২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
বাঁশের খুঁটিতে বিদ্যুৎ লাইন

দুর্ঘটনার আগেই ব্যবস্থা নিন

-

বর্তমান সভ্যতার প্রধান ভিত্তি বিদ্যুৎ। আর উন্নয়নের অন্যতম শর্ত বিদ্যুতায়ন। যার কারণে বিগত বছরগুলোতে দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়। ফলে গ্রামাঞ্চলের আনাচে কানাচে এখন বিদ্যুতায়ন হয়েছে। এতে করে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে আমাদের অর্থনীতি গতিশীল হয়েছে। বিদ্যুতায়ন হওয়ায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে। অনেকে স্বনির্ভর হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। শুধু নিজে নন, আরো অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছেন।
উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়নের তিতাস নদীপাড়ের মেঘালয় গ্রামে। এখানকার বাসিন্দারাও বিদ্যুতায়নের সুফল পাচ্ছেন। কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে সেখানে এখন বাঁশের খুঁটিতে চলছে বৈদ্যুতিক লাইন। এতে করে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কায় আছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দীর্ঘ দিন ধরে ওই এলাকার লোকজন এসব খুঁটি প্রতিস্থাপনের দাবি জানালেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। ফলে যেকোনো সময় কোনো নৌকার সাথে সামান্য একটু আঘাত লাগলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কারণ, বাঁশের খুঁটির পাশ দিয়ে ও নিচ দিয়ে নৌপথ থাকায় প্রতিদিন শত শত নৌকা চলাচল করে। দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করতে হয় যাত্রীদের।
নয়া দিগন্তে প্রকাশিত সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) সংবাদদাতার পাঠানো এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পাকশিমুল এলাকায় মেঘালয় মাঠসংলগ্ন তিতাস নদীর উত্তর পাড়ে শুধু বাঁশ দিয়ে তার টাঙিয়ে নেয়া হয়েছে ১১ হাজার ভোল্টেজের এসটি লাইন। ওই লাইনে তারের ভারে খুঁটির বাঁশগুলো হেলে নুইয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা জানান, ভরা বর্ষায় ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের নৌকা চলাচল করে খুঁটির নিচ দিয়ে। নৌকায় করে মালামাল আনা-নেয়া করে এলাকার মানুষ। নদীপাড়ের বাসিন্দারা নৌকায় করে নদীতে মাছ ধরতে যান। বাস্তবতা হলো, বিদ্যুতের বাঁশের খুঁটির সাথে নৌকার একটু ধাক্কা লাগলে ভেঙে পড়তে পারে তা। ফলে প্রয়োজনের তাগিদে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করতে হয় এলাকাবাসীকে। এ ছাড়া বিদ্যুতের খুঁটিগুলো স্রোতের তোড়ে পানিতে পড়ে গেলে বহু লোকের প্রাণহানির আশঙ্কা আছে। বাঁশের এমন নড়বড়ে অবস্থার কারণে ঝুঁকিতে আছেন নৌকার মাঝিরাও।
মেঘালয় গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এখানে বর্ষাকালে পানি বেড়ে যায়। তখন নৌকার ব্যবহার বাড়ে। বাঁশ বিদ্যুতের খুঁটি হিসেবে ব্যবহার করায় যেকোনো সময় নৌকার সাথে বা অন্য কোনোভাবে ভেঙে গিয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তবে পল্লীবিদ্যুতের সরাইল উপজেলার অরুয়াইল সাব জোনাল অফিসের কর্মকর্তারা বলেন, গত বন্যায় পানির স্রোতে তিতাসপাড়ের তিনটি খুঁটি পড়ে যায়। এলাকার গ্রাহকরা যাতে বিদ্যুৎ থেকে বঞ্চিত না হন সে জন্য পানির মধ্যে বাঁশের অস্থায়ী টাওয়ার নির্মাণ করে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রাখা হয়েছে। মানবিক কারণে কাজগুলো করা হয়। যদিও বিধানে নেই। বাঁশের খুঁটি না বসালে ওই এলাকার গ্রাহকেরা বিদ্যুৎ পেতেন না। ওখানে এখনো অনেক পানি, তাই খুঁটি বসানো যাচ্ছে না। পানি কমার সাথে সাথে ওইখানে স্থায়ী খুঁটি বসানো হবে।
পল্লীবিদ্যুতের কর্মকর্তারা যে কারণই উল্লেখ করুন না কেন, প্রশ্ন হচ্ছে, দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় কে নেবে? মানবিকতার অর্থ হলো- যেকোনো সুবিধা দেয়ার আগে মানুষের নিরাপত্তা হচ্ছে বড় ব্যাপার। এটি কোনোভাবে এড়িয়ে যাওয়ার বিষয় নয়। তাই আমরা মনে করি, বিদ্যুতের বাঁশের খুঁটিগুলোর পরিবর্তে গাছের বা সিমেন্টের খুঁটি বসানো জরুরি হয়ে পড়েছে। বাঁশের খুঁটি ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় দ্রুত বদলানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এ জন্য কোনো অজুহাতই আমলে নেয়া যায় না।


আরো সংবাদ



premium cement