নির্বাচন এখন শুধু জানমালের ক্ষতি বাড়াচ্ছে
- ২৯ জুলাই ২০২২, ০০:০০
নির্বাচন কমিশন জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে ভোটের আয়োজন করে থাকে। এতে সরকারি কোষাগার থেকে অর্থ খরচ করতে হয়। বেশ কয়েক বছর থেকে কমিশনের সব আয়োজন থাকলেও নাগরিকদের ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার নেই বললেই চলে। সেই অর্থে, এখন আর সাধারণ নাগরিকের পছন্দের প্রার্থী বাছাই হচ্ছে না; যদিও নির্বাচনের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণের পছন্দের প্রার্থী বাছাই। সেটি তো অর্জিত হচ্ছেই না, এ অবস্থায় বাড়তি ক্ষতি হিসেবে রয়েছে সহিংসতা। এতে নিয়মিত মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। এ ধরনের একটি নির্বাচনে গত বুধবার ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলে পুলিশের গুলিতে এক শিশু প্রাণ হারিয়েছে। স্থানীয় নির্বাচন এখন দেশের কোনো স্বার্থ হাসিল করছে না। তার পরও নির্বাচন কমিশন এর আয়োজন করে এভাবে মানুষের ক্ষতি বাড়াচ্ছে।
রানীশংকৈল ইউনিয়ন কাউন্সিলের নির্বাচনও সাম্প্রতিককালে আয়োজিত অন্যান্য নির্বাচনের মতোই বিশৃঙ্খল অবস্থায় পতিত হয়। পরাজিত প্রার্থীরা হামলা করে বসে পুলিশের ওপর। অন্য দিকে, পুলিশও এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এতে স্থানীয় এক নারীর কোলে থাকা দুই বছরের শিশুর খুলি উড়ে যায়। কিছুক্ষণ পরই শিশুটি প্রাণ হারায়। ঘটনাটি বিশ্লেষণ করলে বর্তমান নির্বাচনী প্রহসনের চিত্রটিই আমাদের সামনে স্পষ্ট হবে।
স্থানীয় নির্বাচনে সরকারি দল আওয়ামী লীগের বাইরে অন্য কোনো দলের প্রার্থীরা এখন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন না। সামান্য কিছু ব্যতিক্রম হয়তো থাকতে পারে। অনেকসময় নিজেরা ফায়সালা করে নেয়, কে চেয়ারম্যান কে মেম্বার হবে। সাধারণত দেশের একেক জায়গায় আওয়ামী লীগের একেকজন অভিভাবক থাকেন। তার নেতৃত্বে একটি প্রভাবশালী গ্রুপ স্থানীয় সরকারের এ প্রতিনিধিদের মনোনীত করে। এর বাইরে কারো টুঁ-শব্দ করার সুযোগ থাকে না। আর কিছু জায়গা রয়েছে যেখানে এ ধরনের আধিপত্যবাদী একক নেতার আবির্ভাব হয়নি। সেখানে দলের ভেতরের শক্তিশালী পক্ষগুলো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। রানীশংকৈল সম্ভবত এমন একটি জায়গা।
নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হলে প্রতিপক্ষের সমর্থকরা পুলিশের ওপর আক্রমণ করে। সাধারণত আমরা দেখে থাকি, প্রতিপক্ষ গ্রুপ একে অপরকে আক্রমণ করে থাকে। এখানে দেখা যাচ্ছে, তারা সরাসরি পুলিশকে আক্রমণ করেছে। এভাবে পুলিশ টার্গেট হওয়ার পেছনে কারণটা কী? তারা কি কোনো প্রার্থীর হয়ে ভোটে অনিয়ম করার সুযোগ করে দিয়েছে? ফলাফল ঘোষণার পর বিষয়টি পরিষ্কার হওয়ায় পুলিশের ওপর পরাজিত পক্ষ হামলা চালাল। নির্বাচনে জিতিয়ে দেয়ার জন্য পুলিশ টাকা নিয়েছে, এমন বহু খবর স্থানীয় নির্বাচনে পাওয়া গেছে। এমনকি নির্বাচনে জিতিয়ে দেয়ার জন্য টাকা নিয়ে কাজ করেনি এমন খবরও প্রকাশিত হতে দেখা গেছে। এ হামলার পেছনে এমন কারণ রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখবে কে?
পুলিশের পেশাদারিত্ব এখানে উল্লেখ করার মতো। পুলিশ আক্রান্ত হলেও তারা বেপরোয়া গুলি চালাতে পারে না। কেবল সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করেই তারা গুলি চালাতে পারে। আবার সব জায়গায় মানুষের বুকে তারা গুলি চালাতে পারে না। শিশুটি মায়ের কোলে ছিল। তাই তাদের বন্দুকের নল বুক বরাবরই ছিল। এর আগে আরেকটি ঘটনায় আমরা দেখেছি, দুর্বৃত্তদের ওপর আক্রমণ করতে গিয়ে তারা এক অন্তঃসত্ত্বাকে গুলি করে বসে। সেই গুলিতে এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে যায় পেটের সন্তানের দেহ।
বুধবার দেশে সাত পৌরসভা, দুই উপজেলা ও ৬৪ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হয়েছে। এগুলোর প্রায় প্রত্যেকটিতে স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ত নির্বাচনী পরিবেশ ছিল না। মানুষের মধ্যে ধারণা বদ্ধমূল হয়ে গেছে- ক্ষমতাসীনদের বাইরে অন্য কেউ জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হতে পারবে না। তাই খুব কম জায়গায় ক্ষমতাসীন দলের বাইরে অন্য কোনো দলের প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ধরনের কলুষিত নির্বাচন কেন নির্বাচন কমিশন আয়োজন করে যাচ্ছে, সেটিই বড় প্রশ্ন। আমরা মনে করি, নির্বাচনী ব্যবস্থাকে আগে সঠিক জায়গায় ফেরাতে হবে যেখানে একজন প্রার্থী স্বাধীনভাবে প্রতিযোগিতায় নামার সুযোগ পাবেন, ভোটাররা সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নিজেদের ভোট নিজেদের ইচ্ছায় ভয়ভীতিহীন প্রয়োগ করতে পারবেন। অন্য দিকে, সঠিকভাবে ভোট গণনা হবে, প্রকৃতপক্ষে যিনি জয়ী হয়েছেন তার নামই ঘোষণা করা হবে। পূর্ণ একটি সংস্কার ছাড়া ভঙ্গুর এ নির্বচান মূলত জানমালের ক্ষতি ছাড়া অন্য কিছু বাড়াবে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা