২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
আবারো শিক্ষক লাঞ্ছনার সংবাদ

ঘটনা ধামাচাপা নয়

-

দেশে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও মারধরের ঘটনা অব্যাহতভাবে চলছে। সম্প্রতি এক শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার পর সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে তীব্র ক্ষোভ ব্যক্ত করা হয়। এরপর খুনিসহ সহযোগীদের গ্রেফতার করা হয়। ওই ঘটনায় সরকারের সক্রিয়তায় আশা করা হয়েছিল শিক্ষকদের আর কেউ মারধর ও লাঞ্ছনার সাহস দেখাবে না। কয়েক দিন না যেতেই খোদ এক সংসদ সদস্যই একজন অধ্যক্ষকে বেধড়ক পিটিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে সংসদ সদস্যের হাতে মার খাওয়ার অভিযোগ ওঠার পর গতকাল সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন নির্যাতত ওই অধ্যক্ষ। সংসদ সদস্যের পাশে বসে ওই সংবাদ সম্মেলনে অধ্যক্ষ দাবি করেন, অধ্যক্ষ ফোরামের সদস্যরা উত্তেজিত হয়ে নিজেরাই ধাক্কাধাক্কি করেন। সংসদ সদস্য তাদের নিবৃত্ত করেছেন। তাকে মারধর করেছেন, অধ্যক্ষের এমন বরাত দিয়ে একটি দৈনিকে যে খবর ছাপা হয়েছে তা তিনি বলেননি।
মজার বিষয় হলোÑ এমপির পক্ষ থেকে ওই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। অধ্যক্ষ সেলিম রেজার এমন বক্তব্য দেয়ার কথা শুনে বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি শফিকুর রহমান বলেছেন, সংসদ সদস্যের কাছে অধ্যক্ষ মার খেয়েছেন বলে তার কাছে স্বীকার করেছিলেন। পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর ভয়ে অধ্যক্ষ এখন ঘটনা অস্বীকার করছেন বলে তিনি মনে করেন।
রাজশাহীতে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনা স্বীকার-অস্বীকারের বিষয়টি বাদ দিলেও এ কথা বলা যায়, শিক্ষকদের সম্মান বাঁচানোর কার্যকর নীতি আগের মতোই উপেক্ষিত। তা না হলে যার বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর, তার ডাকা সংবাদ সম্মেলনে খোদ অধ্যক্ষ তার নির্যাতনের কথা অস্বীকার করাটাই প্রশ্নসাপেক্ষ। এতে মনে হওয়া স্বাভাবিক এমপির চাপে অধ্যক্ষ এ বক্তব্য দিতে বাধ্য হয়েছেন।
প্রকাশিত সংবাদের বর্ণনা মতে, রাজশাহীর গোদাগাড়ীর রাজবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে ১৫ মিনিট ধরে স্থানীয় এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী তার নিজের চেম্বারে পিটিয়েছেন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ উপস্থিত থাকলেও তারা কেউ সাহস করে নির্যাতিতকে উদ্ধারে এগিয়ে যাননি। সেলিম রেজাকে জাপটে ধরে প্রথমে চোখের নিচে সজোরে ঘুষি মারেন সংসদ সদস্য। পরে কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। অধ্যক্ষ একপর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়েন। কিন্তু সংসদ সদস্যের ক্ষোভ তখনো মেটেনি। চেম্বারে থাকা হকিস্টিক দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করেন। অধ্যক্ষকে উদ্ধারের পর অর্থোপেডিক্স বিশেষজ্ঞের চিকিৎসা দেয়া হয়।
প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংসদ সদস্য অভিযোগ আনেনÑ সেলিম রেজার কলেজের কয়েকজন শিক্ষক একজন অধ্যক্ষ ও দলীয় নেতার স্ত্রীকে নিয়ে অশ্লীল কথাবার্তা বলেছেন। এমপি জানতে চান, তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তখন সেলিম রেজা জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। প্রমাণ থাকলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন। এ পর্যায়ে মোবাইল অন করে প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু সেগুলো যাচাই-বাছাইয়ের ধৈর্য রাখতে পারেননি এমপি। উত্তেজনায় অধ্যক্ষ সেলিম রেজার ওপর চড়াও হন তিনি।
শিক্ষক অবমাননা-নির্যাতনসহ আরো বেশ কিছু ঘটনায় লক্ষণীয় বিষয় হলোÑ সমাজে এসব অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার প্রতিক্রিয়া পক্ষপাতদুষ্ট। সমাজের প্রভাবশালী একটি অংশ কিছু ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায়। ফলে ওইসব ঘটনার আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়। কিছু ঘটনায় একই ধরনের অপরাধ সঙ্ঘটিত হলেও সমাজের উল্লিখিত অংশ সেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় না। যেমন সেলিম রেজার বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের পর কার্যকর প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। বরং এ ঘটনা ধামাচাপার অপচেষ্টা চলছে বলে মনে হয়। যার প্রমাণ সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীর এখন বিপরীত কথা বলা। এটা যে চাপের মুখে হয়নি, কিভাবে প্রমাণ করবেন অভিযোগের তীরে বিদ্ধ সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্য। সংশয়ের কারণ, এমপির ডাকা সংবাদ সম্মেলন এবং উপস্থিতিতে নিগ্রহের কথা অস্বীকার করেছেন ভুক্তভোগী ।
আমরা মনে করি, শিক্ষক নির্যাতনের ঘটনায় পক্ষপাতদুষ্ট আচরণে ভবিষ্যতেও এমন নিন্দনীয় ঘটনার অবতারণা হবে। হয়তো কিছু ঘটনার বিচার হবে; বাদবাকি ক্ষেত্রে চুপ থাকার নীতি অবলম্বন করা হবে। তাই প্রতিটি শিক্ষক নির্যাতনের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়াই হচ্ছে শিক্ষাঙ্গনে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার উপযুক্ত পন্থা। এ জন্য গোদাগাড়ীতে যে ঘটনার জন্ম হয়েছে তার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করতে হবে। এতে যদি সংসদ সদস্য নির্দোষ প্রমাণিত হন, তার ভাবমর্যাদা বাড়বে বৈ কমবে না। আর দোষ করে থাকলে আইনানুগ সমাধানই কাম্য।


আরো সংবাদ



premium cement