২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
উন্নয়ন প্রচারে নেয়া হচ্ছে আরো প্রকল্প

মানুষের প্রয়োজন জরুরি সহায়তা

-

বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন নিয়ে জোরালো প্রশ্ন রয়েছে; বিশেষ করে সরকার যে ধরনের নীতি গ্রহণ করেছে। বড় কিছু যোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণ টেকসই অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য আমাদের মতো দেশে কতটা কার্যকর হবে নিশ্চিত নয়। বিগত ১৩ বছরে সরকার এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে হাঁটছে। বিদেশী ঋণে এসব প্রকল্পের সুদাসল পরিশোধের কিস্তি শুরু হচ্ছে, যার অঙ্ক ক্রমান্বয়ে বাড়বে। এমন সময় এই চাপ আসতে যাচ্ছে- যখন আমাদের অর্থনীতির নানা দুর্বলতা প্রকাশ পাচ্ছে। অন্য দিকে, পণ্যমূল্যের চাপে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। এ সময় সরকার ‘উন্নয়ন’ প্রচারে দেদার অর্থ খরচের নীতি গ্রহণ করছে।
খবরে প্রকাশ, দেশের ৪৯২টি উপজেলায় এলইডি ডিসপ্লে বসাতে চায় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি অধিদফতর। সরকারের তিন মেয়াদে অর্থনৈতিক অর্জনের চিত্র জানাতে চায় জনগণকে। বড় উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বাইরে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে সরকারের কী অর্জন তা তুলে ধরা হবে। ইতিহাস, সংস্কৃতি ও প্রধানমন্ত্রীর ১০টি উদ্যোগ প্রদর্শন করা হবে। উন্মুক্ত মাঠে অথবা জনসমাগম হয় এমন জায়গায় ডিসপ্লে বসানো হবে। জাতীয় অর্থনৈতিক কমিটি একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে ১৩২ কোটি টাকার প্রকল্পটি।
উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রচারে জোরালো প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকারের তথ্য ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, উড়াল সড়ক, টানেল নির্মাণসহ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে দেশজুড়ে প্রচার চালাচ্ছে। আলাদাভাবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রদর্শন’ প্রকল্পের আওতায় ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে এলইডি ডিসপ্লের কার্যক্রম চলছে ১৯ জেলায়। বিটিভি, বাংলাদেশ বেতারসহ সরকারের হাতে থাকা সব মিডিয়ায় এ নিয়ে বহুল প্রচারণা চলছে।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের ২০১৮ সালে নেয়া ১০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এ ধরনের আরেকটি প্রকল্প বেশ কৌতূহলোদ্দীপক। এর নাম দেয়া হয়েছে ‘গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে প্রচার কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ প্রকল্প’। এর আওতায় পিকআপ ভ্যানে করে এলইডি ডিসপ্লে দিয়ে উন্নয়ন চিত্র দেখানো হয়েছে সারা দেশে। প্রকল্পটি গত বছরের জুনে শেষ হলেও যে প্রশ্নটি রয়ে যায়, তা হলো অর্থনৈতিক অবনতির চাপে পিষ্ট মানুষ কিভাবে উপকৃত হলো এর মাধ্যমে? অথচ বাস্তবতা হলো- করোনা মহামারীর প্রভাবে ক্রয়ক্ষমতা হারানো গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য যেখানে বড় বেশি প্রয়োজন খাদ্য ও নগদ অর্থ সহায়তা।
সরকার রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো ব্যবহার করে নিজেদের প্রচার চালাচ্ছে। এ সুযোগ নিতে কোনো কার্পণ্য নেই। এ অবস্থায় কৃচ্ছ্রতাসাধনের সময়ে আবার কেন বাড়তি অর্থ খরচ করতে হবে। মহামারী ও যুদ্ধ-পরবর্তী বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার পাশাপাশি দেশীয় অর্থনৈতিক অনিয়ম দুর্নীতি লুটপাটে দিশেহারা অবস্থায় এটি বাহুল্য ব্যয়। মানুষকে কিছু দেখানোর পরিবর্তে তাদের ঘরে ঘরে এখন সাহায্য পাঠানো জরুরি। প্রচারের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট দিয়ে সরকার দরিদ্রদের জন্য চলমান খাদ্যসহায়তা কর্মসূচি আরো জোরদার করতে পারে। আরো গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। বিদেশে অর্থপাচার, ব্যাংক ও আর্থিক খাতগুলোর নিরাপত্তা বাড়ানো দরকার। পণ্যমূল্যের বাড়তি চাপ মোকাবেলায় ভর্তুকির নীতি গ্রহণ করতে পারে।
বাংলাদেশের মানুষ এখন বড় সঙ্কটে রয়েছে। করোনার মধ্যে জানা গেছে, দেশে দারিদ্র্য বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। বেকারত্ব বেড়েছে। অনেকেই এখন দুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের জন্য সহায়তার হাত বাড়ানো দরকার। অন্য দিকে প্রচারে বরাদ্দ দেয়া অর্থ ঠিকঠাক ব্যবহার হবে কি না, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। তার পরও কেন এমন প্রকল্প নেয়া হচ্ছে? সরকারের উচিত নিজেদের ঘোষিত কৃচ্ছ্রতাসাধনের নীতি দৃঢ়ভাবে অনুসরণ করা।


আরো সংবাদ



premium cement