২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
প্লাস্টিক বর্জ্য গুরুতর হুমকি

মিনিপ্যাকও বিপজ্জনক

-

প্লাস্টিকজাতীয় বর্জ্য সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও পরিবেশের জন্য গুরুতর হুমকি। সে হুমকি মোকাবেলার সক্ষমতা অনেক উন্নয়নশীল দেশের মতো আমাদেরও নেই। যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে দিন দিনই পরিবেশের অবনতি ঘটছে ও জনস্বাস্থ্য মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়ছে।
ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সাথে পাল্লা দিয়ে দিন দিন বেড়ে চলছে শত শত টন বর্জ্য, যা এ সমস্যাকে আরো প্রকট করে তুলছে। ফলে বায়ুদূষণ ও পানিদূষণের মতো সমস্যাগুলোর সৃষ্টি হচ্ছে; সৃষ্টি করছে মারাত্মক সব রোগের। যথাযথভাবে বর্জ্য সংগ্রহ করতে না পারা, সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকা ও তা পুনঃব্যবহারযোগ্য করতে না পারায় এসব বর্জ্য দূষিত হয়ে সমস্যার সৃষ্টি করছে।
এখন জানা যাচ্ছে, ওয়ানটাইম ইউজের যেসব ছোট ছোট মোড়ক বা মিনিপ্যাকে করে বিভিন্ন ধরনের পণ্য বাজারজাত করা হয়; সেগুলোও পরিবেশ বিপর্যয় সৃষ্টিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে।
পরিবেশবিষয়ক একটি সংগঠনের গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে প্রতি বছর প্রায় দুই লাখ টন মিনিপ্যাক-বর্জ্য উৎপাদিত হয়। প্রতিদিন আমরা প্লাস্টিকের তৈরি প্রায় ১৩ কোটি মিনিপ্যাক ব্যবহার করি। গবেষণায় দেখা যায়, মোট ব্যবহৃত মিনিপ্যাকের ৪০ শতাংশ বিস্কুট, চিপস, টমেটো সস, জুস, গুঁড়ো দুধ, কফি প্রভৃতির মতো খাবারের, ৮ শতাংশ ওষুধের ও ২৪ শতাংশ প্রসাধনীর। সবচেয়ে বেশি মিনিপ্যাক ব্যবহার করা হয় প্রসাধনীর। শুধু শ্যাম্পু-কন্ডিশনারেই ব্যবহার হয়েছে ৬৯ শতাংশ।
গত শনিবার ওই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশন-এসডোর সভাপতি সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ বলেন, প্লাস্টিকের মিনিপ্যাকেট আকারে ছোট হলেও পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক। পরিবেশে এর প্রভাব বিশাল। তিনি একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্য বিশেষ করে মিনিপ্যাক ব্যবহারে কঠোরভাবে বিধিনিষেধ কার্যকর করার অনুরোধ জানান।
এ ক্ষেত্রে কানাডার ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটির এক গবেষণার তথ্য উল্লেøখ করার মতো। তাতে দেখা গেছে, আমরা যেসব একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের চায়ের প্যাকেট ব্যবহার করি সেগুলোর প্রতিটি থেকে আমাদের মগে প্রায় ১১ দশমিক ৬ বিলিয়ন মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা ও ৩ দশমিক এক বিলিয়ন ন্যানো প্লাস্টিক নির্গত হয়। এগুলো জনস্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
কিন্তু এই মিনিপ্যাক বন্ধ করে দেয়ার উপায় নেই। এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। এখানেও ব্যবস্থাপনার প্রসঙ্গই প্রধান। আমাদের শুধু রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনেই প্রতিদিন বাসাবাড়ির ময়লাসহ অন্তত ছয় হাজার টন বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য উৎপন্ন হয়। বর্জ্যরে পরিমাণ দিন দিনই বাড়ছে। কিন্তু সেগুলোর ব্যবস্থাপনা খুবই দুর্বল। প্রতিদিনের বর্জ্য অপসারণেই হিমশিম খায় দুই সিটি করপোরেশন। কিন্তু অনেক পথে চলতে গিয়ে এখনো মানুষকে নাকে রুমাল চাপতে হয়। নগরীতে এমন অনেক কাঁচাবাজার আছে বৃষ্টি হলে যেগুলোতে ঢোকা অসম্ভব হয়ে পড়ে। নোংরা, আবর্জনাময় এসব বাজারে মহাবিড়ম্বনা সহ্য করেই নগরবাসীকে কেনাকাটা করতে হয়।
এই মহানগরীতে কোনোরকম আধুনিক, টেকসই ও উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এখনো সেভাবে গড়ে ওঠেনি। যদিও খবর নিলে দেখা যাবে, উভয় সিটি করপোরেশনের হাতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত প্রকল্পের অন্ত নেই। জানা যাবে, সংস্থা দু’টি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে এসব চেষ্টার কোনো ফল খোলা চোখে দেয়া যায় না।
স্বাভাবিকভাবেই বর্জ্য অপসারণে অব্যবস্থাপনা নিয়ে নগরবাসীর আছে নানা অভিযোগ। সবারই দাবি, একটি আধুনিক ও বসবাসযোগ্য নগরীর উপযোগী করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হোক। তবে মিনিপ্যাক কেবল ঢাকার সমস্যা নয়, এটি গোটা দেশেরই সমস্যা। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে দ্রুত তৎপর হতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement