২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
মোটা চালের দামও নাগালের বাইরে

গরিবের আহার জোটানো দায়

-

আমাদের দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত; কিন্তু ভাত প্রস্তুতের উপাদান সব ধরনের চালের দর দফায় দফায় বাড়ছে। অবস্থা এত অসহনীয় হয়ে পড়েছে যে, বাজারে গরিবের বলে পরিচিত মোটা চালই বিক্রি হচ্ছে দুই বছর আগের চেয়ে দ্বিগুণ দামে। গরিব মানুষ এখন ৬০ টাকার নিচে কোনো চাল কিনতে পারছেন না। মোটা চালের কেজি এখন এতটাই বেশি যে, দুই বছর আগেও ছিল ৩০ টাকা। লক্ষণীয়, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর আগে থেকেই বাড়তে থাকা চালের দাম লাগামহীন হয়ে পড়েছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ, টিসিবির তথ্য- সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৬ শতাংশের বেশি। চিকন চাল মিনিকেট ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর নাজিরশাইল প্রতি কেজি ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশ, রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ ছাড়াই বাড়ছে মোটা, সরু সব ধরনের চালের দাম। মানভেদে প্রতি কেজি চালের দাম পাইকারিতে তিন-চার টাকা এবং খুচরা বাজারে পাঁচ-ছয় টাকা পর্যন্ত বেড়েছে গত কয়েক দিনে। কয়েক হাত ঘুরে এ চাল কিনতে খুচরা ক্রেতারা রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরায় গত সপ্তাহে প্রতি কেজি মোটা চাল বি-২৮-এর দাম ছিল ৫৫-৫৮ টাকা, এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়।
ভরা মৌসুমে চালের সরবরাহ থাকে সবচেয়ে বেশি; কিন্তু এ সময়েও প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকে সব ধরনের চালের দাম। অর্থনীতির সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী, সরবরাহ কম থাকলে আর চাহিদা বেশি হলে ওই পণ্যের দাম তখন বেড়ে যায়; কিন্তু চালের বর্তমান দাম বেড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এ তত্ত্ব আর খাটছে না। এই নিত্যপণ্যটির সরবরাহে কোনো ঘাটতি না থাকলেও এর বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। বাস্তবে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে খরচ যতটা বেড়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি দাম বেড়েছে চালের। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর প্রতি কেজিতে চালের দাম বেড়েছে পাঁচ-সাত টাকা। আর পরিবহন ব্যয়বৃদ্ধির হিসাবে চালের দাম বাড়ার কথা কেজি প্রতি সর্বোচ্চ ৫০ পয়সা।
সরকারি সংস্থা টিসিবির পণ্যমূল্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, এক মাসের ব্যবধানে চালের দাম বেড়েছে ১৫ শতাংশ। এভাবে চালসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষ। বাজারে চালের দাম বাড়তে থাকায় সরকার যদিও আমদানির অনুমতি দিয়েছে, তবে ডলার সঙ্কটে আমদানিতে গতি নেই। বাড়তি দামে এখন বড় চালানে চাল আমদানি করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।
দাম বৃদ্ধির জন্য খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি দায়ী করছেন মিলমালিকদের কারসাজি। আর মিলমালিকদের অজুহাত, লোডশেডিংয়ে ডিজেল দিয়ে চালকল চালু রাখায় খরচ বাড়ছে। তারা আরো বলছেন, হাটে ধানের সরবরাহ কম। তবে ট্রাক মালিকদের দাবি, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় চালের দাম কয়েকগুণ বেশি বেড়েছে।
টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, চালের পাশাপাশি সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে খোলা আটার দাম। আটা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকায়। গত সপ্তাহে ছিল ৪৫-৫০ টাকা। চিনি প্রতি কেজি ৯৫-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেড়েছে ময়দা, সয়াবিন, ডাল, ব্রয়লার মুরগি, লবণসহ বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম। এ ক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের কারসাজিকে দায়ী করে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ক্রেতারা।
প্রশ্ন হলো- চালের বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা বন্ধ করা কি খুবই কঠিন? এক বছরের বেশি সময় চালের দাম দফায় দফায় বাড়ছে। অথচ যারা সরকারিভাবে বাজার তদারকি করার কথা তাদের তেমন তৎপরতা নেই। তাই চালের দাম নিয়ন্ত্রণে বাজারে সরকারের তদারকি বাড়ানোর দাবি সাধারণ মানুষের। সাথে যারা কারসাজিতে জড়িত তাদের শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনার কথাও জোরেশোরে বলছেন সাধারণ ক্রেতা। এ ছাড়া দাম নিয়ন্ত্রণে চাল আমদানিতে ধার্য কর কমানো যেতে পারে। সেই সাথে দেশব্যাপী সরকারের খোলাবাজারে চাল বিক্রি কার্যক্রম আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বাড়াতে হবে বলে আমরা মনে করি। একই সাথে খাদ্যবান্ধব সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতাও বাড়াতে হবে। তা হলে আশা করা যায়, চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে আসবে।


আরো সংবাদ



premium cement