২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত ক্ষুদ্রশিল্প ও কৃষি

অবিলম্বে প্রতিকার করুন

-

নয়া দিগন্তের রাজবাড়ী সংবাদদাতার সাম্প্রতিক এক খবর, এ জেলায় বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের নির্ধারিত সময়সূচি ঠিক রাখতে পারছে না সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগ। তারা দৈনিক দুই-এক ঘণ্টার লোডশেডিংয়ের ঘোষণা দিলেও শিডিউলের কোনো প্রকার তোয়াক্কা না করেই বারবার লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। ফলে বিদ্যুৎ যখন তখন চলে যাচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় চার-পাঁচবার করে ঘণ্টায় পর ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে নিয়মনীতি ব্যতীতই। শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলের অবস্থা আরো ভয়াবহ। এ দিকে লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত কৃষি খাত ও ক্ষুদ্রশিল্প।
এই পত্রিকার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকরা বলছেন, দিনরাতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এখন ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ থাকে না। রাতেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলে লোডশেডিং। এতে এক দিকে প্রচণ্ড গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত, অপর দিকে আমন ধানের সেচ ব্যবস্থাও বিঘিত। বিদ্যুৎ না থাকায় বেশি বিপাকে পড়েছে আসন্ন এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা।
বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বলেছে, জনগণের চাহিদা মোতাবেক বিদ্যুতের সরবরাহ না থাকায় লোডশেডিংকালে পাওয়ার শিডিউল ঠিক রাখা যায় না। এ দিকে, আমন মৌসুম আরম্ভ হয়েছে। ফলে অসময়ে অনাবৃষ্টি ও লোডশেডিংয়ে ধানী জমি তৈরি এবং রোপণ করা আমন ক্ষেতে পানি সেচ দিতে পারছেন না তারা। রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলায় প্রত্যহ সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৮টা লোডশেডিং হওয়ার কথা। কিন্তু বর্তমানে কোনো কোনো দিন লোডশেডিং থাকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত। এ উপজেলায় জামালপুর ইউনিয়নের নলিয়া ডাঙ্গাহাতি মোহন গাঁয়ে সাত বছর পুরনো জলিল মিয়া জুট মিল এখন শুধু বিদ্যুতের সঙ্কটে লোকসানের ঝুঁকিতে পড়েছে। মিলটির এমডি ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বলেছেন, জ্বালানির অভাব মোকাবেলায় বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে লোডশেডিং সমাধান নয়। কারণ লোডশেডিংকালে জেনারেটরে অনেক জ্বালানি তেল ব্যয় করে বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হয়। এতে তেলের বেশি অপচয় হচ্ছে। জেনারেটরে এক লিটার ডিজেল যত বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, বিদ্যুৎকেন্দ্রে একই পরিমাণ জ্বালানি দ্বারা অনেক বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সূত্রে জানা গেছে, নির্ধারিত শিডিউলের অতিরিক্ত লোডশেডিং দিতে হয় তাদের। গত ৪ আগস্ট বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ প্রায় ৯ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ে জনজীবন ছিল অতিষ্ঠ। প্রতিদিন লোডশেডিং বেশি দেয়া হচ্ছে।
অপর দিকে, ওয়েস্টার্ন জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোং কর্তৃক সরবরাহকৃত বিদ্যুতের পরিস্থিতি লোডশেডিংয়ের দরুন আরো ভয়াবহ। গত ১৭ আগস্ট বুধবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা লোডশেডিং ছিল। আবার ৩টা ৪১ মিনিটে তা শুরু হয়েছে। লোডশেডিংয়ের ফলে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বালিয়াকান্দির ক্ষুদ্রশিল্প প্রতিষ্ঠান। তাই ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের শিকার স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগকারী উদ্যোক্তারা। যেমন- স্থানীয় বাজারে বিদ্যুতের অভাবে দেখা যায়, এর কর্মচারীরা অলস সময় কাটাতে বাধ্য হন। অথচ মেশিন চালানোর বিকল্প কোনো উপায় নেই। বালিয়াকান্দি উপজেলা চেয়ারম্যান জানান, ‘এখানে বিদ্যুতের অফিস না থাকায় দুর্ভোগের শেষ নেই। তাই ছোট সমস্যায় পড়লেও জেলা শহরে দৌড়াতে হয় জনগণকে।’ অন্য দিকে, ওয়েস্টার্ন পাওয়ার কোম্পানির একজন প্রকৌশলী জানান, ‘বালিয়াকান্দিসহ এ জেলায় ২৪ মেগাওয়াটের মধ্যে মাত্র অর্ধেক বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। তাই বিদ্যুতের লোডশেডিং ছাড়া চলে না। চাহিদা বাড়া-কমায় পাওয়ার শিডিউলও মেনে চলা সম্ভব হয় না। তবে লোডশেডিং শিডিউল থাকলেই যে সব সময়ে লোডশেডিং দিতে হয়, তা-ও না।’ এক মাসেই লোডশেডিং অনেক হ্রাস পাবে বলে তিনি আশ্বাস দিলেন।
কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে এ সঙ্কটের প্রতিকার করবেন বলে আমরা এখনো আশা করছি। তা না হলে জাতীয় অর্থনীতির বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে।


আরো সংবাদ



premium cement