সমন্বিত ত্রাণকার্যক্রমের অভাব
- ২৪ জুন ২০২২, ০০:০০
সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যাপীড়িত এলাকায় খাবার-বিশুদ্ধ পানির জন্য দুর্গতদের মধ্যে হাহাকার চলছে। বন্যার্তদের জন্য ত্রাণসামগ্রীর অপ্রতুলতার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিয়েছে ত্রাণকাজে সমন্বয়হীনতা।
বাংলাদেশ দুর্যোগকবলিত দেশ হিসেবে বিশ্বে পরিচিত। তাই প্রতি বছরই মনুষ্যসৃষ্টসহ বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হয় এ দেশে। স্বাভাবিকভাবে দুর্যোগ মোকাবেলার আলাদা সামর্থ্য রয়েছে আমাদের। এ জন্য ত্রাণ ও দুর্যোগ মোকোবেলায় আলাদা মন্ত্রণালয়ও রয়েছে। এর ওপর আমাদের বাহিনীগুলোর এ নিয়ে আছে বিশেষ প্রশিক্ষণ। তবে বাস্তবতা হলো- বন্যাকবলিত সিলেট ও সুনামগঞ্জে সেই সক্ষমতার প্রতিফলন অনুপস্থিত। খবরে প্রকাশ, দুর্গত অনেক এলাকায় মানুষজন বিপন্ন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।
এবারের বন্যায় মানুষ আকস্মিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। যদিও বন্যার পূর্বাভাস ছিল। তবু সরকার কোনো ধরনের প্রস্তুতি কিংবা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়নি। বড় ধরনের একটি বন্যা হতে পারে- এমন পূর্বাভাসের পরও সরকারের এ উদাসীনতা গ্রহণযোগ্য নয়। পূর্বাভাসের সময় থেকে সরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের পূর্বপ্রস্তুতি জানমালের ক্ষতি হয়তো কিছুটা কমাতে পারত। বন্যায় গতকাল পর্যন্ত ৪০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন বলে খবরে প্রকাশ। এখনো বিভিন্ন এলাকায় পানি কমার লক্ষণ নেই। বিপরীতে সরকারের প্রস্তুতি সেভাবে এগোচ্ছে না। এমনকি পীড়িত মানুষের জন্য সরকারি বরাদ্দ এখনো অপর্যাপ্ত। গতকালের খবর হলো- চার জেলার বন্যাপীড়িত মানুষের জন্য সরকার তিন কোটি ৩১ লাখ টাকা, তিন হাজার ২০ টন চাল ও ৫৬ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার দিয়েছে। বেসরকারি সংস্থা, রাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে নানাভাবে পীড়তদের প্রতি যেভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে তার আকার আরো বড় বলেই মনে হয়।
প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে খবর আসছে; ত্রাণের অপ্রতুলতার পাশাপাশি বণ্টনের সমন্বয়হীনতার কথা। যতটুকু ত্রাণ সরকারি-বেসরকারি পর্যায় থেকে আসছে তা ঠিকভাবে বণ্টন হলে মানুষের কষ্ট অনেকটাই লাঘব হতে পারত। এখন পর্যন্ত শহর ও এর আশপাশের এবং অপেক্ষাকৃত নিরাপদ এলাকায় ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে। এসব এলাকায় যোগাযোগব্যবস্থা তুলনামূলক ভালো থাকায় সহজে ত্রাণকর্মীরা পৌঁছাতে পারছেন। মূলত বেশি ক্ষতির শিকার এলাকাগুলো দুর্গম হওয়ায় সেখানে মানুষ খাদ্য-পানীয় এবং আবাসন সঙ্কটে রয়েছেন। ঘরবাড়ি ছেড়ে আসায় অসংখ্য পরিবার নিদারুণ দুর্ভোগে রয়েছে। তাদের কাছে জরুরি ভিত্তিতে সাহায্য পৌঁছানো দরকার। প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্থানীয় জনপ্রতিনিধি অনেকেই জানাচ্ছেন, চাহিদার তুলনায় ত্রাণ একেবারেই অপ্রতুল। ফলে কাকে রেখে কাকে দেবেন তা নিয়ে সমস্যায় পড়ছেন তারা। সবচেয়ে বেশি দুর্গত এলাকায় অনেকে প্রতিবেশীর বাড়িতে আশ্রয় পেয়ে প্রাণ বাঁচাতে পারলেও তাদের খাবার জুটছে না। আয়রোজগার করবেন সে পথও বন্ধ।
আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেয়া মানুষরাও রয়েছেন নানাবিধ ভোগান্তিতে। তাদের জন্য পর্যাপ্ত পানীয় ও শৌচাগার নেই। এ পরিস্থিতিতে নারীরা পড়েছেন বিব্রতকর অবস্থায়। এ ছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রগুলো দীর্ঘ দিন ধরে পরিত্যক্ত পড়ে থাকায় হঠাৎ শত শত মানুষ আশ্রয় নেয়ায় তাতে দিন গুজরান কষ্টকর হচ্ছে দুর্গতদের। অথচ সময়মতো রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম চালালে বন্যায় আশ্রয় নেয়া মানুষজন এখানে একটু স্বস্তি পেতেন।
বাংলাদেশের উপকূলে প্রতি বছর ঝড়-জলোচ্ছ্বাস হয়। সারা দেশে ঘুরেফিরে বন্যাও হয়। এর পরও কিন্তু পীড়িত এলাকায় অভিজ্ঞতার আলোকে ত্রাণকার্যক্রম পরিচালনা করতে দেখা যাচ্ছে না। চলমান বন্যায় একটি প্রশিক্ষিত বাহিনী ত্রাণ তৎপরতা চালালে প্রত্যন্ত এলাকায় এমন সমন্বয়হীনতা হওয়ার কথা ছিল না। এমনকি সিলেটে ত্রাণকাজে সমন্বয়হীনতার খবর কয়েক দিন ধরে এলেও প্রতিকারে এখনো জোরালো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বন্যার ভয়াবহতা থেকে বোঝা যাচ্ছে, বন্যাদুর্গতদের মধ্যে বেশ কিছু দিন ত্রাণ তৎপরতা চালাতে হবে। তাই ত্রাণকাজে নিয়োজিত সরকারি-বেসরকারি কর্মীদের মধ্যে সমন্বয় থাকা অতীব জরুরি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা