২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
বৈদেশিক বিনিয়োগ নিয়ে মার্কিন রিপোর্ট

অর্থনীতির জন্য বড় ধাক্কা

-

দেশে বিনিয়োগের সমস্যা নিয়ে অনেক লেখালেখি ও সভা-সেমিনার হয়েছে। বিভিন্ন সরকার নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে, বিনিয়োগকারীদের জন্য নানা সুবিধা দিয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বিদেশী বিনিয়োগ আশানুরূপ তো হয়ইনি, বরং তা হতাশাজনক পর্যায়ে নেমেছে।
২০১৯-২০ অর্থবছরে বৈদেশিক বিনিয়োগ হয় ১২৭ কোটি ১০ লাখ ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭৭ কোটি ১০ লাখ ডলারে। এই স্বল্প বিনিয়োগ আসার পেছনে কোভিডের মতো বৈশ্বিক মহামারীর কিছুটা প্রভাব নিশ্চয়ই আছে। সেটি মেনে নিয়েও বলা যায়, দেশের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ মূলত এ জন্য দায়ী।
সম্প্রতি বিষয়টি ধরা পড়েছে বিদেশীদের চোখেও। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগকারী দেশগুলোর অন্যতম যুক্তরাষ্ট্রের এক রিপোর্টে এ সত্য উঠে এসেছে। বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে প্রকাশিত রিপোর্টে বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। প্রধানতম বাধা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে দুর্নীতি। সেই সাথে শ্রম আইনের শিথিল প্রয়োগ, আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতা, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো ও সীমিত অর্থায়নের সুযোগের বিষয়গুলো উঠে আসে রিপোর্টে। যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে নিয়মিতভাবে এ রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়।
কোভিড-পরবর্তী যে সময়ে বাংলাদেশ মহামারীজনিত ক্ষতি কাটিয়ে উঠে অর্থনীতিতে স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে ঠিক সেই সময় এ রিপোর্ট বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ধাক্কা বলে মনে করার কারণ আছে। এ রিপোর্ট শুধু যে মার্কিন বিনিয়োগকারীরা দেখবেন এমন নয়। বিশ্বের সব বিনিয়োগকারীই এ রিপোর্ট অনুসরণ ও এর ভিত্তিতে বিনিয়োগ পরিকল্পনা প্রণয়ন করবেন, এটি নিশ্চিত। সুতরাং মার্কিন রিপোর্ট বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে তাতে সন্দেহ নেই।
রিপোর্টে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার ও ব্যবসায় পরিবেশ উন্নত করার সরকারি চেষ্টার উল্লেখ করে এগুলোকে বিদ্যমান সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার ইতিবাচক দিক হিসেবে উল্লেøখ করা হয়। কিন্তু সরকারের এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে ঘাটতি আছে তাও নজর এড়ায়নি। প্রশাসনিক কাজের দ্বৈধতা, আইনি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থায় স্বচ্ছতার অভাব বিনিয়োগকারীদের এ দেশে প্রকল্প নিতে নিরুৎসাহিত করে এবং রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় হুমকি-ধমকি দিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগ এ দেশে প্রায়ই ঘটে- এসব বিষয়ও রিপোর্ট থেকে বাদ পড়েনি। এ সর্বশেষ বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কারণ গত ১৫ বছরে চাঁদাবাজি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা শহরে রাজনৈতিক মদদপুষ্ট ব্যক্তিরা প্রতিনিয়ত চাঁদাবাজি করছেন। এমনকি প্রতিটি শহরের কোন এলাকায় কে চাঁদা তুলবেন তা-ও তারা অলিখিতভাবে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। শুধু ব্যবসায়ী নন, যে কেউ ঘরবাড়ি বানানো থেকে শুরু করে যেকোনো অবকাঠামো নির্মাণ করতে গেলে তাকে চাঁদা গুনতে হয়। এটি মানুষের জন্য কেবল বাড়তি বিড়ম্বনা তা-ই নয়, রীতিমতো অসম্মানজনকও। প্রবাসী অনেকে এ দেশে বিনিয়োগ করতে এসে এসব চাঁদাবাজদের অত্যাচারে ফিরে গেছেন এমন বহু দৃষ্টান্ত আছে।
বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য ৯টি খাতকে বিপুল সম্ভাবনাময় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের রিপোর্টে। তাদের বিবেচনায় সম্ভাবনাময় খাতের মধ্যে রয়েছে- বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, কৃষি যন্ত্রপাতি, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি), অবকাঠামো উন্নয়ন ও প্রকৌশল সেবা, বস্ত্র ও পোশাক প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি ও সেবা, শিক্ষা, ই-কমার্স, স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে পরিবহন অবকাঠামোর বেশ উন্নতি হয়েছে সত্যি। কিন্তু বিদ্যুৎ, জ্বালানি খাতে ভাটার টান স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এলএনজি আমদানি করে বিদ্যুৎ খাত দীর্ঘমেয়াদ তো দূরের কথা মধ্যমেয়াদেও সঙ্কটের সমাধান করার মতো সক্ষমতা আমাদের অর্থনীতির আছে কি না সন্দেহ। অথচ সরকার সে পথেই হাঁটছে। গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের সব কার্যক্রম অনেক আগে থেকেই বন্ধ রয়েছে।
এই ভ্রান্ত নীতি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে স্থায়ী সঙ্কট সৃষ্টি করতে পারে। সে ক্ষেত্রে বৈদেশিক বিনিয়োগ ভবিষ্যতে আরো হ্রাস পেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement