গেছে তার আগে। সর্বশেষ সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি মিয়ানমার থেকে টনপ্রতি ৪৬৫ ডলার দিয়ে চাল কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। এই দামও চলতি বাজার থেকে বেশি। তার চেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করার সুযোগ থাকার পরও কেন আমরা মিয়ানমারের মতো একটি দেশ থেকে বেশি দামে চাল কিনব। বর্তমান সরকারি নীতিতে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে কোনো নীতি মানা হচ্ছে না।
খাদ্য সরবরাহ নিয়ে জাতিসঙ্ঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় রাশিয়া ইউক্রেনের মধ্যে চুক্তি হওয়ার পর সরবরাহ ব্যবস্থা উন্মুক্ত হয়েছে। এখন ইউক্রেনের গুদামে আটকে থাকা গম পুরোদমে সরবরাহ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া খবর পাওয়া যাচ্ছে রাশিয়ায় এবার পর্যাপ্ত গমের উৎপাদন হচ্ছে। এদিকে চালের বাজারে সরবরাহ বাড়ছে। প্রধান রফতানিকারক দেশগুলো এ বছর বেশি চাল বাজারে ছাড়বে। আবার দেশে আমন ধান কিছু দিনের মধ্যে উঠবে। এ অবস্থায় বাড়তি দামে চাল ও গম কেনার রহস্য কী?
বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সঙ্কটের কথা সবার জানা। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নি¤œবিত্তের মানুষের জীবনযাপন এখানে অনেক কঠিন হয়ে উঠেছে। নিত্যপণ্যের অসহনীয় দামে এক কথায় তারা দিশেহারা। এ অবস্থায় বাড়তি দামে প্রয়োজনের অতিরিক্ত চাল গম ক্রয় করে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটাচ্ছি কী আমরা? কিছু দিন ধরে বাড়তি দামে চাল ও গম কেনার খবর সংবাদমাধ্যমে আসছে। সরকারি কর্তৃপক্ষ এসব ব্যাপারে কোনো ধরনের ব্যাখ্যা দেয়ার প্রয়োজন মনে করছে না। অথচ সরকারি কেনাকাটা নিয়ে উত্থাপিত অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। জবাবদিহিতামূলক একটি সরকার এমন অভিযোগ পেলে সাথে সাথে তদন্ত করত। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করে জাতির সামনে পেশ করত। আমরা মনে করি, সংবাদমাধ্যমে উত্থাপিত অভিযোগ নিয়ে অচিরেই সরকারের তদন্ত হওয়া দরকার। জনগণের অর্থ জাতীয় অর্থনীতির এই দুর্দিনে তছরুপ হচ্ছে কি না, সেটা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা