২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
কৃষি আবহাওয়া তথ্য উন্নতকরণ প্রকল্প

খাদ্যনিরাপত্তায় প্রয়োজনীয়

-

বাংলাদেশে কৃষি যে সবচেয়ে টেকসই খাত তার প্রমাণ আবারো মিলেছে করোনাকালে। আর কৃষিই হলো যেকোনো দেশের খাদ্যনিরাপত্তার প্রধান অবলম্বন। বিষয়টি বিবেচনায় ‘কৃষি আবহাওয়া তথ্যপদ্ধতি উন্নতকরণ’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। জানা গেছে, কৃষির উন্নয়নে কৃষকরা যাতে আবহাওয়ার সঠিক তথ্য পান সে উদ্দেশ্যে এ প্রকল্প নেয়া হয়।
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো- আবহাওয়া এবং নদ-নদীর সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কিত উন্নত মানের ও নির্ভরযোগ্য তথ্য কৃষকের কাছে পৌঁছানো। একই সাথে এ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের উন্নত পদ্ধতি ব্যবহারে ডিএইর সক্ষমতা বাড়ানো। দেশের ৬৪টি জেলার ৪৯২টি উপজেলার চার হাজার ৫৫৪টি ইউনিয়ন পরিষদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হওয়ার কথা; কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি দেখে খোদ কৃষি মন্ত্রণালয়ই নাখোশ। অথচ সবার জানা, যেকোনো মৌসুমে শস্যের ভালো ফলন পেতে হলে আবহাওয়ার সঠিক তথ্য কৃষকের জানা থাকা খুব জরুরি।
বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর দেশব্যাপী এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ২০১৬ সালে শুরু হওয়া প্রকল্প ২০২১-এ শতভাগ বাস্তবায়নের কথা ছিল; কিন্তু কিছু কারণ দেখিয়ে প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। প্রথমে প্রকল্প ব্যয় ছিল ১১৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা, পরে বাড়িয়ে ২১২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা করা হয়। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১৫ কোটি ২২ লাখ ৬০ হাজার টাকা ও প্রকল্প ঋণ বাবদ পাওয়া গেছে ১৯৭ কোটি ১৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকা।
গত ২৬ জুন কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ২০২১-২২ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত প্রকল্পগুলোর মে মাস পর্যন্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি নিয়ে পর্যালোচনা সভা হয়। তাতে দেখা গেছে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের আর্থিক অগ্রগতি ৭২.৪৮ শতাংশ। আর এডিবি বাস্তবায়নের জাতীয় অগ্রগতি ৬৫.৫৬ শতাংশ। কিন্তু মে পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৪১.৪৪ শতাংশ। অথচ প্রকল্প বাস্তবায়নের বর্ধিত মেয়াদও শেষ হতে আর বেশি দেরি নেই।
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দাবি, বর্তমানে প্রকল্পের আওতায় তিনটি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে কৃষককে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে নির্ভরযোগ্য কৃষি আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক ঝুঁকি সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত কৃষকের উপযোগী করে প্রস্তুত করে তা বিভিন্ন সম্প্রসারণ পদ্ধতির মাধ্যমে কৃষকের কাছে পৌঁছে দেয়া। প্রকল্পের আওতায় নিয়মিত সপ্তাহে দু’দিন ৬৪ জেলার জন্য এবং এক দিন জাতীয় পর্যায়ে কৃষি আবহাওয়া বুলেটিন তৈরি ও সরবরাহ করা। এ ছাড়াও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগে ও পরে করণীয় সম্পর্কে সচেতন করে বিশেষ কৃষি আবহাওয়া বুলেটিন প্রদান করা। বুলেটিনগুলো নিয়মিত কৃষি আবহাওয়ার তথ্য পোর্টালে আপলোড করা হয়। প্রকল্পের ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপলিকেশন থেকে এ বিষয়ে তথ্য এবং জেলাভিত্তিক বিস্তারিত কৃষি আবহাওয়া পরামর্শ পাওয়া যায়।
দেশে কৃষকের মোট সংখ্যা এক কোটি ৭০ লাখ। মোট আবাদি জমি আছে ৬০ লাখ হেক্টর। তবে কৃষিজমি যেভাবে কমছে, অচিরে ৫০ লাখ হেক্টরে নেমে আশার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আবার মোট কৃষকের মধ্যে ৯০ শতাংশ ক্ষুদ্রচাষি। তাদের গড়পড়তা জমি এক হেক্টরের নিচে। এ পরিস্থিতির মধ্যে থেকে বাংলাদেশের কৃষকরা দেশের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য উৎপাদন করছেন। সে ক্ষেত্রে কৃষকরা যদি প্রয়োজনীয় সহযোগিতা না পান তাহলে ধান ও অন্যান্য ফসলের ফলনে বিরূপ প্রভাব পড়তে বাধ্য।
আমাদের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন বাড়ানোর বিকল্প নেই। এ জন্য আবহাওয়া-সংক্রান্ত সঠিক তথ্য কৃষককে যথাসময়ে জানাতে হবে। সঙ্গত কারণে এই প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরি। এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অর্থ ছাড় ও ঠিকাদারদের সাথে আলোচনাক্রমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement