২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
বিরোধীদের বাড়িঘরে হামলা

সঙ্কট আরো গভীর করবে

-

কোনো ধরনের উসকানি বা অজুহাত ছাড়াই বিরোধী দলের ওপর হামলা চালাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন। যুবলীগ-ছাত্রলীগসহ সরকারি দলের প্রায় সব সহযোগী সংগঠন দেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালাচ্ছে। হুমকি ও মারধরের পাশাপাশি এমনকি এখন বাড়িঘরে পর্যন্ত হামলা করা হচ্ছে। সম্পদ ও জীবনের ক্ষয়ক্ষতি করা হচ্ছে। ২০২৩ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে সব রাজনৈতিক পক্ষের মধ্যে আস্থা স্থাপন যখন জরুরি তখনই এসব হামলার ঘটনা ঘটছে। বিভিন্ন বৈশ্বিক সংস্থা ও রাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টির তাগিদ দেয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় বিরোধীদের ওপর হামলা রাজনৈতিক বিভেদ আরো বাড়বে। এতে জাতির কোনো উপকার হবে না বরং তা চলমান সঙ্কট আরো গভীরতর করবে।
গত সোমবার দেশের অন্তত তিনটি জায়গায় বিরোধী দলের ওপর হামলা হয়েছে। লক্ষ্মীপুরের গোহাটা এলাকায় দলটির সাবেক সংসদ সদস্য শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর বাসায় হামলা হয়েছে। এতে তার ছেলে ও ভাইসহ চারজন আহত হন। বরিশালের গৌরনদীতে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের পাঁচ নেতাকর্মীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। অন্য দিকে একই উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বদিউজ্জামান ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রিয়াজের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। জামালপুরের মাদারগঞ্জে উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত বিক্ষোভে হামলা চালানো হয়েছে।
ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে আরেকটি উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড হচ্ছে, বিএনপি বা এর সহযোগী সংগঠন রাজনৈতিক কর্মসূচি দিলে সেখানে তারাও একই সময় পাল্টা কর্মসূচির ডাক দিচ্ছে। রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত এ কাজটি তারা আগে থেকেই করে আসছে। এতে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে স্থানীয় পুলিশ সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করে। মূল ব্যাপার হচ্ছে বিরোধীদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পণ্ড করে দেয়া। বরগুনা, ফেনীসহ বিভিন্ন জায়গায় উপর্যুপরি এমন দৃষ্টিকটু কর্মসূচি দিয়েছে সরকারি দল।
পণ্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির মধ্যে সরকার জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। এ অবস্থায় মানুষের জীবন ধারণ অত্যন্ত কঠিন হয়ে উঠছে। জনগণের ওপর বাড়তি দামের বোঝা চেপে বসার জন্য প্রধানত সরকারের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা দায়ী। সঙ্গত কারণে বিরোধীরা রাজপথে বিক্ষোভ করছে। এখন পর্যন্ত এসব বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হয়নি। নাশকতার কোনো ঘটনাও ঘটছে না। এ অবস্থায় ক্ষমতাসীন দলের এই মারমুখী আচরণ পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া বাঁধানোর মতো। এতে নতুন উপসর্গ দেখা দিয়েছে বাড়িঘরে হামলা চালানো। লক্ষ্মীপুরে শহীদ উদ্দিনের বাড়িতে হামলার সময় তিনি অন্য একটি স্থানে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে ছিলেন। গৌরনদীতেও বিএনপি নেতাদের ওপর সরাসরি চড়াও হওয়ার পাশাপাশি তাদের বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আগে রাজপথে বাগি¦তণ্ডা করেছে। কখনো সেটি মারামারিতে গড়ালেও রাজপথেই সীমিত থেকেছে। কিন্তু এভাবে রাজনৈতিক বিরোধকে বাসাবাড়িতে টেনে আনার মধ্য দিয়ে সরকারি দল পরিস্থিতিকে আরো মারমুখী করে দিচ্ছে কার স্বার্থে?
এই সরকারের তিন মেয়াদে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর আক্রমণের মুখে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা কোনো প্রতিকার পায়নি। বাহিনীগুলোকে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে সরকার সর্বোচ্চ মাত্রায় ব্যবহার করেছে। এর পরিণামও ভালো হয়নি। দেশে গুম খুন হেফাজতে নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার দায় চেপেছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ওপর। আমেরিকার পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। জাতিসঙ্ঘ এ ব্যাপারে একটি কার্যকর তদন্ত সংস্থা গঠনের সুপারিশ করেছে। অবশ্য ইতোমধ্যে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যা আপাতত বন্ধ রয়েছে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর আচরণও আগের চেয়ে নমনীয় হয়েছে। কিন্তু এ সময় সরকারি দলের এমন মারমুখী আচরণ নতুন করে যে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে তা কারো জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না।


আরো সংবাদ



premium cement