২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বিপিসির লাভের গুড় কি পিঁপড়ায় খেল

-

সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা না থাকার খেসারত দিতে হচ্ছে জাতিকে। সম্প্রতি জ্বালানি তেলের নজিরবিহীন দাম বাড়ানোর পর এটি হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যাচ্ছে। বাজারে নিত্যপণ্যের অগ্নিমূল্যে মানুষের জীবন যখন দুর্বিষহ তখন তেলের দাম সীমাছাড়া বাড়িয়ে দিলো বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। বিপিসির যুক্তি, বিশ্ববাজারে উচ্চমূল্যের কারণে লোকসান কমাতে এটি করতে হয়েছে। অথচ বিশ্ববাজারে যখন দাম বেশ কমে গিয়েছিল তখন বিপিসি দাম কমায়নি। এমনকি শেষবার যখন দাম বাড়াল তখন বিশ্ববাজারে তেলের দাম অনেক কম ছিল। বিশেষজ্ঞদের অনেকে হিসাব করে দেখিয়েছেন, আগের লাভের সাথে সমন্বয় করা হলে এই দুঃসময়ে সাধারণ মানুষের ওপর বাড়তি দামের ভয়াবহ চাপ দেয়ার প্রয়োজন হতো না। কয়েক বছর ধরে যে বিপুল মুনাফা করেছে- সে বিষয়েও বিপিসি যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিতে পারছে না।
বিপিসির দেয়া তথ্য-উপাত্তের সাথে মিলছে না অনেকের মতো সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির তথ্য-উপাত্তও। বিপিসি জানাচ্ছে, সম্প্রতি তেলে ভর্তুকি দিতে গিয়ে আট হাজার ১৫ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। সিপিডি বলছে, চলতি বছরও বিপিসি এক হাজার ২৬৪ কোটি টাকা লাভ করেছে। বিপিসি ও অর্থ মন্ত্রণালয় আরো যে বিস্তারিত হিসাব দিয়েছে তাতেও স্বচ্ছতার অভাব দেখা যাচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য উল্লেখ করেছে সিপিডি। তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০১৫ সাল থেকে বিপিসি প্রতি বছর গড়ে সাড়ে চার থেকে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত টানা লাভ করেছে। তাতে বিপিসির মুনাফা হয়েছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১০ হাজার কোটি টাকা সরকার নিয়েছে। বাকি ৩৬ হাজার কোটি টাকা কোথায় গেল? প্রশ্ন তুলেছে সিপিডি।
বিপিসির চেয়ারম্যান সংবাদ সম্মেলন করে উদ্বৃত্ত অর্থ কোথায় গেছে সে ব্যাপারে ধারণা দিতে চেয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির জন্য পরিচালিত বিভিন্ন প্রকল্পের বিপরীতে এসব অর্থ বিনিয়োগ করা আছে কিংবা প্রকল্পে খরচ হয়েছে- এমন ফিরিস্তি তিনি তুলে ধরেছেন। অন্য দিকে, সিপিডি জানাচ্ছে- বিপিসি নিজস্ব অর্থায়নে ১১ প্রকল্পে আট হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছে। এর মধ্যে ছয়টি প্রকল্প বন্ধ রয়েছে। তাদের মতে, লাভের টাকা কোথায় আছে সেটি স্পষ্ট করে দেখাতে পারেনি বিপিসি। অথচ এই উদ্বৃত্ত অর্থ দিয়ে জ্বালানির দাম সহনীয় রাখা যেত। এ ছাড়া সরকার জ্বালানি তেল বিক্রিতে ৩৪ শতাংশ বিভিন্ন ধরনের কর নেয়। এসব কর প্রত্যাহার করে নিলেও দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা যেত।
জ্বালানির মজুদ কত? এ বিষয়টি নিয়ে সরকার ও বিপিসি মানুষকে সঠিক সময়ে অবহিত করতে চায়নি। অন্য অনেক গুরুতর বিষয়ের মতো এটি নিয়েও মানুষকে অন্ধকারে রেখেছে। প্রতিষ্ঠানটি একেবারে খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে জানাচ্ছে- দেশে ৩০ দিনের ডিজেল, ১৯ দিনের অকটেন, ১৮ দিনের পেট্রল ও ৩২ দিনের জেট ফুয়েল রয়েছে। ডলারের রিজার্ভ ঘাটতির মধ্যে তেল আমদানি করা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তেলের ঘাটতির কারণে দেশবাসী আরো অসহনীয় অবস্থায় পড়তে পারে।
এবার জ্বালানির দাম এক লাফে ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এর পুরো চাপ প্রধানত নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের ওপর পড়ছে। কারণ তেলের বাড়তি দামের প্রভাবে এরই মধ্যে খাদ্য ও পরিবহন ব্যয় বেড়েছে। যার ফলে মানুষ আরো নাজুক অবস্থায় পড়ছে। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধিতে সরাসরি কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সারের দাম বাড়ানোর পর জ্বালানির দাম বৃদ্ধির জোড়া আঘাতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে, খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হবে। মূলত সরকারের অদক্ষতা ও অন্যায়ের মাশুল গুনতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। জবাবদিহির মাধ্যমে এ অবস্থা ঠেকানো যেত। স্বচ্ছতা থাকলে আজকের এই জটিল অবস্থা সৃষ্টি হতো না।

 


আরো সংবাদ



premium cement