২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
স্বাস্থ্যে যন্ত্রপাতি কেনায় আগ্রহ

চিকিৎসাসেবায় নজর নেই

-

দেশের বিপুলসংখ্যক দরিদ্র মানুষ সরকারি স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে গিয়ে পদে পদে বঞ্চনা ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। সহযোগী এক দৈনিকে সরকারি হাসপাতালের যন্ত্রপাতি ক্রয় ও মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ নিয়ে বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, মানুষের সেবার কোনো লক্ষ্য নেই স্বাস্থ্য বিভাগের, সংশ্লিষ্টদের লক্ষ্য- কিভাবে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ কামানো যায়।
দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় সরকারি হাসপাতাল রয়েছে। সাধারণ রোগব্যাধির চিকিৎসায় এগুলোতে সব ধরনের চিকিৎসা অবকাঠামো রয়েছে। কিছু যন্ত্রপাতি যেগুলো বহুল ব্যবহৃত হয়; সেগুলো রয়েছে, এমনকি এমন সব যন্ত্রপাতিও রয়েছে যেগুলোর ব্যবহার অপেক্ষাকৃত কম। এ ছাড়া এমন সব যন্ত্রপাতিও কেনা হয়েছে যার ব্যবহার কার্যত দেশে নেই। তারপরও হাসপাতাল পরিচালনা কর্তৃপক্ষের সবচেয়ে বেশি নজর থাকে এক্স-রে মেশিন, প্যাথলজি পরীক্ষার যন্ত্রপাতি, আলট্রাসনোগ্রাফি, ল্যাপারোস্কপি, স্টেরিলাইজার, অটোক্লেভ, ডায়াথামিসহ আরো স্বল্প প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয়ের প্রতি। প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, হাসপাতালের অনেক যন্ত্রপাতি কেনার পর সেটি আর খুলেও দেখা হয়নি। বিভিন্ন হাসপাতালে এমন অব্যবহৃত বস্তাবন্দী চিকিৎসাসরঞ্জাম থাকার বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে আগেও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এসব ক্রয়ে কমিশন বাণিজ্য গুরুত্ব পেয়েছে। একটি চক্র রয়েছে এরা শুধু জিনিসপত্র কেনার সুযোগে থাকে। করোনার সময় সাহেদ নামে এক দুর্নীতিবাজকে আমরা দেখেছি। এ খাতে যদিও সাহেদদের অভাব নেই। অথচ সরকারি চিকিৎসেবায় মূল সমস্যাটি অন্য জায়গায়। প্রয়োজন হচ্ছে হাসপাতালে থাকা অবকাঠামোর যথাযথ ব্যবহার।
পর্যাপ্ত মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট সরকারি চিকিৎসার দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য সহযোগী হতে পারে। দেশের হাসপাতালে এ জন্য পদ রয়েছে সাত হাজার ৯২০টি। বাস্তবে এ কর্মে নিযুক্ত রয়েছেন পাঁচ হাজার জন। ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশনের (ডব্লিউএইচও) গাইডলাইন অনুযায়ী, একজন ডাক্তারের বিপরীতে পাঁচজন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট থাকতে হবে। খবর অনুযায়ী, সরকারি হাসপাতালে ৪০ হাজার চিকিৎসক কর্মরত। ডব্লিউএইচওর মান অনুযায়ী, বাংলাদেশে দুই লাখ মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট সরকারি হাসপাতালে কর্মে নিযুক্ত থাকার কথা। অথচ দেশে এখনো ২৫ হাজার মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট বেকার। করোনাকালে আট হাজার নার্স ও ছয় হাজার ডাক্তার নিয়োগ দেয়া হয়। এ সময় কোনো মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দেয়া হয়নি। যদিও সারা দেশে বিভিন্ন হাসপাতালে মেডিক্যাল সরঞ্জামাদি উপযুক্ত জনবলের অভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। রোগীরা চিকিৎসা নিতে এসে সরকারি হাসপাতালে এসব যন্ত্রপাতি দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর সুযোগ পাচ্ছেন না। এ অবস্থায় একটি চক্র সরকারি হাসপাতালে আসা রোগীদের পরীক্ষার জন্য পাঠাচ্ছে বেসরকারি চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানে। একটি শ্রেণী রয়েছে যারা এ কাজে দালালি করে। আবার ডাক্তাররাও এতে পান নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ। নানা জটিলতায় মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ বন্ধ রাখা আছে। সরকারের উচিত কৃত্রিম বাধা সরিয়ে তাদের নিয়োগের পথ উন্মুক্ত করা।
স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির ভুক্তভোগী দেশের মানুষ। করোনা মহামারীকালে এ খাতের দুর্নীতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। কেবল তখনই এ খাতের প্রতি সবার দৃষ্টি আকৃষ্ট হলো। তারপরও এর গোড়ার সমস্যা সমাধানে সরকার খুব একটা আগ্রহী হয়নি। তাই আমাদের স্বাস্থ্য খাত দুর্নীতিবাজদের জন্য অর্থ হাতিয়ে নেয়ার এখনো বড় ক্ষেত্র। এর মাশুল গুনছে প্রধানত দেশের দরিদ্র জনোগোষ্ঠী। তারা চিকিৎসাসেবা নিতে সরকারি হাসপাতালে এসে প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছেন না। এ কারণে ধনী ও অপেক্ষাকৃত সচ্ছল ব্যক্তিরা দেশের সরকারি স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেন না। তারা বেসরকারি হাসপাতালে যান, আর যাদের আর্থিক সঙ্গতি বেশি, তারা চিকিৎসা করাতে বিদেশে পাড়ি জমান। দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতারাও চিকিৎসার জন্য বিদেশকে প্রাধান্য দেন। একটি আত্মমর্যাদবান জাতির জন্য এটি মানানসই নয়। এ মানসিকতা পরিবর্তন করতে হলে স্বাস্থ্য খাতে আমূল সংস্কার দরকার। একেবারে শীর্ষ পর্যায় থেকে এ সংস্কার শুরু করতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement